চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা-বৈষম্য আমেরিকান নীতির পরিপন্থী

ধর্মীয় স্বাধীনতা আমেরিকান জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ যা আমাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার সময় থেকেই ছিল।  আদতে, অনেক ইউরোপীয় ব্যক্তি ও পরিবার ধর্মীয় নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে আমেরিকায় এসে বসতি স্থাপন করেছিল।  এটা মোটেও আশ্চর্যজনক নয় যে এই মৌলিক অধিকারটি “প্রথম স্বাধীনতা” হিসেবে আমাদের সংবিধানের “বিল অফ রাইটস”-এ সন্নিবেশিত রয়েছে।

ধর্মীয় স্বাধীনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সব ধর্মের মানুষ কোন প্রকার ধর্মীয় বৈষম্য ছাড়া সমাজের সব কিছুতে অংশগ্রহণ করতে পারবে।  ধর্মীয় বহুত্ববাদ একটি আমেরিকান মূল্যবোধ ও ঐতিহ্য যা কেবল ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রতি “সহনশীল” করে তোলে তাই নয়, পাশাপাশি একটি জাতীয় সম্পদ হিসেবেও একে আলিঙ্গন করে নেয় এবং বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসীদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরির সুযোগ করে দেয়।  প্রতি দিন আমাদের দেশের প্রতিটি রাজ্যে, বৈচিত্র্যময় গোষ্ঠির খ্রিষ্টান, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ এবং অন্যান্যরা দারিদ্র্য ও বৈষম্য মোকাবেলা করতে আমেরিকান হিসেবে আসে, পুনর্বাসিত হয় এবং অত্যাচার থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের সাহায্য করে।  তাদের এ সকল কাজ যুক্তরাষ্ট্রের সীল-এ খোদাই করা আমাদের জাতীয় স্লোগান “অনেকের মাঝেও একাত্ম”-এরই প্রতিফলন ঘটায়।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমেরিকার গল্পগুলো সবার সাথে ভাগ করে নেয়ার সুযোগ রয়েছে আমার।  এর মধ্যে রয়েছে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে প্রতিক্রিয়া জানানো।  উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, আল-কায়েদা অথবা আইএসআইএল-এর হামলার পর আমি প্রায়ই আমেরিকান মুসলমানদের উদ্বেগের কথা শুনতে পাই তাদের অধিকার সম্পর্কে।  আমি সুস্পষ্ট করে বলতে চাই: মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অথবা বৈষম্য আমেরিকান নীতির পরিপন্থী এবং গ্রহণযোগ্য নয়।  এই নীতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ছিল এবং থাকবে।  এই বছরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ওবামা যেমনটি বলেছিলেন, “আমাদের দেশের জন্ম থেকেই ইসলাম এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।  মুসলিম আমেরিকানরাও এর বাইরে নয়।”

ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নারডিনোতে সাম্প্রতিক হওয়া হামলার পর প্রেসিডেন্ট ওবামা জাতির উদ্দেশ্যে তার ভাষণে সুস্পষ্ট করে বলেন, “আইএসআইএল ইসলামের হয়ে কথা বলে না।  তারা অপরাধী, খুনী ও হন্তারক সংস্কৃতির অংশ… এবং সারা বিশ্বের মুসলমানদের যেমন দায়িত্ব রয়েছে বিপথে চালিত হওয়া ধ্যান-ধারণা যা চরমপন্থার দিকে নিয়ে যায় তা প্রত্যাখান করা তেমনি সব ধর্ম বিশ্বাসের আমেরিকানদেরও দায়িত্ব বৈষম্য প্রত্যাখান করা।  ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে আমরা কাকে আমাদের দেশে প্রবেশ করতে দেব এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ধারণা  প্রত্যাখান করা আমাদের দায়িত্ব।  আমেরিকান মুসলমানদের সাথে ভিন্ন আচরণ করতে হবে এই ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখান করা আমাদের দায়িত্ব।  কারণ আমরা যখন ঐ পথে হাঁটি তখন আমরা হেরে যাই।”      

কিন্তু আসুন একটি বিষয় আমরা পরিষ্কারভাবে জেনে নিইঃ  একটি সফল জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে আমেরিকার কাছে ধর্মীয় স্বাধীনতা যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তেমনিভাবে বুঝতে হবে যে এই অধিকারগুলো কেবলমাত্র আমেরিকান জনগণের জন্যই নয়। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি ধর্মবিশ্বাস পছন্দ করার স্বাধীনতা, কারো বিশ্বাস পরিবর্তন,  ধর্মীয় ভিন্নমত পোষণ, বিশ্বাস নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলা, প্রার্থনার জন্য একত্রিত হওয়া এবং সন্তানকে ধর্মীয় বিশ্বাস শিক্ষা দেওয়ার অধিকারকে সংরক্ষণ করে।  এবং প্রকৃতপক্ষে, এই দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে আমরা এতটা মূল্য দিই বলেই যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ধর্মীয় স্বাধীনতার অগ্রগতিকে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে প্রাধান্য দিয়েছে এবং এর পররাষ্ট্র দফতরের অধীনে একটি আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক অফিস প্রতিষ্ঠা করেছে।  এবং আমাদের রয়েছে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক অ্যাম্বাসাডর-অ্যাট-লার্জ এবং নিকট প্রাচ্য ও দক্ষিণ/মধ্য এশিয়াতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা, যাঁরা এই অবিচ্ছেদ্য অধিকার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিচ্ছেন।   

এটি সত্য যে ধর্মীয় গোঁড়ামি সংক্রান্ত ঘটনা যুক্তরাষ্টে ঘটে থাকে, যেমনটি পৃথিবীর সর্বত্র ঘটে।  এবং সংগত কারণেই বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে।  কিন্তু এটি পুরো গল্পের ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র।

যুক্তরাষ্ট্র বিষয়ে আরও সঠিক পর্যবেক্ষণ পাওয়া যেতে পারে এর দৈনন্দিন কার্যক্রমগুলোতে যেগুলো সাধারণত আন্তর্জাতিক খবরে প্রকাশিত হয় না।  এর আংশিক কারণ হল এই সহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ঘটনাগুলোর সংবাদমূল্য নেই কেননা এগুলোই স্বাভাবিক।  তেমনই সব ঘটনাবলীর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য সরকারি কর্মকর্তা, ধর্মীয় নেতা, এবং সুশীল সমাজের সদস্যদের দ্বারা বৈষম্য প্রত্যাখ্যান। 

এরা সবাই তাঁদের সহযোগী নাগরিকদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন।  উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি শত শত খ্রিস্টান চার্চ যেগুলো উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে অর্থ সংগ্রহ করছে; ১,০০০ আমেরিকান ইহুদি র‌্যাবাই যারা সিরীয় উদ্বাস্তুদের স্বাগত জানিয়ে লেখা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন; আমেরিকান মুসমানদের গণ অর্থসংগ্রহ অভিযান যেটি স্যান বার্নারডিনো-তে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২০০,০০০ ডলার সংগ্রহ করেছে এবং সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত, সাত বছরের সেই ছেলেটি যে তার জমানো সব টাকা টেক্সাসে ভাংচুর হওয়া একটি মসজিদে দান করেছে।  এটিই আমেরিকার সত্যিকারের গল্প।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)