নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম পায়ে হেঁটে চলা মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি এক উপজেলা হতে অন্য উপজেলায়, এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পায়ে হেঁটে চলাচল করেন।
ট্রেন ছাড়া সচরাচর বাসে ওঠেন না নূরুল ইসলাম। ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশনে নেমে পায়ে হেঁটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ন্যাম ভবন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় এবং বিভিন্ন সংসদ সদস্যের বাসায় কিংবা অফিসে যান তিনি। কেউ নূন্যতম গুরুত্ব দেন, কেউ দেন না। তার আলাপচারিতায় ওঠে আসে নানা ক্ষোভ ও বেদনার কথা।
১৩ জানুয়ারী দিবাগত রাতে তার একটি গরু চুরি হয়। থানায় এজাহার করেছেন কিন্তু কোনো পুলিশী তৎপরতা নেই। তিনি বলেন, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক গরু চুরি হচ্ছে। আমি থানায় অভিযোগ করেছি। তার অনুলিপি প্রেরণ করেছি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মহাপুলিশ পরিদর্শক, পুলিশ সুপার, নেত্রকোনা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মোহনগঞ্জ বরাবরে। কিন্তু অদ্যাবধি গরু চুরি প্রতিরোধে পুলিশ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে তার পুত্র মহিউদ্দিন কাদের খানকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তির জন্য আবেদনে সুপারিশ করেন তৎকালীন ডেপুটি স্পীকার শওকত আলী, নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন, নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতিয়র রহমান খান প্রমুখ। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে ভর্তির জন্য বিশেষ সুপারিশপত্র প্রদান করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মহাসচিব এমদাদ হোসেন মতিন। কিন্তু কোনো সুপারিশকেই গুরুত্ব দেননি ক্যাডেট কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান আশরাফ আব্দুল্লাহ ইউসুফ। তার সন্তান ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারেনি।
মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলামের মেয়ে আঞ্জুমান আরা খানম প্রাক প্রাথমিক শিক্ষিকা পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে তাকে চাকরি দেয়ার বিশেষ সুপারিশ করেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি, নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বরাবরে তাকে চাকরি দিতে ডিও লেটার প্রদান করেন নেত্রকোনা-১ আসনের এমপি ছবি বিশ্বাস। কোনো সুপারিশেই তার কোনো উপকারে আসেনি।
নূরুল ইসলামের এই ক্ষোভ আর বেদনার কথা তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চান। সাক্ষাতের সুযোগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন না করলে আজকে যারা আমাদের অবমূল্যায়ন করছে উঁচু চেয়ারে বসে, তারা এই উঁচু চেয়ারে বসার সুযোগ পেতো না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলামকে অনেকেই বলেন পাগলা মুক্তিযোদ্ধা। দারিদ্র্য পীড়ন, অনাদরে অবহেলায় ও সন্তানদের ইচ্ছা পূরণের ব্যর্থতায় প্রতিমুহুর্ত দংশিত হচ্ছেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তিনি পাচ্ছেন না নূন্যতম নাগরিক অধিকার।
পদব্রজী এই মুক্তিযোদ্ধা হেঁটে চলেছেন নিরন্তর। পায়ে হেঁটে চলার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, মন্ত্রী, এমপি, সচিবদের গাড়ির ফিটনেস আছে ও দক্ষ ড্রাইভার আছে। সাধারণ মানুষদের জন্য চলা গাড়িগুলো ফিটনেসবিহীন ও অদক্ষ ড্রাইভার পরিচালিত। আমি এজন্যই বাসে উঠতে রাজি না। পায়ে হাঁটাই নিরাপদ ভাবি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)