যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা, যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা…। যুদ্ধ শুধু দুজনকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না। সার্বিকভাবে সারাবিশ্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যার শিকার হয় পৃথিবীর সাধারণ মানুষ। নিরীহ দেশ।
সুদূর রাশিয়া আর ইউক্রেন যুদ্ধের দামামাতে বড় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার খবরে গতকাল বৃহস্পতিবার সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় দরপতন ঘটেছে শেয়ারবাজারে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০৯ পয়েন্ট বা দেড় শতাংশ কমে গেছে। চলতি বছরের মধ্যে এখন পর্যন্ত এটিই ডিএসইএক্স সূচকের সর্বোচ্চ পতন।
এমনিতে কয়েক দিন ধরে শেয়ারবাজারে মন্দাভাব চলছিল। বিনিয়োগকারীদের ঋণাত্মক ঋণ হিসাবকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সমন্বয়ের নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে বাজারে একটি গোষ্ঠী সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। সেই আতঙ্কের সঙ্গে গতকাল নতুন করে যুক্ত হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তাতেই আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা হুজুগে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন। ফলে এদিন বাছবিচার ছাড়া লেনদেন হওয়া অধিকাংশ শেয়ারেরই দরপতন ঘটে।
শেয়ারবাজারে লেনদেনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত শীর্ষস্থানীয় একাধিক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা জানায়: বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের আতঙ্ক ভর করেছে। এ কারণে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিনিয়োগকারীরা হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দেন। বিশ্বের বড় বড় শেয়ারবাজারের বড় ধরনের দরপতনের খবরে সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের মতো এ দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।
ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন হওয়া ৩৭৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩২৬টি বা সাড়ে ৮৬ শতাংশেরই দাম কমেছে। বেড়েছে মাত্র ৩০টি বা ৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম আর অপরিবর্তিত ছিল ২১টির বা সাড়ে ৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম। তবে বড় পতনের দিনে আগের দিনের চেয়ে লেনদেন ১৬২ কোটি টাকা বেড়ে আবারও হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
অন্যদিকে শেয়ারবাজারে কয়েক দিন ধরে ঋণাত্মক ঋণ হিসাব নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের শঙ্কা বিরাজ করছে। আর কম দামে শেয়ার কিনতে এ শঙ্কাকে একটি গোষ্ঠী কাজে লাগাচ্ছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ কেউ। সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের ঋণাত্মক ঋণ হিসাবগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয়।
বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, শেয়ারবাজারের ৭৫ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কোনো ঋণাত্মক ঋণ হিসাব নেই। মাত্র ২৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের হিসাব রয়েছে। তার মধ্যে আবার ১০০ কোটি টাকার বেশি ঋণাত্মক ঋণ বা নেগেটিভ ইক্যুইটি রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ২৭।
তাই ঋণাত্মক ঋণ হিসাব সমন্বয় করতে হলে বিপুল শেয়ার বিক্রির যে আতঙ্ক বাজারে তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবভিত্তিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠী পুরো বিষয়টি ভালোভাবে পর্যালোচনা না করে ভুলভাবে বাজারে ছড়িয়েছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর সুযোগসন্ধানীরা কম দামে সেসব শেয়ার কিনে নিচ্ছেন। সেই কারণে দেখা গেছে, গতকাল বড় ধরনের পতন হলেও লেনদেন বেড়েছে।
যুদ্ধ মানে সবদিকে দিয়েই সর্বাত্মক নেতিবাচক প্রভাব। বিশেষ করে যেসব উন্নয়নশীল দেশ তাদের সীমিত অর্থনীতির মধ্যে টিকে আছে তাদের অবস্থা মারাত্মক খারাপ হয়। এমনকি কোনো কোনো দেশে দুর্ভিক্ষ লেগে যায়। সর্বশেষ পুঁজিবাজারে এই দরপতনের প্রভাব নিত্য পণ্য বাজারেও দ্রব্যমূল্য লাগামহীন হতে পারে। আমরা আশা করি সরকার এইসব বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে এবং বাইরের যুদ্ধের কারণে যাতে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে না পড়ে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে।