এক.
রাত পোহালেই বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস সংক্ষেপে বেসিস এর নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে দু’টি প্যানেলে ১৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়াও ৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যদিও বেসিসের সদস্য সংখ্যা এক হাজারের বেশি কিন্তু সদস্যপদ হালনাগাদ না করার কারণে ভোট দিতে পারবেন সাধারণ সদস্যদের মধ্যে মাত্র ৩৬৪ জন এবং সহযোগী সদস্যদের মধ্যে ১৪৮ জন।
দুই.
বাংলাদেশে বেসিস প্রতিষ্ঠার একটি ছোট ইতিহাস আছে। ১৯৯৭ সালের জুন মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে কমপিউটার সফটওয়্যার বিদেশে রপ্তানির সমস্যা ও সম্ভাবনা খতিয়ে দেখাতে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটি তিন মাস পরে ১৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় বরাবর একটি রিপোর্ট পেশ করেছিল। রিপোর্টের সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ১৯৯৬ সালে বিশ্বে সফটওয়্যার বাজারের আকার ২৭৬ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ভারতের দখলে আছে ৩.২০ বিলিয়ন ডলার। রিপোর্টে আরো বলা হয় যে, ভারতের ৩.২০ বিলিয়ন ডলার সফটওয়্যার বাজারের ৪০ শতাংশ ছিল রপ্তানি আয়। আর বার্ষিক প্রবৃদ্ধিও হার বছরে ৭০ শতাংশ। ওই রিপোর্টে বাংলাদেশের সফটওয়্যার বাজারের প্রকৃত চিত্রটা বিস্তারিতভাবে তুলে না ধরে শুধু বলা হয়েছিল বাংলাদেশের সফটওয়্যার শিল্পের বর্তমান আকার বেশ ছোট। মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশে সফটওয়্যার রপ্তানি ও ডাটা এন্ট্রির ব্যবসায় জড়িত। তাদের যৌথ কর্মকান্ডে যে আয় হয় তা অনুল্লেখযোগ্য।
সেই রিপোর্টে চারটি ক্ষেত্রে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছিল। ক্ষেত্রগুলো হলো- রাজস্ব ব্যবস্থা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিপণন বা বাজারজাতকরণ। রিপোর্ট প্রণেতারা সফটওয়্যার রপ্তানিতে বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে উল্লেখিত চারটি ক্ষেত্রে ৪৫ ধরনের সমস্যা ও সেই সমস্যা সমাধানে করণীয় সুপারিশ করেছিলেন। ২৮ নাম্বারে সমস্যা হিসেবে দেশে সেসময়ে সফটওয়্যার উন্নয়ন ও ডাটা প্রসেসিং সার্ভিসে পৃথক এসোসিয়েশন না থাকার কথা উল্লেখ করে ভারতের ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার এন্ড সার্ভিসেস কোম্পানিজ বা নাসকমের আদলে বাংলাদেশে একটি এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছিল।
তিন.
আজ ১৯ বছর পরে আমরা যদি প্রশ্ন করি বেসিস কি নাসকমের মতো কাজ দেখাতে পেরেছে? এক কথায় এর উত্তর হবে না পারেনি। বিষয়টি বোঝার জন্য নাসকম ও বেসিস এর ওয়েবসাইট দেখা যেতে পারে। একটা সহজ কথা বলি, নাসকমের সদস্যরা নাসকমের সঙ্গে থাকার জন্য মরিয়া থাকে অন্যদিকে বেসিসের অনেক সদস্যই এসোসিয়েশেনের সঙ্গে বাধ্য হয়ে যুক্ত থাকে। কারণ তাদের ব্যাংক থেকে টাকা ছাড় করা কিংবা সরকারি কিছু নিয়ম নীতির কারণে বাধ্য হয়ে থাকতে হয়। এটা হওয়ার কারণ বেসিস সংগঠন হিসেবে তাদের জন্য কল্যাণকর বলে নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই কারণে সাধারণ সদস্যদের অনেকে তাদের সদস্যপদ নবায়ন করে না। বেসিসের নেতৃত্বের প্রতি বেসিসের শত শত সদস্যের অভিযোগ রয়েছে। অন্যতম অভিযোগটি হলো- বেসিসের নেতৃস্থানীয়রা তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসার সুযোগ সুবিধাগুলো নিয়ে থাকে। এবারের কোন একটি প্যানেলের নেতা এক পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন যে, তারা নির্বাচিত হলে যে কাজ তার প্রতিষ্ঠান করতে পারবে না সেই কাজ অন্যদের করতে দেবেন। বুঝুন অবস্থা। এটাই হলো প্রকৃত অবস্থা।
চার.
