প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সিলেট সফরকে মূলত রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে সেখান থেকেই প্রাক-নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও।
তাদের পর সোমবার সকালে সিলেটের উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন খালেদা জিয়া। সেখানে হযরত শাহজালাল এবং হযরত শাহ পরানের মাজার জিয়ারত করবেন তিনি।
এই সফর নির্বাচনী সফর কি না- রোববার বিএনপির মুখপাত্র ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে এমন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
তিনি এর সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা কিংবা এরশাদ; তাদের সফর তাদের মতো। কে কি করছে তা দেখে বেগম জিয়া কিছু করেন না। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ। প্রায়ই হযরত শাহজালাল ও শাহ পরানের মাজার জিয়ারত করতে যান। এটিও তেমনই একটি সফর।
সর্বশেষ প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে সিলেট গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তাই এতদিন পর এ সফরকে নিয়ে সিলেট ও এর আশেপাশের জেলাগুলোতে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে একরকম সাজ সাজ রব উঠেছে।
দলীয় প্রধানকে কিভাবে নেতাকর্মীরা সিলেটে স্বাগত জানাবেন? বা কি কি কর্মসূচি রয়েছে? জানতে চাইলে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা অধীর আগ্রহের সাথে দলীয় প্রধানের জন্য অপেক্ষা করছি। বেগম খালেদা জিয়া গণমানুষের নেত্রী। তার আগমনে সিলেটবাসী উৎসাহিত। নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যানার, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করে ম্যাডামের আগমনের কথা জানিয়ে দিয়েছি সবাইকে। মাইকিং করতে চেয়ে অনুমতি না পেলেও সিলেটবাসী জেনে গেছে যে বেগম খালেদা জিয়া আসছেন। এছাড়া আজকে সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের মাধ্যমেও তার আগমনের খবর জানিয়ে দিয়েছি। আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি মানুষের মধ্যে। আমাদের বিশ্বাস লাখ লাখ মানুষ তাকে অভ্যর্থনা জানাতে আসবেন।’
প্রধান সড়কের দুই ধারে নেতাকর্মীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে সিলেটে অভ্যর্থনা জানাবেন উল্লেখ করে নাসিম হোসাইন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যদিও কোনো পথ সভা করবেন না। তবে হাত নেড়ে জনগণের অভ্যর্থনার জবাব দিবেন।
মহানগর বিএনপির এই নেতা জানান, মাজার জিয়ারত শেষে বেগম খালেদা জিয়া সিলেট সার্কিট হাউজে রাতযাপন করবেন। ইতোমধ্যে ডিসির কাছ থেকে তার অনুমতিও নেয়া হয়েছে।
মাজার জিয়ারত ব্যতীত সিলেটে আর কোনো কর্মসূচি আছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন: ‘দলীয় প্রধান শুধু মাজার জিয়ারতই করবেন। এছাড়া আর কোনো কর্মসূচি নেই। কোনো সভা-সমাবেশ নেই।’
খালেদা জিয়ার সিলেট সফর নির্বাচনী প্রচারণার কোনো অংশ নয় বলেও দাবি করেন নাসিম হোসাইন।
গত কয়েক মাস আগে সড়ক পথে কক্সবাজার সফর করেন বেগম খালেদা জিয়া। সেই সময় ফেনীতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর হামলার শিকার হয়।
এবার সিলেট সফরে সেরকম কোন সমস্যায় পড়লে নিরাপত্তা নিয়ে কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন এমন প্রশ্নে নাসিম হোসাইন বলেন: ‘বেগম খালেদা জিয়া গণমানুষের নেত্রী। দেশের জনগণের উপর তিনি নির্ভর করেন। আমরা তাই আলাদা করে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবিনি। আমরা মনে করি, জনগণই তাকে নিরাপত্তা দিবেন।’
মাজার জিয়ারত শেষে ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার কথা রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার।
খালেদা জিয়ার সিলেট সফরকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে তাদের বাসা বাড়িতে পুলিশ অভিযান ও তল্লাশী চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
রোবরার দুপুরে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। শনিবার রাতে বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী নেতাকর্মীদের বাসায় ব্যাপকভাবে তল্লাশী চালানো হয়। এর মাধ্যমে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এই মতবিনিময় সভায় বিএনপির চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম, কেন্দ্রীয় সদস্য, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।