চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘মোটিভেটেড’ তরুণরা একসময় দেশের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিল, আর এখন?

সম্প্রতি মোটিভেশনাল স্পিকারদের সমালোচনা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সমালোচনা করেছেন অনেকেই। মোটিভেশনাল স্পিচ, স্পিকার এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ফাহিম মাসরুর।

ফাহিম ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে দেখলাম অনেকেই মোটিভেশনাল স্পিকারদের সমানে ‘ধুয়ে’ দিচ্ছে! তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে, মোটিভেশনাল স্পিকাররা নিজেরাই কতটা ফাঁপা তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবার ব্যক্তিগত অধিকার এবং কেউই সমালোচনার উর্ধে নয়- তাই এই ব্যাপারটা খুব নেগেটিভলি দেখছি না। তবে আমার মনে হয় আমাদের সমাজের বর্তমান প্রেক্ষাপটটা চিন্তায় রাখলে হয়তো মোটিভেশনাল স্পিকারদের রোল-কে খারাপভাবে দেখার কিছু নেই। একটু ব্যাখ্যা করি-

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি এই দেশের তরুণ সমাজ বর্তমান সময়ের মতো এতোটা খারাপ সময় কখনো পার করে নি। আমরা আমাদের আসে পাশে একটু তাকাই। কি ভয়ংঙ্কর হতাশা গ্রাস করছে দেশের এই তরুণদের! শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি।

খবরে প্রকাশ – দেশে ৫০ লাখ তরুণ ‘ইয়াবা’ আসক্ত, প্রতিদিন ২০ লক্ষ ‘ইয়াবা’ সেবন হয় দেশে! শুধু শহর নয়, গ্রামে গঞ্জে ঘুরলে দেখা যাবে তরুণরা মাদক আর অনলাইন জুয়া/পর্ন নেশায় মত্ত।

আজ আমাদের তরুণদের সামনে কোনো আদর্শ নেই। আজকে পরিবার থেকে তারা কোনো আদর্শ পায় না, কেননা দুর্নীতির ঘুন পরিবারের মূল্যবোধকে ধ্বংস করেছে অনেক আগেই – আজকাল অভিবাবকরাই সন্তানদের নকল প্রশ্ন কিনে দিচ্ছে! ইতিহাস বলে, একসময় এদেশের তরুণরা ‘মোটিভেটেড’ হতো রাজনীতিক নেতাদের কাছ থেকে, রাজনৈতিক আদর্শে ‘মোটিভেটেড’ হয়ে নিজেদের জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিল এই দেশেরই তরুণরা। আর আজ দলবাজি আর টেন্ডারবাজির আবর্তে ছাত্র রাজনীতি ধ্বংস! তাদের সামনে আজ কোনো স্বপ্ন নেই . . .

একদিকে আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডেড নিয়ে কথা বলি, আর অন্যদিকে না পরিবার, না সমাজ – কোনো খান থেকেই ভালো আর কল্যাণকর কিছু শিখছে না এই তারুণ্য- আর প্রতিদিন তলিয়ে যাচ্ছে হতাশায়!

এই প্রেক্ষাপটে আমরা দেখছি কিছু স্মার্ট ব্যক্তি (ভালো কথা বলতে পারে, উপস্থাপনা ভালো) ফেসবুক/ইউটিউব ব্যবহার করে তরুণদের মোটিভেট করতে চাচ্ছে। ধরে নিলাম এটি তারা করছে নিজেদের ‘সেলেব্রিটি’ করার জন্য, নিজেদের ‘ফলোয়ার’ বানানোর জন্য।এটিতে দোষের কি কিছু আছে? হয়তো ১০ হাজার তরুণের মধ্যে মাত্র ১০ জন ‘মোটিভেটেড’ হবে একজন মোটিভেশন স্পিকারের কথায় – হোক না, তাই বা কম কি?

এই দশ হাজারের কেউ হয়তো ‘জুকারবার্গ’ বা ‘বিল গেটস’ হবে না, কিন্তু হয়তো একজন-দুইজন কিছু বড় স্বপ্নের পিছনে ছুটবেI ছুটুক না, এভাবেই তো সমাজে অনেক বড় কিছু না হলেও ভালো কিছু হয়!

শেষ কথা- আমি মনে করি আমাদের এই দুর্দিনে আরো অনেক মোটিভেশন স্পিকার দরকার।যতটা না দরকার বিশাল বিশাল ‘সাকসেস স্টোরি’-র জন্য, তার থেকেও বেশি দরকার আমাদের এই ঘুনে ধরা সমাজ আর এই সম্ভাবনায় তরুণদের ধ্বংসের কবল থেকে ফেরানোর জন্য।’