চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

যা কিছু বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির পথে

“বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর’’…. (বাংলার মুখ, জীবনানন্দ দাশ)

যুগে যুগে কালে কালে বাংলার রূপ যেমন মুগ্ধ করেছে কবি, সাহিত্যিক, পরিব্রাজক, লেখক গবেষকদেরকে, তেমনি ৩৬০ আউলিয়ার দেশ, শাহজালাল , লালন ফকির ,বঙ্গবন্ধুর দেশ হিসেবে পেয়েছে বিশেষ খ্যাতি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ বাংলাদেশের বিরাট গৌরবের অংশ। মাত্র চার দশকের ব্যবধানে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিশ্বের কাছে হয়ে উঠেছে উদাহরণ। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে “উন্নয়নের রোল মডেল” হিসেবে স্বীকৃত। এককালের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ ২০৩৫ সালে হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। ( বিবিসি বাংলা, ২১ মার্চ ২০২১)। কিন্ত, বিশ্বশান্তি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আশাব্যঞ্জক নয়। নিরাপত্তা, সুরক্ষা, সামরিকীকরণ এবং চলমান সংঘাতের মতো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস’ থেকে প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক শান্তি সূচক-২০২১, এ বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের ১৬৩টি দেশের মধ্যে ৯১তম, বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে ২ দশমিক শূন্য ৬৮।
বাংলাদেশ সরকারের নেয়া নানবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যহত থাকলেও একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে এসেও বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে দুর্নীতি; দরিদ্রতা; জলবায়ু পরিবর্তন; নদীদখল-দুষণ ও তিস্তাসহ নদীর পানির হিস্যার সমস্যা; উগ্রধর্মীয়বাদ; রোহিঙ্গা সমস্যা; বেকারত্ব, ওরা সাত অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। যতই দিন যাচ্ছে ততই সমস্যাগুলো প্রকট হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং কবে নাগাদ এই সমস্যাগুলোর উত্তরণ মিলবে, সেই উত্তরও বোধহয় জানা নেই কারও।

দুর্নীতি:

বতুতার সফরনামার ১৩ অধ্যায়ে ‘বঙ্গালহ’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে বাংলাকে বতুতা বর্ণনা করেছেন, “সম্পদপূর্ণ নরক!” হিসেবে। তার ব্যাখ্যায় লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ লিখেছেন, “তিনি এই দেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে ‘ভালো নয়’ বলেননি, তিনি দেশের মানুষের কথা বলেছেন। দেশ একটি জড়বস্তু, তার ভালো-মন্দ কী! দেশের সুনাম-দুর্নাম সবই নির্ভর করে দেশটির মানুষের আচার-আচরণ-আখলাকের ওপর”। (সহজিয়া কড়চা, ২৪ মে ২০১৬)। খুব সাবলীলভাবে তিনি চরিত্রায়ন করেছে বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ করে দুর্নীতিবাজ আচার-আচরণ-আখলাকের বিষয়কে। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার এক নম্বরে ছিল বাংলাদেশ।

“দুর্নীতির কারণে প্রতিবছর কমপক্ষে ১৮ হাজার কোটি টাকা মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যোগ হতে পারছে না। এই হিসাব অবশ্য রক্ষণশীলভাবে করা। জিডিপির চলতি মূল্যকে ভিত্তি ধরে হিসাব করলে বছরে অঙ্কটা দাঁড়াবে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ( প্রথম আলো, ২০ জানুয়ারি ২০১৭)”।

বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক’এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২০ সালে ১৮০টি দেশের মধ্যে তালিকার নীচের দিক থেকে ১২তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। নানা সময়ে উঠে এসেছে বালিশ কাণ্ড, মালেক ড্রাইভার, বেগম পাড়া, সুইচ ব্যাংকে জমানো অবৈধ অর্থ, ঋণ খেলাপিসহ বিভিন্ন আলোচিত বিষয়াদি। সরকারী আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়িসহ অনেক পেশার লোকজনের দুর্নীতির ফাইলের বিষয়টি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই করোনার সময়ে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থায় যখন বিরূপ প্রতিক্রিয়া, তখনও মিডিয়ার ভেসে এসেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বিষয়টি। বাংলাদেশের অনেক সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়ার, উঠেছে ঘুষের অভিযোগ।

গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এক সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, হারাম কিছু খেলে নামাজ হবে না, ঘুস খেলে নামাজ হবে না। প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়ান সারা দিন কী করলেন।– আমাদের ধর্মে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, হারাম খেলে নামাজ হবে না। শুধু তাই নয়, হারাম টাকায় কেনা কোনো পোশাক যদি অন্য পোশাক স্পর্শ করে তবে নাপাক হয়ে যাবে। প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়ান সারা দিন কী কাজ করলেন। নিজেকে প্রশ্ন করুন (দৈনিক ইত্তেফাক, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১)।

প্রতিদিন কোন না কোন পত্রিকার পাতায়, মিডিয়ায় স্ক্রলে বা অনলাইন মাধ্যমের ডিজিটাল স্ক্রিনে ভেসে আসে দুর্নীতিবাজদের চেহারা বা তাদের কর্মকাণ্ড। এটা বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে চরম অন্তরায়। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে হানা দিতে পারে চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়।

দরিদ্রতা:

দরিদ্রতা বাংলাদেশের জন্য একটা চরম অভিশাপ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান ২০১৯ অনুযায়ী, “বাংলাদেশের দারিদ্র্য হার ২০১৯ : দারিদ্র্য হার ২০.৫ এবং হতদারিদ্র্য হার ১০.৫”। করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি দরিদ্রতাকে মোকাবিলা করা বাংলাদেশের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জে হয়ে দাঁড়িয়েছে। “ নিম্নআয়ের মানুষের উপর করোনা ভাইরাসের প্রভাব কতটা পড়েছে তা জানতে দুই হাজার ৬৭৫ জনের উপর একটি জরিপ চালিয়েছে ব্র্যাক৷ করোনার প্রকোপ শুরুর আগে জরিপে অংশ নেয়াদের গড় পারিবারিক আয় ছিল ১৪ হাজার ৫৯৯ টাকা৷ মার্চে তা নেমে এসেছে তিন হাজার ৭৪২ টাকায়৷ অর্থাৎ, তাদের গড় আয় ৭৫ ভাগ কমে গেছে৷ আয়ের ভিত্তিতে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৯ ভাগই চরম বা হতদরিদ্র্যের স্তরে নেমে গেছেন৷ এ কারণে আগের তুলনায় চরম দারিদ্র্যের সংখ্যা ৬০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে৷” (ডি ডব্লিউ, ১০ এপ্রিল ২০২০)।

গত ২৩ জানুয়ারী ২০২১ সালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর জরিপের ফল অনুযায়ী “করোনা মহামারির সময় দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। করোনার প্রভাবে দেশে দারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্যও বেড়েছে।“ (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৪ জানুয়ারি ২০২১)। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে , দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হতদরিদ্র এবং নগরে থাকা দরিদ্র্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না। হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বিস্তৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুঃস্থ মহিলা ভাতা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি বা দায়িত্বরত ব্যক্তিবর্গের দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে ভেস্তে যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত লক্ষমাত্রা, যা খুবই দুঃখের বিষয়। দরিদ্রতাকে মোকাবিলা করা এখন বাংলাদেশের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ।

জলবায়ু পরিবর্তন:

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে কয়টি দেশ সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, সেই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। ২০১৯ সালের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে সংস্থাটির পরিবেশ পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) প্রতিবেদন এবং ২০১৯ সালের প্রকাশিত ‘প্রসিডিংস অব দি ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’ নামের জার্নালের প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছে, সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বাড়ার কারণে বাংলাদেশের এক বড় অংশ ভূমি সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে”।

