মিয়ানমারে উন্মত্ত জনতার রোষানলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে একজন মুসলিম অধিবাসী। বৌদ্ধপ্রধান দেশটিতে রোহিঙ্গা মুসলিমরা ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত সংখ্যালঘু’ বলে জাতিসংঘ স্বীকৃত।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর ওই প্রাণঘাতী হামলার মুখে একজন পুলিশ সদস্য সেখান থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় বলেও বুধবার জানান পুলিশের দুইজন কর্মকতা।
মঙ্গলবার রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতোয়ে’তে রাখাইন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি দল রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর ইট ছুড়ে মারলে একজন নিহত হয়। নিহতের পরিচয় মং নু (৫৫) বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। যিনি মনির আহমেদ নামেও পরিচিত। স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি’র অফিস থেকে এক বিবৃতিতে এমনটি জানানো হয়।
পুলিশের দুইজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানায়, হামলার সময় একজন নিরস্ত্র জুনিয়র পুলিশ সদস্য মুসলিম অধিবাসীদের প্রহরায় ছিল, কিন্তু উন্মত্ত জনতার হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে পারেননি।
সিতোয়ে জেলা পুলিশের লেফট্যানেন্ট কর্নেল উইন নং জানান, সেই পুলিশ সদস্য জাতিগতভাবে হামলাকারীদের সমগোত্রীয় বলে হামলার শিকার হননি।
২০১২ সালে সংঘাতের পর সিতোয়ে’র প্রান্তে ক্যাম্পে বসবাস করা ৭ জন রোহিঙ্গা মুসলিম মঙ্গলবার ঘুরতে বেড়োয়। এসময় নৌকা ক্রয় নিয়ে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী একজনের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায় তারা। এতে সেখানকার অধিবাসীরাও জড়িয়ে পরে এবং তাদের উপর হামলা চালানো শুরু করে।
রাজধানী নেপিডোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল মিয়ো থু সোয়ে বলেন, আমরা সেই তরুণ পুলিশ সদস্যকে প্রশ্ন করেছিলাম। সে বলেছে, তাদের থামাতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু সক্ষম হয়নি এবং পালিয়ে পুলিশ স্টেশনে এসে পড়ে। এই হামলার জন্য এখনও কাউকে আটক করা হয়নি, তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।
মিয়ো থু সোয়ে বলেন, ঘটনাস্থলের সেই পুলিশ সদস্য নিরস্ত্র ও অনভিজ্ঞ ছিলেন।
পুলিশ প্রহরা থাকার পরও রোহিঙ্গা মুসলিমরা সেই এলাকায় ভ্রমণের জন্য অনুমোদিত নয় বলে জানান মিও থু সোয়ে। ২০১২ সালের সহিংসতার পর শহরের মুসলিমদের ক্যাম্পে বা একটি সিটি ওয়ার্ডে থাকতে বাধ্য করা হয়। পুলিশ প্রহরা ছাড়া তারা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারে না।
সামরিক বাহিনীর কয়েক দশকের কঠোর শাসনের অবসানের পর রাখাইন রাজ্যে ধর্মীয় সহিংসতা বেড়েছে। ২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার পর থেকে শত শত রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে।
সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশটির কর্তৃত্ব কার্যত সু চি’র হাতে এসে পড়ার পর তিনি বৌদ্ধ এবং সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের সংঘাতের সমাধানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
অক্টোবরে ‘রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের’ হামলার অভিযোগে আর্মি অভিযানের পর রাজ্যটিতে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু ২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের পুনরাবৃত্তি সিতোয়ে’তে ঘটেনি।
রাখাইন রাজ্যে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না মিয়ানমার সরকার। দেশটির অনেকেই তাদের বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী বলে মনে করে।