দেশের বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসায় গিয়ে সরকারী নানা প্রকল্পের কাজের কথা বলত হেলালউদ্দিন। সহজ সরল মানুষদের ওই খাতে বিনিয়োগে উৎসাহী করত এবং ভুয়া ৫৪ হাজার কোটি টাকা থেকে শতকরা এক থেকে দুই ভাগ লভাংশ দিবে যা কিনা টাকার অঙ্কে পাঁচশ কোটির ওপরে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষর জাল করে সহজ সরল মানুষের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল হেলালউদ্দিন। তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জাল করত।
গত মঙ্গলবার দুপুরে মালিবাগের সিআইডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (সিরিয়াস এন্ড হোমিসাইডাল স্কোয়াড) সৈয়দা জান্নাত আরা বলেন, গত বছরের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লোগো যুক্ত চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাল স্বাক্ষর দিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হেলালউদ্দিনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ করার পরিকল্পনায় রাজধানীর পল্লবী থানায় একটি মামলা ( নং-৫৪) করা হয়।
জানতে চাইলে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি’র (হোমিসাইডাল স্কোয়াড) উপ-পরিদর্শক নিউটন কুমার দত্ত চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: হেলালউদ্দিন সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়নের কথা মসজিদ মাদ্রসায় গিয়ে সাধারণ সহজ সরল মানুষকে জানাত, প্রয়োজন মাফিক তিনি প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর সহকার্যালযের প্যাডে ওই প্রকল্পের কাজের আদেশ নামা দেখাত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫৪ হাজার কোটির টাকার যাচাইকপি দেখাত। যাতে মানুষ সহজেই হেলালকে বিশ্বাস করত।
সে সরকারের বড় বড় প্রকল্প যেমন বিদ্যুৎ, পর্যটন খাত, ঔষুধ উৎপাদন, দারিদ্র বিমোচনে গবাদিপশু হাঁস-মুরগী ও মৎস্য পালন, সজিদ মাদ্রাসা এতিমখানায় ইসলামিক বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, প্রতিবন্ধী সেবা মূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন কথা বলত।
হেলাল সহজ সরল মানুষকে প্রলুব্ধ করতে এসব খাতে বিনিয়োগে উৎসাহী করত, অমুকে ৫ লাখ দিয়েছে, আপনারাও কিছু দেন, কিংবা ৫৪ হাজার কোটি টাকা থেকে শতকরা এক থেকে দুই ভাগ লভ্যাংশ দিব যা কিনা টাকার অঙ্কে পাঁচশ কোটির ওপরে। এতে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করত এবং টাকা বিনিয়োগ করত।
তিনি বলেন, হেলালউদ্দিন পুরো ঠকবাজ প্রকৃতির একজন। মানুষকে খুব সহজেই বিভ্রান্ত করে ফেলতে পারে হেলাল। তিনি ব্যক্তি জীবনে দু’টি বিয়ে করছে । হেলালউদ্দিন মংলা বন্দরে টাইপিস্টের কাজ করত। ২০০৫ সালে দুদকের একটি মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন। জেল থেকে বের হয়ে তিনি এই প্রতারণার পেশায় জড়ায়।
ফরিদুজ্জামান সেলিম নামে এক ব্যক্তির বাংলাদেশ ব্যাংকে একাউন্ট আছে, ওই একাউন্টে ফ্রান্সের এল. সি.এল ব্যাংক হতে সেলিম ৫৪ হাজার কোটি টাকা পাঠায়। যা কিনা পুরোটাই ভুয়া। হেলালউদ্দিন জনমনে বিশ্বাস স্থাপন করে সেলিমের ৫৪ হাজার কোটি টাকা প্রলোভন দেখিয়ে ৪২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে।
হেলালউদ্দিনের সঙ্গে ফরিদুজ্জামান সেলিমের সম্পর্ক কি? জানতে চাইলে সিআইডি’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: হেলালউদ্দিনের সঙ্গে গ্রেপ্তার মো. এনামুল হক দুইবার ভুয়া ফরিদুজ্জামান সেলিম সেজে মানুষের সঙ্গে দেখা করছে এবং আশ্বস্ত করেছে। হেলালউদ্দিনের সঙ্গে এখনো সেলিমের সাক্ষাৎ হয় নি, কিন্তু সেলিমের কাগজপত্রগুলো নিয়ে হেলাল কিভাবে প্রতরণা করে সেটা খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছি।
তবে এখনো আসল ফরিদুজ্জামান সেলিমের নামে এখনো আমরা এমন প্রতারণার খোঁজ পাই নি কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অফিসের দাপ্তরিক কাগজ, বাংলাদেশ ব্যাংকের চালান কপি এগুলো সে কেন করল সেটা আমরা জানব, সে কি দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এমনটা করল নাকি সেটাও জানা দরকার। এগুলো সবই তদন্তের ব্যাপার। তাকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য বের হয়ে আসবে।
তিনি বলেন, ফরিদুজ্জামান সেলিমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। খুব দ্রুতই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।