২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফল ত্রুটিপূর্ণ দাবি করে তা বাতিল করে নতুন মেধা তালিকা প্রনয়ণের মাধ্যমে মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন। এসময় আদালত বলেন, ‘পর্যবেক্ষণসহ রিটটি খারিজ করা হচ্ছে। তবে কোনো পরীক্ষার্থীর ফলাফল বিষয়ে অভিযোগ থাকলে তা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করবেন। সেক্ষেত্রে ৭ দিনের মধ্য কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিস্পতি করে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে জানাবে। আর তথ্য গোপন করে কোনো প্রার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ার অংশ নিয়ে থাকলে এবং তা চিহ্নিত হলে তাদের ভর্তি তাৎক্ষণিক বাতিল হবে।’
আজ আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৩২৪ জন পরীক্ষার্থীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির ও মোহাম্মদ কাওছার গত ১৯ মে এই রিটটি করেন। স্বাস্থ্য সচিব, শিক্ষা সচিব, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে রিটে বিবাদী করা হয়।
রিটের বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির ওইদিন বলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রচারিত ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী একজন পরীক্ষার্থী কোন মেডিকেল কলেজে ভর্তি থাকা অবস্থায় তিনি যদি দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তবে তার মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৭.৫ নম্বর কর্তন করা হবে। আবার কোন পরীক্ষার্থী যদি গত বছর এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকে তাহলে তার ৫ নম্বর কাটা যাবে। কিন্তু প্রকাশিত ফলাফল থেকে দেখা যায় অনেক পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রেই এই নিয়মটি পালন করা হয়নি। যেসব পরীক্ষার্থীদের ৭.৫ নম্বর কর্তন করার কথা সেখানে মাত্র ৫ নম্বর কর্তন করা হয়েছে। ফলে ওইসব ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ২.৫ নম্বর বেশি দিয়ে মেধা তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। আবার প্রথমবার পরীক্ষায় যেখানে কোন নম্বর কাটবার কথা নয় সেখানে অনেক পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকেই ৫ নম্বর কর্তন করে মেধা তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া এবারের ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তক অনুযায়ী অন্তত দুটি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের সঠিক উত্তর ছিল দুটি করে। সেই সাথে অন্তত তিনটি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর ছিলনা। সংরক্ষিত জেলা ও উপজাতি কোটার আসন পূরণেও ব্যাপক অসঙ্গতি করা হয়েছে। আর ঢাকা জেলা কোটার আবেদনকারী পরীক্ষার্থীকে দেখানো হয়েছে মেহেরপুর জেলার পরীক্ষার্থী হিসেবে। উপজাতি কোটায় সংরক্ষিত আসনে অসংখ্য সাধারণ ছাত্র ছাত্রী কে নির্বাচিত করা হয়েছে। এসব ত্রুটি ও অসংগতি রেখে মেধা তালিকা প্রণয়ন করার ফলে হাজার হাজার যোগ্য ও মেধাবী পরীক্ষার্থী মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার মুখে পড়েছেন। তাই প্রকাশিত ফলাফল বাতিল করে এবং এসব ত্রুটি ও অসংগতি সংশোধন করে নতুন মেধা তালিকা প্রকাশের জন্য এর আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু সে নোটিশের জবাব না পেয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিটটি করা হয়।
গত ৪ এপ্রিল ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। জাতীয় মেধার ভিত্তিতে সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য ৪ হাজার ৩৫০ জন ভর্তি-ইচ্ছুক নির্বাচিত করা হয়। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪৮ হাজার ৯৭৫ জন উত্তীর্ণ হন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৩৯.৮৬ শতাংশ।