এই প্রতিবেদনগুলোর বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায় বাংলাদেশে নানা সময়ের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা থেকে। ২০০৭ সালে ‘সিডর’, ২০১৯ সালে ২৫ মে ‘আইলা’ উপকূল এলাকায় আঘাত হানে । ২০২১ সালের মে মাসে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানা ইয়াসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলবর্তী অনেক এলাকা। অনেক এলাকায় সারা বছর মানুষ পানি বন্ধ অবস্থায় থাকছে। নিজেদের আবাসন ছেড়ে অনেকেই ‘ শেল্টার হাউজ’ , রাস্তার পাশে উঁচু জায়গায় বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, স্যানিটেশন, নিরাপদ পানির উৎসসহ জীবনমান। এইভাবে যদি চলমান থাকে তাহলে উপকূলের অনেক এলাকা বিলীন হয়ে যেতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি নদীভাঙ্গনও বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠেছে চরম উদ্বেগের বিষয়। ২০২০ সালে গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস ( সিইজিআইএস), ‘এ বছর নদীভাঙনে ২ হাজার ৩৬৫ হেক্টর এলাকা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে ১৬টি এলাকার প্রায় ২৩ হাজার মানুষ গৃহহীন হবে।’ নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে প্রতি বছর পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রের পাড়ের হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়, উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে অসংখ্য মানুষ।

বন্যা মানুষের জীবনে নিয়ে আসে চরম দুর্ভোগ। বন্যার ফলে নদী, খাল, বিল, হাওর ও নিচু এলাকা ছড়িয়ে সমস্ত জনপদ পানিতে ভেসে যায়। ভেঙ্গে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা, দূষণের কবলে পড়ে পানির উৎস, বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, ফসল, ঘরবাড়ি, সম্পত্তির মারাত্মক ক্ষতি হয়, স্যানিটেশন বাবস্থায় নেমে আসে দুর্দশা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। অনেক মানুষ মারা যায়। মারা যাওয়ার পর কবর বা অন্যান্য ধর্মীয় রীতি মেনে শেষ যাত্রা পালন করাও কঠিন হয়ে পড়ে। করোনার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সারা দেশে এবছর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সশরীরে পাঠদান শুরুর ঘোষণা দেয় সরকার। তবে বন্যার কারণে অনেক এলাকায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে স্কুল খোলা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চরম ভাবে বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।

নদীর দূষণ- দখল ও তিস্তাসহ নদীর পানির হিস্যার সমস্যা:

বাংলাদেশের আনাচে কানাচে নদীর উপস্থিতি। তবে সেই নদীকে ঘিরে একদল মানুষ হয়ে উঠেছে রাক্ষসের মত। নদীকে গ্রাস করে গড়ে তুলছে আবাসন, দোকান পাঠ, বিভিন্ন অবকাঠামো। এসবের ফলে নদী হারাচ্ছে তার রূপ গতিপথ। শহর কেন্দ্রিক নদীগুলো হয়ে উঠছে এক একটা বজ্যের ভাগাড়। প্রতিদিন কোন না কোন নদী শোষণের চিত্র ভেসে আসে গণমাধ্যমে। ঢাকার প্রান ভোমরা হিসেবে সমাধিক পরিচিত বুড়িগঙ্গা। এই প্রানভোমরা তিলে তিলে পতিত হচ্ছে চরম দূষণ ও অবৈধ দখলের কবলে।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গা নদী দূষণের জন্য দায়ী মূলত শিল্পবর্জ্য। নদীতে পড়া বর্জ্যরে ৬০ শতাংশ বর্জ্যই শিল্প খাতের। ৪০ শতাংশ ট্যানারি শিল্পের। ২০ শতাংশ অন্য শিল্পের। এর এর বাইরে ১৫ শতাংশ কঠিন বর্জ্য, ১৫ শতাংশ অন্য ও ১০ শতাংশ নৌযান বর্জ্য। ( যুগান্তর, ০১ মার্চ ২০১৭)।

এই দূষণ যেমন পানিতে হচ্ছে, তেমনি তা আশেপাশের মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব। বুড়িগঙ্গায় অবৈধ দখলদারিত্বের উদাহরণ এত পাওয়া যায় যে, এটাকে একটা বুড়িগঙ্গার জন্য ব্যাধি বললেও ভুল হবে না।

