ঐতিহাসিক যশোর রোডের শতবর্ষী গাছ রক্ষার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে নাগরিক সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা গাছ কাটতে নেয়া সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এসময় পরিবেশগত ও ঐতিহাসিকভাবে শতবর্ষী গাছগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরেন তারা।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে এই নাগরিক সমাবেশ হয়। অবশ্য এর আগে বৃহস্পতিবার শতবর্ষী এই গাছ কাটার সরকারি সিদ্ধান্তের উপর ৬ মাসের স্থিতাবস্থা দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি গাছ কাটার সিদ্ধান্তকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করে সরকারের ব্যাখ্যাও চান আদালত।
এই আদেশের ফলে আগামী ৬ মাস গাছগুলো কাটা যাবে না বলে জানান রিটকারি আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। শতবর্ষী গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত বন্ধ চেয়ে গতকাল রিট করেন তিনি। সে রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দেন।
সম্প্রসারণের জন্য ওই সড়কের দু পাশে থাকা গাছগুলো কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো স্থানীয় প্রশাসন, এর পরই এ নিয়ে শুরু হয় তীব্র প্রতিবাদ।
প্রায় দুশো বছর আগে সড়কটি নির্মাণ করে গাছগুলো রোপণ করেছিলেন স্থানীয় জমিদার কালিপদ পোদ্দার। যশোর রোড নামে পরিচিত সড়কটি কলকাতা থেকে যশোর পর্যন্ত বিস্তৃত।
পেট্রাপোল থেকে কলকাতা পর্যন্ত সড়কও চার লেন হচ্ছে। তবে সেখানেও গাছ কাটার ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় দুই কিলোমিটার রাস্তায় চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে গাছগুলো অক্ষত রেখেই।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এ পথেই দেশ ছেড়েছিলো লক্ষ লক্ষ শরণার্থী, পরে তারা ফিরেও আসেন এ পথেই। বিখ্যাত কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ রচনা করেছিলেন সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড। পরে তার ভিত্তিতে গান রচিত হয়, যা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবান স্মারক হিসেবে বিবেচিত।
যশোর শহর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩৮ কি.মি.। এই রাস্তাটি সম্প্রসারণের প্রকল্পটি পাশ হয় ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। এই রাস্তার দুই পাশে সড়ক ও জনপথের হিসেব অনুযায়ী গাছ রয়েছে ২ হাজার ৩১২টি। এর মধ্যে ২শর অধিক গাছ রয়েছে যেগুলোর বয়স ১৭০ বছরের বেশি। গাছ গুলোর সাথে জড়িয়ে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক ঘটনা এবং স্থানীয় মানুষের আবেগ বিজড়িত স্মৃতি।