জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেছেন: বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে এখনো সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।
তিনি জানান: মিয়ানমার সরকারের নেয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি নানা ধরনের বিদ্রোহী গ্রুপগুলো সক্রিয় হওয়ায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন: কফি আনান কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হলে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।
‘বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে জাতিসংঘ। এজন্য মিয়ানমারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের সাথে আলোচনা চলমান রয়েছে।’
আগামী বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গাদের চরম ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে গ্রান্ডি আরও বলেন: রোহিঙ্গারা যতদিন থাকবে ততদিন জাতিসংঘ বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
গ্রান্ডি আরও বলেন: রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরিয়ে যাওয়ার পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। বেশ কিছুদিন ধরে রাখাইন আর্মির সাথে সে দেশের সেনাবাহিনীর সহিংসতা জোরালো হয়েছে। এ কারণে রাখাইনে এখন রোহিঙ্গারা নিরাপদ নয়। বিশেষ করে স্বাধীনভাবে চলাফেরার করার মতো পরিবেশ নেই। আমি মিয়ানমার সফর করব, তখন মিয়ানমারের সাথে এই বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরব। কারণ রোহিঙ্গাদের অবশ্যই রাখাইনে ফিরে যেতে হবে।
শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার শহরের কলাতলী সায়মন বিচ রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে ইউএনএইচসিআর, আই ও এম এবং ওছো এর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় ফিলিপ্পো গ্রান্ডি ছাড়াও জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (হিউম্যান অ্যাফেয়ার্স) মার্ক লোকক ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর মহাপরিচালক এন্তোনিও ভিতোরিনো উপস্থিত ছিলেন।
এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর মহাপরিচালক এন্তোনিও ভিতোরিনো বলেন: আগামী বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গারা যাতে ঝুঁকিতে না পড়ে সেজন্য কাজ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাহায্য সংস্থাকে রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার আহবান জানান তিনি।
এর আগে সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘের ‘ইউএনএইচসিআর’, ‘আইওএম’সহ আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থার এই ৩ প্রধান। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী-২ এর ১১ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
এসময় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী ‘ডাব্লিউএফপি’ এর বিভিন্ন খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এছাড়াও উখিয়ার ১১, ১৭ ও ১৮ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের সাথে কথা বলেন।
গত বৃহস্পতিবার দুই দিনের কক্সবাজার সফরে এসে বিকেল তিনটার দিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌছান এবং বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার ত্রাণ ও রোহিঙ্গা শরণার্থী কমিশনারের সাথে পৃথক বৈঠক করেন ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
প্রতিনিধি দলটির সব সদস্য বিকেল সাড়ে ৪ টায় কক্সবাজার ত্যাগ করলেও ফিলিপ্পো গ্রান্ডি কক্সবাজার অবস্থান করছেন। শনিবার তার কক্সবাজার ত্যাগ করার কথা রয়েছে।