১৯৪৭ সালে ১৪ ও ১৫ আগস্ট ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়েছিল। তারপর থেকে দুটি দেশের মধ্যে কয়েকটি যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে প্রায় সব যুদ্ধই কাশ্মীর সমস্যাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে।
কাশ্মীর দু’ভাগে বিভক্ত। এক অংশে ভারতীয় শাসন অন্য অংশ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রায় ৫০ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। স্বাধীন কাশ্মীরের জন্য তারা লড়ছে। ভারত শুরু থেকে দাবি করে আসছে কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পাকিস্তান মদদ দিয়ে আসছে। এই নিয়ে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা এখন ঐতিহাসিক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
১৯৯৯ সালের মে-জুলাই মাসে কাশ্মীরের কার্গিল জেলায় ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বশেষ যুদ্ধ হয়। তবে যুদ্ধ চলাকালীন ও যুদ্ধের অব্যবহিত পরে পাকিস্তান এই যুদ্ধের দায় কাশ্মীরি স্বাধীনতাপন্থীদের ওপর চাপিয়ে দেয়। এর মাঝে ভারত পাকিস্তান সম্পর্ক সামান্য উন্নতি হলেও উত্তেজনা বরাবর থেকে যায়।
গত বৃহস্পতিবার পুলওয়ামাতে বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে ভারতের সিআরপিএফের গাড়ি বহরে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। এতে বহরের ৭০টি গাড়ির মধ্যে একটি বাস সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়ে যায়। প্রাণ হারায় বাহিনীর অন্তত ৪৯ সদস্য।
হামলার পর জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ ঘটনার দায় স্বীকার করে দেয়া বিবৃতিতে জানায়: ‘তাদের হয়ে পুলওয়ামারই বাসিন্দা আদিল আহমেদ দার ওই হামলা চালিয়েছে।’ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে কাশ্মীর পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
কাশ্মীরের ভয়াবহ হামলা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার সময় শেষ হয়েছে। এখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সময়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ইতোমধ্যে দাবি করেছে তাদের বিমান বাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে ১০০০ কেজি বোমা বর্ষণ করে জঙ্গিদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। পাকিস্তান যথারীতি এই দাবি নাকচ করে দিয়েছে। আজকে পাকিস্তান দাবি করেছে তারা দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে এবং একজন পাইলটকে আটক করেছে।
এখন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের উত্তেজনা আরও বেড়ে গেল, যদিও বারবার আমরা এই দু’দেশের হুমকি পাল্টা হুমকি দেখেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্ততায় বড় কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। এবার উত্তেজনার পারদ লক্ষ্য করছি একটু বেশি মাত্রায়। দুই দেশের সর্বাত্মক যুদ্ধ সম্ভবত এখন সময়ের ব্যাপার।
ভারত পাকিস্তানের এই ঐতিহাসিক বিরোধ নিয়ে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের যথাযথ কূটনৈতিক ভূমিকার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। আমরা কোনো মানুষের প্রাণহানী কামনা করি না। আমরা মনে করি, যুদ্ধের নামে লক্ষ লক্ষ নিরাপরাধ ও নিরীহ মানুষের মৃত্যু কোনো সভ্যতার জয়ধ্বনি দেয় না।
‘যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা, যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা…’ কবির এই বাণীই আসলে শ্বাশত। তাই আমরা চাই, শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার জরুরি সমাধান।