তুরাগ, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র নদীর অবস্থাও বুড়িগঙ্গার মতই। করুন পরিনতির পথে হাঁটছে ধলেশ্বরীর নদী। মেঘনার অনেক এলাকা, বরগুনার প্রাণ খাকদোন নদী ,বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের করতোয়া নদী, দখল-দূষণে অস্তিত্বসংকটে পড়ে গেছে। মাইকেল মধুসুধন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদ দখলদারদের ধাবায় হারাতে বসেছে। নদীকে দখল করে হচ্ছে মাছের ঘের, বিভিন্ন স্থাপনা, বাড়িঘরের মত দখলের স্থাপনা। যে কপোতাক্ষ নদীকে মাইকেল নিয়েছেন অনন্যমাত্রায়, এভাবে চলতে থাকলে কপোতাক্ষ নদের কাহিনী হবে রূপকথার গল্পের মত। বাংলাদেশের নদীগুলোকে ঘিরে আবর্তিত হয় চাষাবাদ, মাছের চারন ভূমি, যোগাযোগ, ভূমিকে জলাবদ্ধতা থেকে দূরে রাখার স্থান, তাছাড়াও অনেক মানুষের জীবন ও জীবিকার সংস্থান হয় নদীগুলো থেকে। ক্রমাগত দূষণ ও দখল যেমন মানুষের জীবনের উপর ফেলছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া , তেমনি পরিবেশের জন্য হয়ে উঠছে দুর্বিষহ।

বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত তিস্তার পানির সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে ভারতের সাথে আলোচনা। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন তিস্তার উপর অনেকটা নির্ভরশীল। বিশেষ করে তিস্তা অববাহিকার ৫ হাজার ৪২৭টি গ্রামের মানুষ তাদের জীবিকার জন্য এই নদীর ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। (প্রথম আলো , ০৬ এপ্রিল ২০১৫)। বর্ষা মৌসুমে পানির অধিকতার কারণে প্লাবিত হয়ে যায় অনেক এলাকা । শুষ্ক মৌসুমে ভারতের পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তাতে পানি শুকিয়ে যায়। পানি না থাকায় ভেঙ্গে পড়ে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন, নদীর নদীর জীববৈচিত্র্য । বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন এবং বর্তমান সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে কিন্তু সমাধান হয়নি। যতদ্রুত সমাধান হবে ততই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক।

উগ্রধর্মীয়বাদ:

বাংলাদেশের জন্য উগ্রধর্মীয়বাদ যে কত বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেটার প্রতিফলন পাওয়া যায় বিভিন্ন উদাহরণ থেকে। বাংলাদেশের একজন ধর্মীয় নেতা তিনি নারীদের অবমাননা করে তেঁতুলের সাথে তুলনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন , ‘‘মহিলাদেরকে দেখলে দিলের মইধ্যে লালা বাইর হয়, বিবাহ করতে ইচ্ছা হয়৷ লাভ ম্যারেজ/কোর্ট ম্যারেজ করতে ইচ্ছা হয়৷” (ডি ডব্লিউ, ৮ জুলাই ২০১৩) । এই আধুনিক যুগে এসে যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীদের পদচারনা বিশ্বের কাছে উদাহরণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেই সময়ে এই ধরণের মন্তব্য সত্যিই ভাবায় উগ্রধর্মীয়বাদীরা সুযোগ পেলে কিভাবে নারীর অগ্রযাত্রাকে পদলেহন করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার দোলাইর পাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের ইস্যুতে আলোচনায় এলো আরও একটি বার্তা। একজন ধর্মীয় নেতা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেন , বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হবে। একটা স্বাধীন দেশের স্থপতি ,জাতির জনকের ভাস্কর্য ইস্যুতে এমন উগ্রবাদী বক্তব্য সত্যিই ভাববার বিষয় বাংলাদেশের অগ্রগতি, শান্তি- সমৃদ্ধির পথে।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ পল্লিতে হামলা চালিয়ে ১৯ টি বৌদ্ধমন্দির ধ্বংস অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবরের নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নেমে আসে চরম আঘাত। ১৭ মার্চ, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের হবিবপুর নোয়াগাঁও গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়িঘরে হামলা চালায় এক ধর্মীয় নেতার বিপক্ষে কটুক্তির অভিযোগে । ২০২১ সালের ৭ই অগাষ্ট খুলনার রুপসায় হিন্দু অধ্যূষিত গ্রামে হামলার মত সাম্প্রদায়িক হামলার বিষয়ে অনুসন্ধান করলে পাওয়া যাবে এমন হাজার উদাহরণ।

