চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রক্তাক্ত অধ্যায়ের পূর্বাপর

বাংলাদেশের ইতিহাসে আরো একটি রক্তাক্ত অধ্যায় রচিত হয়েছিলো ১৯৮১ সালেরর ৩০ মে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে হত্যা করা হয় এদিন।

চৌত্রিশ বছর পরও অনেকের প্রশ্ন: রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমোন ছিলো তখন? সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, ‘তখনকার সময়ে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বর্তমান সময়ের তুলনায় এক-দশমাংশও ছিলো না।’

কর্নেল অলি তখন চট্টগ্রাম-১৩ আসনের এমপি ছিলেন। পরে খালেদা জিয়ার সরকারে দু’ দফা মন্ত্রী ছিলেন তিনি। কিন্তু আপাত: চোখে জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের নেতৃত্ব মানতে না পেরে তিনি বিএনপি থেকে বের হয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠন করেন। তবে এখন এলডিপি বেগম খালেদা জিয়ার ১৯ দলীয় জোটের শরিক একটি দল।

১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলো প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স। জিয়া নিজেই ১৯৭৬ সালে এই বাহিনী গঠন করেন। পরে প্রেসিডেন্ট হয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালে বাহিনীটি পুনর্গঠন করে নাম দেন প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর)।

এছাড়াও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই) প্রেসিডেন্ট জিয়ার নিরাপত্তা গোয়েন্দা কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিলো। এনএসআই থেকে প্রেসিডেন্টের জীবন ঝুঁকির মুখে বলা হলেও ডিজিএফআই’র ওই সময়ের প্রধান মেজর জেনারেল মহব্বত জান চৌধুরীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের। তিনি পরে এরশাদের মন্ত্রীও হয়েছিলেন।

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জিয়া হত্যাকাণ্ডের সময় প্রেসিডেন্ট গার্ডের দু’জন সদস্য নিহত হন বলে জানান অলি আহমদ। তবে পুলিশের কেউ মারা গিয়েছিলো কি না তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেন নি।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেদিন চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মহানগরে বিএনপির কমিটি নিয়ে জটিলতা নিরসনের জন্য। অলি আহমদ বলেন, আমি মহানগর বিএনপি কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। তাই বঙ্গভবন থেকে চট্টগ্রাম না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিলো।

‘শুধু ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছাড়া চট্টগ্রামের অন্য কোনো সংসদ সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন কিনা আমার জানা নেই। ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নির্বাচনী এলাকার একটি অংশ চট্টগ্রাম মহানগরের সাথে অন্তর্ভুক্ত ছিলো,’ বলে জানান ড. অলি।

অলি আহমদ বলেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের দু’দিন আগে সেনাপ্রধান এরশাদ হেলিকপ্টার নিয়ে চট্টগ্রামে সেনানিবাসে যান এবং লে. কর্নেল মতিউর রহমানের সঙ্গে একান্তে গোপন বৈঠক করেন। মূলত‍ঃ জিয়াউর রহমানকে হত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই মতিউর।

মতিউর রহমান এরশাদের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, তিনি একনাগাড়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন যা সামরিক বাহিনীর নিয়ম বহির্ভূত।

এরশাদ অবশ্য এরকম সকল অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

প্রেসিডেন্টকে হত্যার দায়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের জিওসি মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর, বীর উত্তমকে সেনা হেফাজতে হত্যা করা হয়েছিলো। এ ব্যপারে অলি আহমদ বলেন, ‘আমার জানা মতে মঞ্জুর সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তার অমতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিলো বলে তখন আমি তথ্য পেয়েছিলাম।’

জিয়া হত্যার সঙ্গে তা হলে কারা জড়িত ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অলি আহমদ মেজর হোসাইন, মেজর খালেদ, দেলোয়ার এবং মোজাফফর আহমেদ ছাড়াও ওই সময়ের চট্টগ্রামের শীর্ষ এক সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীর নাম উল্লেখ করে বলেন, তারাই মূল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।

জিয়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মঞ্জুর সরাসরি জড়িত ছিলেন না জানালেও কর্নেল অলি বলেন, ‘বিভিন্ন সূত্র থেকে আমি জেনেছি এই কয়জন অফিসার মেজর জেনারেল মঞ্জুরের বাসায় আসা যাওয়া করতেন এবং তাস খেলতেন। ওই রাতেও লে. কর্নেল মাহবুব, লে. কর্নেল দেলোয়ার, মঞ্জুর ও তার স্ত্রী জিওসির বাসায় বসে তাস খেলছিলেন। ওই জায়গা থেকেই তারা উঠে যান।’

সেদিনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে অলি আহমদ বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের সিকিউরিটি অফিসার লে. কর্নেল আসাদ গোলাগুলির শব্দ পেয়ে রুম থেকে বের হওয়ার সময় খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করা হয়। তার সাথে ওই রুমে ছিলেন প্রেসিডেন্টের ডাক্তার লে. কর্নেল মাহতাব উদ্দিন। তার (মাহতাবের) কাছ থেকে এই তথ্য আমি পেয়েছিলাম।’

৩০ মে’র  অভ্যুথানের আগে জিয়ার বিরুদ্ধে ছোট বড় আরও ১৯টি ব্যর্থ অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিলো। সেগুলো সফলভাবে দমন করতে সক্ষম হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এ বিষয়ে অলি আহমদ বলেন, ‘এর আগে সংঘটিত প্রত্যেকটি অভ্যুত্থানের সময় শহীদ জিয়ার সঙ্গে ছিলাম। সফলভাবে আমরা তা দমন করেছি।’

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশি এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের শিকার হয়ে শহীদ হন বলে দাবি করেন অলি আহমদ।