ঠিক কী পরিমাণ সম্পত্তি রেখে গেছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা, এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ১ থেকে ৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। যার ভাগ চেয়ে নিজেদের ম্যারাডোনার সন্তান বলে দাবি করেছেন ছয়জন। তাদের মামলা আদালতে উঠলে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির মরদেহ কবর থেকে ওঠানোর প্রসঙ্গ আসে আদালতে।
সেসবকে পাত্তা দেননি আদালত। যেকোনো দাবির ভিত্তিতেই হোক না কেনো, ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তির দেহ সংরক্ষণ ও কবর থেকে না ওঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ২৫ নভেম্বর হার্ট অ্যাটাকে বুয়েন্স আয়ার্সে নিজ বাড়িতে মারা যান আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। একদিন পর তাকে সমাহিত করা হয়। সেদিন থেকেই শুরু সম্পত্তি ভাগের ঝামেলার।
ম্যারাডোনার সম্পত্তি ঠিক কত? সেটা জানা না গেলেও প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ফোর্বস বলছে পরিমাণটা ১ থেকে ৪ কোটি ডলারের।
এরমধ্যে রয়েছে জমি, বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি, গহনা। যেসব দেশে তিনি খেলেছেন বা কোচিং করিয়েছেন বা অন্য কোনভাবে যুক্ত ছিলেন সেই আর্জেন্টিনা, স্পেন, ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলারুশ, মেক্সিকোয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সব সম্পত্তি।
এসবের দাবি যারা জানাতে পারেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন স্বীকৃত পাঁচ সন্তান। চারজন আর্জেন্টিনায়, একজন ইতালিতে। আছেন আরও ছয়জন, যারা নানা সময়ে নিজেদের ম্যারাডোনার সন্তান বলে দাবি করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ম্যারাডোনা বলে এসেছেন জিয়ানিনা এবং ডালমা ছাড়া তার আর কোনো সন্তান নেই। এ দুজনই ম্যারাডোনার সাবেক স্ত্রী ক্লদিয়া ভিলাফেনের কন্যা। দীর্ঘ ২০ বছরের বিবাহিত জীবন কাটানোর পর ক্লদিয়ার সঙ্গে ম্যারাডোনার বিচ্ছেদ হয় ২০০৩ সালে।
যার বাইরে ম্যারাডোনা আরও ছয় সন্তানের কথা স্বীকার করতেন। চারজন কিউবায়, দুজন আর্জেন্টিনায়। রয়েছেন সাবেক স্ত্রী-বান্ধবীরাও। ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির দাবি জানিয়ে লড়াইয়ে নামেন আরও দুই ‘সন্তান’ সান্তিয়াগো লারা এবং মাগালি গিল। দুজনেই বলেছেন, তারা নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করার জন্য আইনি পথে নামবেন। বাদ নেই ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাংবাদিক, এমনকি চিত্রগ্রাহকরাও।
আদালতে ম্যারাডোনার আইনজীবী জানিয়েছেন, ম্যারাডোনার ডিএনএ এরইমধ্যে সংরক্ষিত আছে। যার কারণে তার মরদেহ কবর থেকে তোলার কোনো প্রয়োজন নেই। তার বক্তব্য মেনে কবর খোঁড়ার দাবিকে নাকচ করে দিয়েছেন ন্যাশনাল কোর্ট। সন্তান দাবি করা মাগালি গিলের চাওয়া দ্রুত নিষ্পত্তি ও ম্যারাডোনার ডিএনএ কৌঁসুলির অফিসে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি আরও ঘোলা হয়েছে ম্যারাডোনার ব্যবহার করা পুরনো একটি বাক্স আবিষ্কৃত হওয়ার পর। যাতে পাওয়া গেছে প্রচুর জার্সি। জার্সির কোনোটায় আছে সার্জিও আগুয়েরোর সই, ব্রাজিলের রোনাল্ডো, হ্যারি কেন, আবার কোনটায় রিস্টো স্টোইচকভের সই।
আরও আছে বার্সেলোনা, নাপোলি, বোকা জুনিয়র্স থকে পাওয়া বল এবং ফিফার তরফ থেকে উপহার দেয়া একটি স্মারক। সবই ম্যারাডোনার সম্পত্তি। রয়েছে তার নিজের কিছু শার্টও। কিছু রাজনৈতিক উপহারও রয়েছে, যেগুলো তিনি পেয়েছেন বামপন্থী বন্ধুদের কাছ থেকে। একটি শার্টের পেছনে লেখা রয়েছে ‘লুলা’। সেটি ম্যারাডোনাকে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা। সাবেক কিউবান নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর লেখা একটি চিঠিও পাওয়া গেছে বাক্সে।
ইতিমধ্যেই এসব দুষ্প্রাপ্য জিনিসের দাবিদার পাওয়া গেছে। ম্যারাডোনার ছেলে দিয়েগুইতো ফার্নান্ডো নাকি এ বাক্সের মালিকানা পাবেন। ম্যারাডোনার নাকি সেরকমই ইচ্ছে ছিল।
দিয়েগুইতোর আইনজীবী মারিও বাউদরি বলছেন, ‘এই বাক্সের মধ্যে প্রচুর ঐতিহাসিক জিনিস রয়েছে। ম্যারাডোনা নিজে আমাকে বলেছিলেন, এই বাক্স খুঁজে বের করতে এবং জানিয়েছিলেন, এরমধ্যে যা যা থাকবে তার সবকিছুর মালিক হবে দিয়েগুইতো। কিন্তু উনি সরকারীভাবে কিছু লিখে যাননি। ফলে এখন হয়ত তার সব সন্তানরাই এর দাবি জানাবে।’