সব রকমের পথ্য দিয়ে ব্যাংককে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু আসলেই কি ব্যাংককে বাঁচানোর চেষ্টা, নাকি অন্য কোনো মতলব এটা?
ব্যাংকের পরিচালনা কমিটির লোকজন যে যেভাবে পারছে সরকারের সাথে কথা বলে সভা করে নিজেদের আখের গোছানোর সব রকমের ধান্দা-ফিকিরের মাধ্যমে একেকটা নিয়ম তৈরি করছে।
বেসরকারি ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) গত ২০ জুন সিদ্ধান্ত নেয় আমানতে ৬ শতাংশের বেশি সুদ দেবে না ব্যাংক। আর ঋণে ৯ শতাংশ সুদ নেবে। এটা ১ জুলাই থেকে কার্যকর শুরু হয়েছে।
কথা হচ্ছে এটা কতটা যুক্তি সংগত? যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে সেখানে বিএবি’র এই সুদ হার নির্ধারণের ক্ষমতা আইনসংগত কি? কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, ‘সুদহার নির্ধারণে বিএবি’র কোনো আইনত অধিকার নেই। সরকার এভাবে তাদের ক্ষমতায়ন করলে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিকল্প হয়ে উঠবে। তারা দানবের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ করবে, যার কিছুটা শুরু করেছে। তাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ক্ষতিতে পড়বে কয়েক কোটি আমানতকারী, আর সুবিধা পাবে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। বড় আমানতকারীরা অর্থও পাচার করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘যাদের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের বেশি, তারা নতুন এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারবে না। তারা আমানতের সুদ হার আরও কমিয়ে ও মাশুল বৃদ্ধি করে মুনাফা করার চেষ্টা করবে।’
এর মানে কি দাঁড়ালো? এই যে বিএবি নামের সংগঠনটির মূল ধান্দা হচ্ছে নিজেদের আখের গোছানো আর লুটপাট করতে সহায়তা করা। আর পক্ষান্তরে নিন্মবিত্ত ও নিন্মমধ্যবিত্তকে পথে বসিয়ে দেয়া। তারা যাতে অন্য কোথাও আমানত খাটাতে না পারে সেজন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে অর্থমন্ত্রীকে দিয়ে সঞ্চয়পত্রের ওপর খড়গ চালানোর চেষ্টা করা।
কথা হচ্ছে, কেন ব্যাংক আমানতের ওপর সুদের হার ১০ শতাংশ করতে পারছে না? যেখানে সঞ্চয়পত্রে ১১ শতাংশ পাচ্ছে ছোট ছোট বিনিয়োগকারীরা। আপনারা ঋণ দিয়ে ১২ শতাংশ সুদ নেন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছে না বলেই তো ব্যাংককে চিন্তায় পড়তে হয়, ছোট আমানতকারীদের সুদের টাকা কোথা থেকে দিবে?
আর ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ কারা পায়? তারা তো সাধারণ ব্যবসায়ী নন। তাদের সাথে সরকারের উপর মহলের যোগাযোগ ভালো বলেই ঋণ পেয়ে থাকেন। আর উপর মহলের ভালো যোগাযোগের কারণেই ঋণ নিয়ে মেরে দিয়ে দিব্যি পায়ের ওপর পা রেখে দেশের ভেতরেই বহাল তবিয়তে থাকতে পারে। পত্রপত্রিকায় যতই তাদের নিয়ে লেখালেখি হোক, কার্টুন করে ব্যাঙ্গ করা হোক তাদের গায়ের চামড়া গায়ের চেয়ে মোটা বলেই কোনো অনুভূতি কাজ করে না।
আর এসব কারণেই বর্তমানে সাধারণ মানুষের মনে ব্যাংক এখন একটি আতঙ্কের নাম। কখন আবার টাকা চুরি হয়ে যায়! এই ভয়ে কেউ আর ব্যাংকের দিকে সহজে পা মারায় না। যার কারণে পত্রিকায় মাঝে মাঝে খবর ছাপে ব্যাংকে তারল্য সংকট।
আবার এমন খবরও মাঝে মাঝে বেড়োয়, এই যে ব্যাংকে তারল্য সংকটের খবর, এটাও নাকি মিথ্যে। আসলে কোনটা যে সত্য কোনটা যে মিথ্যে তা বোঝার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নেই।
সাধারণ মানুষ বোঝেন- তাদের আমানত যাতে লোপাট না হয়, ব্যাংক যাতে ঋণের ভারে দেউলিয়া না হয়।
ব্যাংক নিয়ে চলছে অস্থিরতা, এ কথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। ব্যাংকের এই অস্থিরতা আমাদের দেশের পুরো আর্থিক খাতের ছড়িয়ে পড়ার আগে এর স্বেচ্ছারিতার মুখে লাগাম টানা দরকার। এবং সেটা নিরপেক্ষভাবে। কে কোন দলের লেজুরবৃত্তিতে মত্ত সেটা বিবেচনা না করে, দেশের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এবং তা এখনই।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)