বেসিসে সবসময় নেতাদের কোম্পানিগুলো কাজ করার পর থেকে যাওয়া কাজগুলো তাদের কাছের ও প্রিয়ভাজনেরা পেয়ে আসছে। অথচ নাসকমে কখনো সেটি হয়নি। তার কারণ নাসকমের নেতৃত্বে যারা আছেন ও ছিলেন তারা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, তারা নাসকমের দায়িত্বে থাকাকালীন কাজ করেন পুরো সদস্য কমিউনিটির জন্য। তাছাড়া নাসকম প্রতিষ্ঠিতও হয়েছে ১৮৬০ সালের সোসাইটি অ্যাক্ট অনুযায়ী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে। অন্য আরেকটি কারণেও নাসকম বেসিস থেকে ভিন্ন। নাসকম শুরুতেই এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিসেবে পেয়েছিল যার মধ্যে অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা ও ভবিষ্যতকে দেখার দুর্লভ গুণ ছিল। তিনি হলেন মাত্র ৩৯ বছর বয়সে প্রয়াত দেওয়াং মেহতা। জেআরসি কমিটি তাদের রিপোর্ট তৈরির প্রাক্কালে এই অসাধারণ মানুষটির সঙ্গে দেখা করে তার সহায়তা নিয়েছিল। তিনি দুইবার বাংলাদেশেও এসেছিলেন। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন সফটওয়্যার রপ্তানিতে সাফল্য পেতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই আভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করতে হবে। দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। বিদেশীরা যেন বাংলাদেশী সফটওয়্যারবিদদের ব্যাপারে আস্থা রাখতে পারে। তবে সেটি মুখে মুখে বলে হবে না। তারা যখন দেখবে যে, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বাজারে বাংলাদেশীদের তৈরি করা সফটওয়্যার খুব ভালো ভাবে কাজ করছে। তখন তারা বাংলাদেশী সফটওয়্যার নিতে আস্থাবোধ করবে। ভারত নিজেও সেই কাজটি করেছিল দেওয়াং মেহতার নাসকমের নেতৃত্বে।
পাঁচ.
ভারত সফর করেছিলেন ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী ও তার টিম। তারা তাদের রিপোর্টে সফটওয়্যার রপ্তানিতে প্রণোদনা দেওয়া, স্থানীয়ভাবে তৈরি করা সফটওয়্যারে ১৫ শতাংশ প্রাইস প্রেফারেন্স দেওয়া, ব্যাংকের জটিলতা দূর ও ঋণের উচ্চ সুদহার কমানোর কথা বলেছিলেন, কাস্টম ছাড়করণের সমস্যা দূর করার সুপারিশও করেছেলেন। এছাড়াও শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য বিনাসুদে কিস্তিতে কমপিউটার ক্রয় করার ব্যবস্থা করার জন্য বলেছেন। অন্যদিকে জনবল তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)-কে শক্তিশালীকরণ এবং এটিকে পেশাজীবিদের দ্বারা পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছিল। বিসিসি শিল্পখাতভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। সুনির্দিষ্টভাবে দক্ষ জনবল তৈরির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৯৯ সালের মধ্যে কমপক্ষে ১০০০ “প্রশিক্ষক” তৈরির জন্য জেআরসি কমিটি সুপারিশ করেছিল। স্নাতক পর্যায়ে বেসিক কমপিউটার দক্ষতা অর্জন বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছিল। