মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা নেতারা বেশ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন করার চেষ্টা করছেন।
তাদের এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্প থেকে মিয়ানমারে ফিরে যাবেন না বলেও রয়টার্সকে জানিয়েছেন তারা। কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রোহিঙ্গাদের দাবির মধ্যে রয়েছে: ১. রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ঘোষণা। মিয়ানমারের স্বীকৃত জাতিগোষ্ঠীর তালিকাতে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করা। ২. উচ্ছেদে বাধ্য হওয়া নিজেদের সেই জায়গা, বাড়িঘর ফিরিয়ে দেয়া। ৩. হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের বিচার। ৪. কারাগারে আটক ‘নিরপরাধ’ রোহিঙ্গাদের মুক্তি। ৫. রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া তালিকা সরিয়ে নেওয়া।
তবে রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন, তাদের এই স্মারকলিপি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। স্মারকলিপি চূড়ান্ত হলে তা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের কাছে তা তুলে ধরা হবে। তাদের দাবি, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ৪০টি গ্রামের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন তারা।
গত আগস্ট থেকে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে ধর্ষণ, অগ্নিকাণ্ড, হত্যা সহ মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয় তারা। এর আগে থেকেই কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল।
গত ১৬ জানুয়ারি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে আগামী সপ্তাহে শুরু করে দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ২৩ জানুয়ারি থেকে ফিরিয়ে নেয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের এই অস্থিতিশীল সময়ে ফেরত পাঠানো হবে অন্যায় এবং অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত বলে ইতোমধ্যে মন্তব্য করেছেন অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রধান জেমস গোমেজ। তবে দ্য ডিপ্লোম্যাট নামে একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন: বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য যতটুকু করা সম্ভব করবে, এবং তাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গেও কাজ করবে। কিন্তু বাংলাদেশকে অবশ্যই আগে নিরাপদ রাখতে হবে। মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য সারাদেশ উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব নয়।
জয় বলেন, এর আগে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চালানো হয় আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) আক্রমণের অভিযোগ তুলে। বলা হয় তারা আইএস ও আল কায়েদার সঙ্গে যুক্ত, যদিও আরসা বরাবরই এসব প্রত্যাখ্যান করে আসছে এই বক্তব্য দিয়ে যে তারা রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তাপ্রধানরা সেই ব্যাপারটিও মাথায় রাখছে যেন রোহিঙ্গা স্রোতের সঙ্গে কোনো সশস্ত্র আরসা সদস্য বাংলাদেশে না ঢুকে পড়ে। এসব কারণেই সারাদেশে রোহিঙ্গাদের অনু্প্রবেশে স্বাধীনতা দিতে পারছে না বাংলাদেশ। সরকার সেটাও নিশ্চিত হতে পারছে না যে, কোনো সন্ত্রাসী সীমান্তে কোনো আক্রমণের পরিকল্পনা করছে কিনা। বিশেষ করে বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের বিষয়টাও দেখতে হচ্ছে।
২০১৫ সালে বাংলাদেশের প্রবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা তুলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, তারপরও বাংলাদেশ কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ নয়। রোহিঙ্গাদের কিছুদিন সাহায্য করা সম্ভব। তাই বলে সারাজীবনের জন্য নিলে, সেটা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো পেছনে টেনে ধরবে।
বাংলাদেশের কোনো অভিবাসন নীতিও নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ চাহিদা ও মানবিক সহায়তা প্রদানের মধ্যে বেশ ভালো সমতা এনেছে।