‘ব’ তে বাংলা, ‘ব’ তে বাবা। আমাদের সংস্কৃতিতে বাবাকে নিয়ে তেমন লেখালেখি হয়না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাবার সাথে সম্পর্কটা একটু দূরের হয়। বাবার রাগ আর গাম্ভীর্য চোখে পড়লেও তার ভেতরের ভালোবাসা উপলব্ধি করার বয়সে অনেকেই বাবাকে হারিয়ে ফেলে। কিন্তু যে শিশুটির বয়স মাত্র ছয় বছর, সে কি বোঝে বাবা কী?
উইলস লিটিল ফ্লাওয়ার স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী মুবাশ্বিরা ইসলাম অপ্সরা। অন্য আরো অনেকের মত অপ্সরাও নিজের হাতে বাংলা বর্ণ তৈরি করেছে বর্ণমেলায় প্রদর্শনের জন্য। কিন্তু সবার থেকে তার অনুভূতিটা একদম আলাদা। কারণ মাত্র ৬ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে ফেলেছে সে। ছোট্ট অপ্সরা তার প্রয়াত বাবার ছবি দিয়ে ‘ব’ বর্ণ তৈরি করেছে। বাবার জন্য তার এই অনুভূতির গভীরতা স্পর্শ করেছে মেলার দর্শনার্থীদেরও।
মেলায় আরও অনেক কিশোর-কিশোরীর তৈরি বর্ণমেলা প্রদর্শন করা হয়েছে। ক্ষুদে হাতের ভালোবাসায় গড়া এই বর্ণগুলো মেলার অন্যতম আকর্ষণ। দর্শনার্থীদের অনেকেই সেগুলো সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন।
নানান উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে বর্ণ তৈরিতে। ‘ঘ’ তে ঘুড়ি, ঘুড়ির উপরেই ছবি এঁকে প্রদর্শিত হয়েছে। আবার বল দিয়েই ‘ব’ তৈরি করা হয়েছে। রঙবেরঙের কাগজের ফুল দিয়ে ‘ফ’ লেখা হয়েছে। আবার পাথর, নকশি ফোঁড়, নকল নখ, সিগারেট, কলম ইত্যাদি নানান উপকরণ দিয়ে বর্ণগুলো তৈরি করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আয়োজিত হচ্ছে বর্ণমেলা। নতুন প্রজন্ম জানছে বাংলা ভাষার ইতিহাস এবং তাৎপর্য। মোহাম্মদপুরের ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে আয়োজিত এই মেলা উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। বর্ণমেলায় মাঠজুড়ে দিনভর ছিল শিশুদের তৈরি বর্ণ, নাগরদোলা, বইয়ের দোকান, নানা ধরনের খেলার আয়োজন। ছিল প্রথমা, কিআ আর বিজ্ঞানচিন্তার স্টল। এছাড়াও ছিল গানের অনুষ্ঠান, সিসিমপুরের দল, পুতুল নাচের নানান চরিত্র।