হারলেই টুর্নামেন্ট শেষ। এমন সমীকরণে নেমে শাদাব খানের ঝড়ো ফিফটিতে ১৪৪ রানের মাঝারি পুঁজি তুলেছিল ঢাকা প্লাটুন। সেটি সহজেই টপকে গেল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। সঙ্গে পৌঁছে গেল কোয়ালিফায়ারে।
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার এলিমিনেটরের ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৪ রান তোলে ঢাকা প্লাটুন। গেইল-মাহমুদউল্লাহদের সামনে সেটি বড় পরীক্ষা হতে পারেনি। জবাব দিতে নেমে ১৪ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখে জয়ে নোঙর ফেলেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
এই জয়ে ফাইনালে যাওয়ার আরেকটি সুযোগ পেল চট্টগ্রাম। তাদের পরের পরীক্ষা দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে। প্রথম কোয়ালিফায়ারে হেরে আসা দলের বিপক্ষ। যে ম্যাচে সোমবারই লড়বে খুলনা টাইগার্স ও রাজশাহী রয়্যালস। যাদের মধ্যকার বিজয়ী দল সরাসরি ফাইনালে চলে যাবে। বাকি দল দ্বিতীয় সুযোগে লড়বে চট্টগ্রামের বিপক্ষে। আর ঢাকার টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেল।
লক্ষ্য তাড়ায় এসে ঝড়ো শুরুই পায় চট্টগ্রাম। ওপেনিংয়ে আসা জিয়াউর রহমান দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দেন ক্রিস গেইলকে সঙ্গী করে। ৩২ বলে আসে ৪২ রানের জুটি। যাতে ২৫ রান জিয়ার। ৩ চার ও ২ ছয়ে ১২ বলে সাজানো।
গেইল এদিন আগাগোড়াই ধীর। তবে কার্যকরী সব জুটির সঙ্গী। ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ক্যারিবীয় বাঁহাতির পরের জুটিটি ৪৯ রানের। যার ৩২-ই ইমরুলের। দারুণ বল করতে থাকা মাশরাফীকে টানা দুই ছক্কা হাঁকানো বাঁহাতি ওপেনারের ইনিংসটি ৩ ছয়ের সঙ্গে এক চারে ২২ বলে সাজানো।
ইমরুলের কিছুপরই ফিরে যান গেইল। শাদাবের বলে লেগ-গালিতে মাশরাফীর এক হাতের ক্যাচ হয়ে। ফেরার আগে এক চার ও ২ ছয়ে নামের সাথে বেমানান স্ট্রাইকরেটে ৪৯ বলে ৩৮ করে গেছেন।
বাকি কাজটুকু সারের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও চ্যাডউইক ওয়ালটন। দুজনে অবিচ্ছিন্ন ৪৫ রানের জুটি গড়েন। মাহমুদউল্লাহ ৪ ছয়ে ১৪ বলে ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ওয়ালটন ১০ বলে ১২ রানে।
ঢাকার হয়ে রান চেপে ধরা বল করে ২০ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী। শাদাবের নামের পাশে ২ উইকেট।
আগে তামিম ইকবালকে (৩) হারানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল ঢাকার পতনের। রুবেল হোসেন যখন তামিমের স্টাম্প ভেঙে দেন, তখনও শঙ্কার মেঘ জমেনি তাদের তারকাখচিত ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে।
পরে শুধু আসা-যাওয়ার মিছিল চলেছে প্লাটুন ব্যাটসম্যানদের। তাদের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের পাঁচজন দুঅঙ্কের ঘর ছুঁতে পারেননি। যার তিনজন আবার রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
এনামুল হক বিজয়, লুইস রেইস ও জাকের আলি নামের পাশে কোনো রান যোগ করতে পারেননি। তামিম ৩ ছাড়া প্রথম ছয়ের মধ্যে ইনফর্ম মেহেদী হাসান ৭ রানে ফিরেছেন। পরে আসিফ আলির অবদান ৫ রান।
ওপেনিংয়ে ব্যতিক্রম হয়ে ছিলেন গত ম্যাচেই ঝড় তোলা আরেক ইনফর্ম মুমিনুল হক। বাকিদের আসা-যাওয়ার চাপে তার রানের গতিতেও লাগাম পড়ে যায়! সাবলীল থেকেও ৩১ রানের বেশি অবদান রাখতে পারেননি। ৩ চার ও এক ছক্কায় ঠিক ৩১ বলের ইনিংস।
ঢাকা যে এরপরও চ্যালেঞ্জিং একটা সংগ্রহে গেল, তাতে অবদান দুই বিদেশির। শাদাব খান ও থিসারা পেরেরা একশ পার করিয়েছেন। ৩ চার ও এক ছয়ে ১৩ বলে ২৫ করে ফেরেন পেরেরা।
শাদাব শেষঅবধি ছিলেন। দলকে দেড়শর কাছে নিয়ে যান। তার ৫ চার ও ৩ ছয়ে ৪১ বলে ৬৪ রানের ইনিংসটা ম্যাচজয়ী হতে পারেনি সতীর্থ বোলাররা জ্বলে উঠতে না পারায়। শাদাব নিজেও বল করেন, লেগস্পিনে ভেল্কি দেখিয়েছেন, নিয়েছে ২ উইকেট।
গত ম্যাচে ক্যাচ নিতে যেয়ে হাতে ১৪ সেলাই লাগা মাশরাফী এদিন খেলছেন। ব্যাটিংয়েও নেমেছিলেন। ২ বল খেলে রান নিতে পারেননি। শাদাবকে স্ট্রাইক দেয়াই ছিল তার আসল কাজ, সেটা ভালোভাবেই করেছেন। ১৯তম ওভারের শেষ বলে এক রান না নিয়ে শেষ ওভারের জন্য শাদাবকে স্ট্রাইকে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন। জিয়ার করা ওই ওভাবে ২৩ রান তুলে ম্যাচ জমিয়েছেন শাদাব।
চট্টগ্রামের হয়ে রায়াদ এমরিত ২৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন রুবেল হোসেন ও নাসুম আহমেদ। এক উইকেট মাহমুদউল্লাহর ঝুলিতে।
মাশরাফীর ১৪ সেলাই নিয়ে খেলা, ইমরুলের হাতে দুই ছয়, আর জিয়ার হাতে এক ছয় খাওয়ার পরও দারুণ বল করা, এক হাতে ক্যাচ নেয়া, অধিনায়কের এই দৃঢ় মনোভাবের ম্যাচে ব্যাটিংয়ের টপ-মিডল অর্ডারের সতীর্থরা কেউ অনুপ্রাণিত হতে পারেননি, পারলেন না বোলাররাও। তাতে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে যাত্রা শেষ ঢাকার!