উগ্রধর্মীয়বাদের ফসল হিসেবে বলা যেতেই পারে জঙ্গিবাদকে। ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে , ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে রমনার বটমূলে, ৩ জুন গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর গির্জায় , ২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা করে জঙ্গি গোষ্ঠীরা। ২০১৬ সালের ০১ জুলাই রাজধানী ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় নিহত হন দেশী- বিদেশী নাগরিকসহ অনেকেই। এক সপ্তাহের মাথায় ৭ জুলাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের অদূরে পুলিশের ওপর হামলা চালায় জঙ্গিরা । ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর এলাকায় জঙ্গিদের সঙ্গে র্যাাব সদস্যদের গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে । গত ০৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির শীর্ষ নেতা এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টারকে গ্রেপ্তার করে র্যা ব। এই সমস্ত ঘটনা থেকে এটাই স্পষ্ট জঙ্গিরা ধর্মীয় উগ্রবাদকে ব্যবহার করে গোপনে বিভিন্ন নাশকতার পরিকল্পনা করে থাকে। এই ধরণের কার্যক্রম চরম বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য এবং বাংলাদেশের অগ্রগতি, শান্তি- সমৃদ্ধির পথে!

রোহিঙ্গা সমস্যা:

২০১৭ সালের পূর্বেও রোহিঙ্গা সমস্যাটা প্রকট ছিল না বাংলাদেশের জন্য। ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মায়ানমার সেনাবাহিনী দ্বারা লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী উপর হত্যা, শিশু ও নারী নির্যাতন, বেদম প্রহার, ঘর, বাড়ি স্থাপনা পুড়িয়ে দেওয়ার মত বিভিন্ন ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ মানবিক দৃষ্টিতে তাদেরকে আশ্রয় দেয়। কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং ভাসানচরে ০১ মিলিয়নের অধিক রোহিঙ্গারা বাস করছে। গত চারবছরে তাদের সংখ্যা কি পরিমান বেড়েছে, সেটার পরিসংখ্যান পাওয়া মুসকিল।চার বছর অতিবাহিত হলেও একজন রোহিঙ্গাদেরকে মায়ানমার ফেরত নেয়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার সরকারের মধ্যে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর সমঝোতা দলিল স্বাক্ষরিত হলেও সেটা আলোর মুখ দেখেনি । মায়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার শুনাণীতে ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক আদালতের দেয়া চারটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ছিল না কোন স্পষ্ট নির্দেশনা।

বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার ফলস্বরূপ ২০২১ সালের ১২ জুলাই সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের রোহিঙ্গা বিষয়ক রেজুলেশন গৃহীত হয়। তবে কবে নাগাদ এটি বাস্তবানের মুখ দেখে সেটিই এখন দেখার বিষয়। বাংলাদেশের বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ করে ভারত, চীন, রাশিয়ার মত রাষ্ট্রদের ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন’ এর বিষয়ে নীরব ভূমিকা রোহিঙ্গা সংকটকে আরও ঘনীভূত করে তুলেছে। এরই মধ্যে মায়ানমারের রাজনৈতিক পটে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। ২০২১ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যূথানের মাধ্যমে পুনরায় সামরিক শাসন। সামরিক সরকার বরাবরই রোহিঙ্গা বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত। এটা থেকে ধারনা করা যায়, মায়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন তো নয়ই, কিভাবে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আরও কঠোর নীতি নেয়া যায় সেটার বিষয়ে বদ্ধপরিকর।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি যেমন বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ , একই ভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তাদের নানবিধ কর্মকাণ্ড দেশের নিরাপত্তা, পরিবেশ এবং স্থানীয় জনগণের উপর পড়ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। গত ০২ সেপ্টেম্বর লন্ডনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, “ রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চলে অতিমাত্রায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে”। (বাংলা ট্রিবিউন, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১)। গত চার বছরে কক্সবাজারে ছোট-বড় হাজার হাজার গাছ কাটা হয়েছে তাদের ক্যাম্প নির্মাণ , ফার্নিচার তৈরি এবং জ্বালানী সরবরাহের জন্য । বিরাট এই জনগোষ্টীর মানুষের পানির সরবরাহের জন্য প্রায় ০৯ হাজারের অধিক নলকূপ স্থাপন করতে হয়েছে, ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় পাহাড় ধসের কারণে অনেক প্রাণহানিও ঘটতে পারে। রোহিঙ্গাদের কারণে জীববৈচিত্র্য পড়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। বিভিন্ন প্রাণীর, পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে এই অঞ্চল ছিল সংরক্ষিত। তাদের বসবাসের কারণে প্রাণীকুলের উপর নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়।

পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের তৎপরতা এবং অবৈধ কাজে রোহিঙ্গাদের জড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায় । গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত তাদের মাদকপাচার, চোরাচালান,চাঁদাবাজি , অপহরণ, হত্যার মত ঘটনার সাথে জড়িত থাকার খবর পাওয়া যায়। অবৈধ আইডি কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের শ্রম বাজারে প্রবেশ করছে। এমনকি, বিদেশী পাড়ি দিচ্ছে অবৈধ পাসপোর্ট। এটা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য অনেক বড় একটা হুমকি। বিভিন্ন রোহিঙ্গা উগ্রবাদী সন্ত্রাসী যেমন আল, সালমান শাহ গ্রুপের মত উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বাংলাদেশীদের জন্য ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে অস্পষ্টতা এবং রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের পরিবেশ এবং নিরাপত্তার উপর বিরূপ প্রভাব এখন বাংলাদেশের জন্য মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বেকারত্ব:

বাংলাদেশের ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবেও পরিচিতি। বাংলাদেশে প্রতি বছর যে হারে উচ্চশিক্ষায় শেষ করছে তরুণ- তরুণীরা , সেই ভাবে কি চাকরি বা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে!! বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ এর হিসাব বলছে, দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব অনুযায়ী, “ দেশে শ্রমশক্তির মোট পরিমাণ ৫ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে কাজ করছে ৫ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার জন। এর অর্থ বেকারের সংখ্যা মাত্র ২৬ লাখ ৮০ হাজার। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। অর্থাৎ প্রতি দুইজনে একজনের নাম বেকারের খাতায় অন্তর্ভূক্ত। ( ৭ জানুয়ারি ২০২১, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)” ।

কারিগরি শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করা হলেও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ বের হতে পারছে না। প্রতিবছর যে পরিমান মানুষ শ্রমবাজারের প্রবেশ করছে সেই পরিমান কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জরিপে উঠে এসেছে, “ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৬৬ শতাংশ অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশই বেকার থাকছেন। ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি পান। ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো অন্য কোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর বা কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করছেন কিংবা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ৩ শতাংশ স্ব-উদ্যোগে কিছু করছেন, এই তথ্য উদ্বেগজনক। (১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, প্রথম আলো)।

বাংলাদেশে কাজের সুযোগ না পেয়ে অনেকে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। বেকারত্বের কারণে অনেকে অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়ে পড়ছে। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে অনেক যুবক । অনেকেই বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। এটা রাষ্ট্রের জন্য চরম সংকটের। ২০২০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর প্রভাব ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এই দেড় বছরে বাংলাদেশের বেকারের হারে বেড়েছে অনেক বেশী। করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে চাকুরী হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে অনেকে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, “

“করোনাভাইরাস সংকটে বিশ্বে প্রতি ছয়জনের একজন বেকার হয়েছে আর বাংলাদেশের প্রতি চারজন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার রয়েছে (২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ)। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই এই বেকারত্ব বাড়ছে। ( বিবিসি বাংলা, ২৪ জুন ২০২০)”।

বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রের জন্য বেকারত্বের চ্যালেঞ্জকে যথাযথভাবে মোকাবিলা করাটা সময়ের গুরুত্ব বহন করে।

এই সাতের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য অদূর ভবিষ্যতে সীমান্ত সমস্যা, সন্ত্রাসবাদ, উগ্রজাতীয়তাবাদের মত বিষয়গুলো উন্নয়ন ও শান্তির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই সাতকে যথাযথভাবে মোকাবিলা করণের লক্ষে বিভিন্ন মেয়াদী পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়নই পারে বাংলাদেশের অগ্রগতি, শান্তি- সমৃদ্ধির পথকে সুগম করতে !

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)