মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব দ্বারা অসম্মানিত হওয়ার কারণে একজন মুক্তিযোদ্ধার অাত্মহত্যার ঘটনায় এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এছাড়া পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-ও বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক।
দুপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল পরিবহন পুলে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে সচিবের আচরণে মুক্তিযোদ্ধা আইয়ূব খানের আত্মহত্যার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেসময় মন্ত্রী বলেন, তদন্তে কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিন সময় কম থাকার জন্য তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের আবারও রোববার তার দপ্তরে আমন্ত্রণ জানান। তবে আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার এরকম দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় তিনি মর্মাহত, খুবই দুঃখিত।
মন্ত্রী জানান, যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব শেখ মিজানুর রহমানের এক সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্টের অপেক্ষায় আছেন তিনি।
জীবনে অপমান, মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার একটি আবাসিক হোটেলে আত্মহত্যা করেন মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খান। মৃত্যুর আগে তিনি ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর লেখা চিঠিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে যান।
চিঠিতে নিজেকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, চট্টগ্রাম উত্তর ইউনিট প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন মহলে তদবির করছিলেন। কাজ করে দেওয়ার জন্য সচিব তার কাছ থেকে মাছ, শুঁটকি ও নগদ টাকা পর্যন্ত উপঢৌকন নিয়েছেন।
কিন্তু, তিনি লিখেছেন, সচিবের কাছে গেলে সচিব তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। এই অপমানের গ্লানি নিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করে গেছেন।
পরে বুধবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধাকে চেনেন না সচিব
তবে আত্মহত্যা করা মুক্তিযোদ্ধা আইয়ূব খানকে চেনেন না বলে দাবি করেছেন সচিব এম এ হান্নান। ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা তার চিরকূটে লিখে রেখেছেন যে তিনি জেলা কমান্ড কাউন্সিল গঠনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এসেছিলেন, কিন্তু এখানে সেই কাজই হয় না। জেলা কমান্ড কাউন্সিল গঠনের কাজ করে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল। সুতরাং এই কাজের জন্য তিনি আমাদের কাছে এসেছেন বলে খবর সত্য নয়।
তিনি আরও বলেন, ৩২ বছরের চাকরি জীবনে তিনি কখনো কাউকে গালিও দেননি। একই সাথে সচিব বলেন, ওই চিরকূটে মুক্তিযোদ্ধা তার বাসায় যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। সচিব যে বাসায় থাকেন সেখানে যেতে হলে সিকিউরিটিকে অবগত করতে হয়। এসব কাজ তিনি অফিসে বসেই করেন। তাই বাসায় যাওয়ারও কোনো প্রশ্ন উঠে না।
আত্মহত্যা করা মুক্তিযোদ্ধাকে কখনও দেখেননি দাবি করে সচিব এম এ হান্নান আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত, দুঃখিত। উনার সাথে কে খারাপ আচরণ করেছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে চিনি না বা দেখিনি।