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, বিআইটি এবং পলিটেকনিকে কমপিউটার বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত গ্রাজুয়েট তৈরির কথা বলা হয়েছিল। কোর্স কারিকুলাম মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা ও প্রতি দুই বছর অন্তর আপডেট করার কথা বলা হয়েছিল। এমনকি কমপিউটার ট্রেনিং কোর্সের মান নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব ও ক্ষমতা বিসিসিকে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। রিপোর্টে ইন্ড্রাষ্ট্রির সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লিঙ্কেজ গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছিল। অবকাঠামোর অধীনে কপিরাইট আইন পাস করা, হাইস্পিড ডাটা কমিউনিকেশন স্থাপন, ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ কমানো, প্রাইভেট সেক্টওে নিজস্ব স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন লিঙ্ক স্থাপন, বন্দরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য খালাসে পৃথক সেল স্থাপন এবং বিসিসিতে একটি কেন্দ্রীয় রিসোর্স সেন্টার স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোতে একজন ফুলটাইম সহকারী পরিচালককে এই খাতের জন্য পূর্ণকালীন দায়িত্ব প্রদান এবং আশুলিয়ার নিকটবর্তী স্থানে ইনফরমেশন টেকনোলজি ভিলেজ স্থাপনের কথা রিপোর্টে বলা হয়েছে। দেশে বিটিটিবির মাধ্যমে ফাইবার অপটিক ব্যাকবোন ও কমিউনিকেশন হাব তৈরি করা। সর্বোপরি সফটওয়্যার কার্যক্রম বাস্তবায়ন, মনিটরিং ও পলিসি আপডেট করার জন্য একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। বিপনন বা বাজারজাতকরণের জন্য বাংলাদেশের সফটওয়্যারের উন্নয়নের সক্ষমতার বিষয়টি বিদেশে জানানোর জন্য উদ্যোগ নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি তৈরির খাতিরে দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছিল। এছাড়াও ভারতের সফটওয়্যার রপ্তানির সাফল্যেও মূল কারণ দেশীয় বাজারের সম্প্রসারণের কথা বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ সফটওয়্যার বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সকল সরকারি অফিসগুলোতে ম্যানুয়াল কাজকর্ম কমপিউটারাইজেশন করা এবং এক্ষেত্রে দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়। কমপিউটার কাউন্সিলকে বাংলাদেশের সকল আইটি পেশাজীবিদের ডাটাবেজ তৈরির কথা বলা হয়েছে।
আজকে ১৯ বছর পরে আমরা দেখি যে, এর অনেক কিছুই হয়নি এবং বেসিস এগুলোর বাস্তবায়নে জোরালোভাবে পলিসি লেভেলে ভূমিকাও রাখেনি কিংবা রাখতে চায়নি। বরং বেসিস নেতৃত্ব নিজেরাই বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করাসহ অন্যদের যা যা করার কথা জেআরসি রিপোর্টে বলা হয়েছে সেগুলো তারা নিজেরাই করেছে কিংবা করার চেষ্টা করার মাধ্যমে নাসকমের মতো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হওয়া থেকে বেসিসকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে। এভাবেই ব্যক্তি লাভের কাছে সমষ্টির কল্যাণ মার খেয়েছে।
ছয়.
১৯ বছর আগে বেসিসের প্রতিষ্ঠালগ্নে দুই বছরের মধ্যে ২ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। সেই অর্থে বলতে হয়, সফটওয়্যার রফতানি করে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখার প্রায় দুই দশক পূর্তি হতে চলেছে। বাস্তবতা হলো গত ১৯ বছরে সফটওয়্যার রপ্তানি করে বাংলাদেশ সবমিলিয়ে ২ মিলিয়ন ডলার আয় করতে পারেনি। কিন্তু যাদেরকে আদর্শ মেনে এই স্বপ্ন দেখা হয়েছিল সেই ভারত নাসকমের নেতৃত্বে শত শত বিলিয়ন ডলার আয় করে ফেলেছে একইসময়কালে। বিশ্বে সফটওয়্যারের বাজারও কয়েক ট্রিলিয়ন ডলাওে পরিণত হয়েছে। এখন আমরা শুধুই বুক চাপড়ে বলতে পারি, হায়রে স্বপ্ন!
সাত.
