চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মুক্তিযুদ্ধের গল্প নয়, বাস্তব

‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ সিনেমার অন্যতম নির্মাতা মসিহ উদ্দিন শাকেরের ভাগ্নে ও সাবেক ক্রিড়া সাংবাদিক ফরহাদ টিটো ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে এক ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন।

‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প নয়, বাস্তব’ শিরোনামে দেওয়া পোস্টে যুদ্ধকালীন পরিচালক শাকেরের অবদান ও যুদ্ধপরবর্তী তার অভিমানের গল্প লিখেছেন।

ফরহাদ টিটো তার পোস্টে লেখেন:

আমার দুই মামা(আপন)। একজন খুব ভালো ছড়াকার ছিলেন বয়স পঁচিশ হওয়ার আগেই। তাকে আদর করতেন, প্রশংসা করতেন কবি প্রধান শামসুর রাহমানও । সেই মামা কম বয়সেই মারা গিয়েছিলেন ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ! ঘটনাটা আটাত্তর সালের দিকের ।

মায়ের ঠিক ছোট ভাই, আমার বড় মামা এখনো বেঁচে আছেন ভালোভাবে ।
দু’জনেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন দু’ভাবে । বড় মামা তখন বুয়েটে আর্কিটেকচারের ছাত্র । ময়মনসিংহে নেমে পড়েছিলেন যুদ্ধের ময়দানে । ছোট মামার হাতের লেখা ছিলো অসম্ভব সুন্দর । বাংলাদেশ বেতারে খবর আর চরমপত্র শুনে শুনে আর গফরগাঁওয়ে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে যুদ্ধের পরিস্থিতি জেনে নিয়ে রাতভর পত্রিকা বানাতেন সাদা কাগজে হাতে লিখে । গ্রামের রাজাকার-আল বদরদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই সব পত্রিকা নিজ হাতে বিলি করতেন বিভিন্ন মুক্তিবাহিনী ক্যাম্পে । হাতে লেখা ঝকঝকে পত্রিকায় সেই সব খবর পড়ে আনন্দিত আর উজ্জীবিত হতেন মুক্তিযোদ্ধারা ।

বড় মামা যুদ্ধের পর আবার বুয়েটে ফিরে গিয়েছিলেন । ক’ বছর পর দারুণ রেজাল্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে বেরিয়েও এসেছিলেন ।

এরপর ছাত্রত্ত্ব শেষের অল্প কিছুদিন পর ফিল্ম ডিরেকটিং শেখা শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি । দীক্ষা নিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ের মতো মহীরুহর কাছেও ।

আশির দশকের ঠিক আগে মামা একটা ছবি বানালেন তার এক সিনিয়র বন্ধুকে সঙ্গী পরিচালক করে । বন্ধুর নাম শেখ নিয়ামত আলী । আমার মামার নাম মশিহউদ্দিন শাকের । তাদের বানানো সেই আলোড়ন সৃষ্টিকারী, দেশের বাইরে প্রথমবার আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পাওয়া বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের নাম “সূর্য দীঘল বাড়ি”।

সে-ই ছিলো আমার শাকের মামার জীবনে বানানো একমাত্র ছবি । কয়েক বছর পরের ঘটনা । দেশে “মুক্তিযোদ্ধা চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি” গঠন হলো । আমার মুক্তিযোদ্ধা মামাকে ডাকাই হলো না ! শুনতে পেলাম মুক্তিযুদ্ধের ধারে-কাছেও ছিলেন না বা থাকলেও ছিলেন ‘অন্যপক্ষে’ এমন পরিচালকও ঢুকে গেছেন অনেকজন এই সমিতিতে ।
অনেক পরে হয়তো মামাকে ডাকা হয়েছিলো সদস্য হতে.. যদ্দুর জানি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তিনি অভিমানে, অপমানে ।

ফরহাদ টিটোর ফেসবুক পোস্ট: