২০১৬ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালে বোলিং অ্যাকশন সমস্যায় বাদ পড়ে দেশে ফিরতে হয়েছিল আরাফাত সানিকে। অ্যাকশন শুধরে বোলিং নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরলেও বাংলাদেশ ’এ’ দলে পর্যন্ত জায়গা হয়নি পরের লম্বা সময়ে। এমন পরিস্থিতির মুখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার আশাটা ছেড়েই দিয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার।
তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকতাই ফিরিয়ে এনেছে আরাফাত সানিকে। জাতীয় লিগের চলতি আসরের প্রথম রাউন্ডে চট্টগ্রামের বিপক্ষে ঢাকা মেট্রোর এ স্পিনারের প্রথম ইনিংসে বোলিং (৬/৮৭) মনে ধরেছে নির্বাচকদের।
৪৩ মাস আগে যে ভারত সফরের পর রুদ্ধ হয়েছিল জাতীয় দলের দরজা। সেই ভারত সফরের মধ্য দিয়েই আবারও জাতীয় দলের দরজা খুলে গেছে ৩৩ বছর বয়সী স্পিনারের। এমন প্রত্যাবর্তনে অবাক হয়েছেন সানি নিজেও।
এদিকে, শুক্রবার সকালেই টাইগারদের নতুন স্পিন বোলিং কোচ পা রেখেছেন ঢাকায়। মাঝে কিছুটা সময় হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে বিকেল না গড়াতেই চলে যান মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। তবে প্রথমদিনে শিষ্যদের নিয়ে তেমন কোনো কাজ করেননি ড্যানিয়েল ভেট্টরি। দেখেছেন বাংলাদেশের স্পিনারদের বোলিং।
ভেট্টরি পরবর্তী অনুশীলনের সময় হয়তো নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন সাকিব-সানিদের সঙ্গে। সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানান প্রায় তিন বছর পর জাতীয় দলে ফেরা বাঁহাতি আরাফাত সানি। মুখিয়ে আছেন ভারতের মাটিতে খেলা ও কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা জানতে। বিশেষ করে আইপিএলের।
এদিন অনুশীলনে ছিলেন না দলের সেরা বাঁহাতি স্পিনার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আরাফাত সানি ও তরুণ লেগস্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বোলিং দেখেছেন ভেট্টরি। একেবারেই যে দেখেছেন তাও নয়, মাঝে মধ্যে টুকটাক কিছু পরামর্শও দিয়েছেন কিউই কিংবদন্তি। সানির ভাষায়, ‘আজকে যেহেতু প্রথমদিন, সবাইকে শুধু দেখেছে। তেমন কোনো কথা হয়নি। হয়তো কাল (শনিবার) এটি নিয়ে কথা বলবো বা পরবর্তী যেদিন অনুশীলন হবে সেদিন হয়তো আলোচনা করা হবে।’
ভেট্টরির অভিজ্ঞতা জানতে পারলে ভারত সফরে ভালো কিছু করা সম্ভব বলেই মনে করছেন সানি, ‘একজন বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে সবসময় আমরা ওর বোলিংটা অনুসরণ করতাম। যেহেতু উনি একজন সেরা স্পিনার বাঁহাতিদের মধ্যে। সে এখন আমার কোচ। আজকে তো প্রথমদিন। দেখা যাক অনুশীলন তো আরও আছে। দলের সঙ্গে আছি, তার সঙ্গে শেয়ার করবো কীভাবে কী করা যায়। তার অভিজ্ঞতা রয়েছে অনেক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলোয়াড় তো ছিলেনই, আইপিএলেও কোচিং করিয়েছেন। তার সঙ্গে কথা বলে আরও ভালো পারফরম্যান্স করতে পারবো। তার সঙ্গে শেয়ার করলে হয়তো আরও উন্নতি সম্ভব হবে।’
ভারতের ব্যাপারে ভালো থাকায় এই সফরে ভেট্টরি দারুণ ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করেন সানি, ‘আসলে কোন উইকেটে কেমন বোলিং করতে হবে সেটা জানা জরুরী। ভারতে কিন্তু অনেক ম্যাচ খেলেছেন তিনি, কোচিংও করাচ্ছেন। তাই উইকেটটি কিন্তু আমাদের চেয়ে সে অনেক ভালো জানে। কোন উইকেটগুলো কীরকম হতে পারে, কীভাবে বোলিং করলে বেটার পারফর্ম করা যায় সেদিক থেকে এই জিনিসগুলোর ব্যাপারে আমি ধারণা নেয়ার চেষ্টা করবো।’
সানি কথা বলেন তার দলে ডাক পাওয়া নিয়েও, ‘অবশ্যই সারপ্রাইজ ছিলাম। তবে আরেকটি জিনিস ঠিক ছিল যে, গত তিন বছর কিন্তু ভালো ক্রিকেট খেলছিলাম। লক্ষ্য ছিল আমার সেরা পারফর্মটা করার, এরজন্য হয়তো আমাকে বিবেচনা করেছে।’
দলে ডাক পাওয়াকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছেন সানি, ‘খেলাটি সবসময় চ্যালেঞ্জিং ছিল। এখনো আছে, এটা চ্যালেঞ্জেরই একটি খেলা। খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের কাজ হচ্ছে চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেলাটি এগিয়ে নেয়া। আমাদের যে ব্যক্তিগত পরিকল্পনা আছে নিজেদের ডিপার্টমেন্ট থেকে, যেহেতু আমি বাঁহাতি স্পিনার তাই কীভাবে রান চেক দিয়ে উইকেট টু উইকেট বোলিং করবো বা উইকেট বের করার জন্য অবশ্যই সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি।’
যে ভারত সফরের পর পথ রুদ্ধ হয়েছিল আবার সেই ভারতেই শুরু নিয়ে সানি বলেন, ‘তিন বছর আগে আমি ভারতে বোলিং অ্যাকশনের কারণে বাদ পড়েছিলাম, এবার সেখানে আবার সফর করছি। অবশ্যই নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করবো যেহেতু অনেকদিন পর আমি সুযোগ পেয়েছি। আমার আগের জায়গাটা ধরে রাখার জন্য যা যা করার দরকার সেটাই করবো।’
ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ জিততে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সানির জবাব, ‘অবশ্যই আমরা জেতার জন্য যাচ্ছি। অবশ্যই আমাদের সেরাটা দিতে হবে। প্রথম তিনটি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ। এটা নিয়েই কাজ করছি। সবারই লক্ষ্য থাকে ম্যাচ জেতা। আমাদের পরিকল্পনাও আছে ম্যাচ জেতার।’