চাইলেই কি একজন প্রেসিডেন্টকে আল্টিমেটাম দিয়ে হুট করে অভিশংসন করা যায়? এতই কি সোজা জিম্বাবুয়ের রবার্ট মুগাবেকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া? বিশ্বের আইন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বিষয়ক অন্যতম আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক দল ভেরিটাস জানিয়েছে: যত সহজ মনে করা হচ্ছে, ব্যাপারটা আসলে তত সহজ নয়।
‘মুগাবের অভিশংসন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে জিম্বাবুয়ের প্রশাসনকে এক দীর্ঘ এবং খুবই জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রক্রিয়াগুলো এতটাই জরুরি যে, শত চেষ্টায়ও কোনো একটাকে বাদ দিয়ে আরেকটা করা যাবে না, নেয়া যাবে না কোনোরকম শর্টকাট ব্যবস্থা।’
জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে সোমবার দুপুরের মধ্যে পদত্যাগ না করলে তাকে অভিশংসন করে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে- এমনটাই হুমকি দিয়েছে তার নিজের দল ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ। মুগাবে অবশ্য এই আল্টিমেটামকে পাত্তা না দিয়ে বলেছেন: ডিসেম্বর পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে প্রেসিডেন্ট থাকছেন তিনি।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দেশের সেনাবাহিনীর হাতে পরিবারসহ প্রায় গৃহবন্দী ছিলেন রবার্ট মুগাবে। এসময় প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তাদের কাছ থেকে টানা প্রবল চাপের মুখে ছিলেন তিনি।
অল্প সময়ের মধ্যেই এই ‘চাপ প্রক্রিয়ায়’ যোগ দেয় তার নিজেরই রাজনৈতিক দল। এমনকি মুগাবেকে দলীয় প্রধানের পদ থেকে বহিষ্কার করে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নাঙ্গাগওয়াকে নিয়োগ দেয়া হয়। অথচ মুগাবে নিজে মাত্র দু’সপ্তাহ আগে তাকে চাকরিচ্যুত করেছিলেন।
মুগাবেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার মধ্যে পদত্যাগ না করলে তাকে অভিশংসন করা হবে বলেও দলের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন, ৯৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট মুগাবে ক্ষমতা না ছাড়লে অভিশংসনের মাধ্যমে হুট করে তাকে সরিয়ে দেয়া হবে এবং জিম্বাবুয়ে আরও বেশি বেশি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে পড়বে।
সম্ভাব্য এই রাজনৈতিক সংকট বিশ্লেষণ করে থিংক ট্যাংক ভেরিটাস সতর্ক করেছে: যত যা-ই ভাবা হোক না কেন, হঠাৎ করে মুগাবেকে অভিশংসন করা সম্ভব নয়। প্রেসিডেন্ট মুগাবে জিম্বাবুয়ের কিছু আইন পরিবর্তন করে এমনভাবে কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব রেখে দিয়েছেন, যেগুলো এ ধরণের পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিনাশ থেকে বাঁচতে তাকে অনেকটা অতিরিক্ত সময় বের করে দেবে।
অভিশংসন দীর্ঘমেয়াদী একটি প্রক্রিয়া উল্লেখ করে সংস্থাটি পার্লামেন্ট ও আদালত বিষয়ক নিয়মিত বুলেটিনে লিখেছে: এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ঠিক কতটা সময় লাগবে তা বলা মুশকিল। কারণ পার্লামেন্টের স্ট্যান্ডিং অর্ডারে স্পষ্টভাবে বলা নেই অভিশংসন প্রক্রিয়ায় ঠিক কী কী নির্দেশ দিতে হবে বা পার্লামেন্টের দু’টো কক্ষ কীভাবে এ ব্যাপারে মিলিত বৈঠক করবে। এক কথা বললে, জিম্বাবুয়ের পার্লামেন্টকে অভিশংসন নিয়ে কোনো কাজই করতে হয় না।
‘যেহেতু এ বিষয়ে ক্রমধারা অনুসারে কোনো লিখিত নিয়ম নেই, সেহেতু স্ট্যান্ডিং রুলস অ্যান্ড অর্ডারস বিষয়ক কমিটি, পার্লামেন্টের স্পিকার এবং অন্যান্য সদস্য মিলেই প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে হবে’, বিশ্লেষণ শেষে জানায় ভেরিটাস। এই প্রক্রিয়ায় বহুদিন লেগে যেতে পারে বলেও জানায় এই সংগঠন।
এমনকি জটিল পুরো প্রক্রিয়া শেষে মুগাবের অভিশংসন সফল হলেও নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেলেকেজেলা মোফোকোকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট পদে রাখতে হবে। এর ফলে মুগাবে এবং তার মিত্রপক্ষকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে। যদি মোফোকো ওই সময় কোনো কারণে দেশের বাইরে থাকেন বা আটক থাকেন, এমনকি দলীয় পদটাও হারান, তবুও তার ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ থেকেই যাবে।