চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘ব্ল্যাকমেল’ করে টাকা আদায় করতে শিশু খুন

নিজের স্ত্রী কিডনির সমস্যা জনিত রোগে আক্রান্ত থাকায় দিশেহারা রিকশাচালক মো. সেলিম (৩২)। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য টাকা প্রয়োজন, পরিচিত এক বাড়িওয়ালা বাবুলের স্ত্রীর কাছে টাকা চান। টাকা না পেয়ে খুনের পরিকল্পনার আশ্রয় নেন তিনি। বাবুলের বাড়ির ভেতরে লাশ রেখে ‘ব্ল্যাকমেল’ করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করবেন সেলিম।

পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থানীয় জিসানুল ইসলাম ওরফে আকাইদ নামের পাঁচ বছরের একটি শিশুকে অপহরণ করে বাবুলের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে শিশুটিকে হাত-পা বেঁধে তাকে ক্ষুর দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন সেলিম। তারপর বাবুলের বাড়িতে শিশুটির লাশ রেখে পালিয়ে যান তিনি।

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অপহরণ করে হত্যার তিন দিন পর জিসানুল ইসলাম আকাইদ (৫) নামে একটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহটি উদ্ধারের পর সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আসামি সেলিমকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ার একটি নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে শিশুটির গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে শিশুটির বাবাসহ অন্যান্য স্বজনদের ডেকে পরিচয় শনাক্ত করা হয় তার। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় প্রথমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে খিলগাঁও থানায় অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন শিশুটির বাবা আব্দুল মালেক।

অন্যদিকে, আসামি সেলিমকে (৩২) গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই মামলাটি পেনাল কোডে সংযোজন করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

আসামি সেলিমের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার লেসপ্রতাপ বয়াতিবাড়ি গ্রামে। সে পেশায় একজন রিকশাচালক। স্ত্রীসহ রাজধানীর সবুজবাগ থানার শান্তিপাড়া এলাকায় বসবাস করতো সে। অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতেই পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাটি করে সে, এমনটি জানিয়েছে পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগ উপ-পুলিশ কমিশনার আ. আহাদ এ প্রসঙ্গে জানান, খিলগাঁও থানার নন্দীপাড়া এলাকার নুর মসজিদ এলাকায় বসবাস করেন মামলার বাদী মো. আব্দুল মালেক (৩৩)। গত ৬ আগস্ট দুপুর ৩টার দিকে বাসার সামনে পাঁচ-ছয়জন বাচ্চার সঙ্গে খেলতে যায় তার ছেলে জিসানুল ইসলাম আকাইদ। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিল সে। বিকেলে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি তার। ওইদিন রাতেই বিষয়টি নিয়ে খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন আব্দুল মালেক।

এরই মধ্যে স্থানীয়দের মাধ্যমে মালেক জানতে পারেন, এক রিকশাচালক দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে তার ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় নুর মসজিদের দিকে নিয়ে যায়।

পরে ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকা থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা যায় অজ্ঞাতনামা রিকশাচালক অপহৃত শিশুটিকে রিকশায় নিয়ে যায়।

এরপর সোমবার নূর মসজিদ গলি এলাকার পাঁচতলা ভবনের দোতলায় একটি বাচ্চার মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে প্রাথমিকভাবে তা আকাইদের হতে পারে বলে ধারণা করে পুলিশ। পরে বাচ্চাটির প্যান্ট দেখে মরদেহ শনাক্ত করে বাবা আব্দুল মালেক।

এরপরই খিলগাঁও থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মো. সেলিমকে (৩২) আটক করে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সে। অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য এ কাজ করে বলেও জানায় সে।

তিনি আরও জানান, বাবুল নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তার রিকশাতে শিশুটিকে নিয়ে যায় সেলিম নামে ওই ব্যক্তি। এরপরই শিশুটিকে হত্যা করে সে। গত ৭ আগস্ট তার বাবুল নামে ওই ব্যক্তির বাসা পরিষ্কার করা কথা ছিল। বাড়ি পরিষ্কারের সময় শিশুটির মরদেহ পাওয়া গেলে বাবুলের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করবে, এমন পরিকল্পনা ছিল বলেও পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে সে। তবে বাড়ি পরিষ্কার করতে না ডাকায় তার পরিকল্পনাটি ভেস্তে যায়।

অন্যদিকে, সোমবার সকালে বাবুলের বাড়ি থেকে পচা গন্ধ বের হলে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এদিকে, অপহরণের কাজে ব্যবহৃত রিকশা, অপরহণের সময় অপহরণকারীর পরিহিত টিশার্ট ও লুঙ্গি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ক্ষুর জব্দ করেছে পুলিশ।