স্বপ্ন ভঙ্গের এই ঘটনা অবশ্য আমাদের জন্যে নতুন কিছু নয়। আমাদের তথ্য প্রযুক্তির ব্যবসায়ীরা স্বপ্নের ফানুস তৈরিতে পারক্সমমতা দেখিয়েছেন গত দুই দশক জুড়ে। আমার মনে আছে এদেশের কমপিউটার ব্যবসায়ী ও তাদের সহযোগীদের উপর একবার খুবই চটেছিলেন মি. তোফায়েল আহমেদ। ১৯৯৮ সালের ৯ ডিসেম্বর আইডিবি ভবনে অনুষ্ঠিত কমপিউটার সমিতির মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আপনারা সরকারের কাছ থেকে দাবী করে কমপিউটার ও সফটওয়্যারের উপর থেকে ট্যাক্স ও ভ্যাট মওকুফ করিয়ে নিয়েছেন এই যুক্তিতে যে বিদেশে সফটওয়্যার রফতানি করে দেশে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আনবেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি আপনারা কমপিউটার প্রোগ্রামার তৈরির বদলে স্মার্ট টাইপিস্ট তৈরি করছেন। তিনি সেদিন ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন, আপনারা প্রমাণ করুন আমি ভুল বলছি। গত ১৮ বছরে অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। অন্তত সফটওয়্যার খাতে আমাদের কাঙ্খিত উন্নয়ন না ঘটার দায় বেসিস এড়াতে পারে না।
আট.
এদিকে বাস্তবতা হলো আমাদের দেশে এখন একঝাঁক তরুণ মেধাবী সফটওয়্যারবিদ তৈরি হয়েছে যারা নিজেদের উদ্যোগ ও চেষ্টায় বিদেশে একটা বাজার তৈরি করতে পেরেছে। এখন তারা আরো বড় কাজ করে দেখাতে চায়। অভিজ্ঞতার ঝুলিটা ভরে নিতে চায়। কারণ সেটা সম্ভব হলেই বিদেশের সফটওয়্যার বাজারে তারা আরো বেশি দোর্দন্ড প্রতাপে দেশের পতাকা ওড়াতে পারবে। বাস্তবতা হলো বেসিস সেই সুযোগ তৈরি করে দিতে পারছে না তার সদস্যদের জন্য। যেকারণে ৫/১০ হাজার টাকা দিয়ে সদস্যপদ রাখার দরকার মনে করে না অনেক প্রতিষ্ঠান। অথচ নাসকমের সদস্যরা বছরে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দেয়। কারণ নাসকম প্রমাণ করেছে যে সদস্য সংস্থাদের জন্য তাদের প্রয়োজন আছে। এই অবস্থায় বেসিসের নির্বাচনে কারা জিততে পারে?
নয়.
আমি মনে করি লোভী ও ভুল নেতৃত্বের কারণে বেসিস প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের সকল স্বপ্ন আজো বাস্তবায়ন হয়নি। এই অবস্থায় আজকে যারা বেসিসের নেতা নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে যাবেন তাদেরকে নিজেদেরকে সেই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করতে হবে- কেন বেসিস তার প্রতিষ্ঠার মূল চেতনা থেকে দূরে সরে গেলো?
আমরা অনেক সময় জাতীয় নির্বাচনগুলোতে মন্দের ভালো প্রার্থী নির্বাচনে বাধ্য হই। কিন্তু বেসিস একটি শিক্ষিত, আধুনিক, বিশ্বমানের সদস্য প্রতিষ্ঠানের সংগঠন সেখানে তো মন্দের ভালো বলে প্রার্থী নির্বাচন করার কথা নয়। বেসিস সদস্যদের এখন বিকল্প খুঁজতে হবে। বেসিস প্রতিষ্ঠার মূল চেতনায় ফিরে যেতে পারে এমন নেতৃত্বকে বেসিসের ক্ষমতায় নিয়ে আসার কথা ভাবতে হবে। আমার মনে হয় কোন প্যানেল নয় অতীত যাচাই বাছাই করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ব্যক্তি মানুষকে গুরুত্ব দেওয়াটা এখন সময়ের দাবী। এমনকি স্বতন্ত্র সদস্যদের মধ্যেও যদি সেই ব্যক্তিটি থাকেন যিনি নির্বাচিত হওয়ার পর তার কোম্পানি নয়, যতোদিন বেসিসের দায়িত্ব পালন করবেন ততোদিন বেসিসকে নিজের প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধে¦ স্থান দিতে পারবেন শুধু তাদেরকেই বেছে বেছে ভোট দেওয়া দরকার। অথবা বেসিসের ভোটারদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকে বেসিস নেতৃত্বকে করিয়ে দিতে হবে বেসিসের প্রতিষ্ঠার পেছনে মূল উদ্দেশ্য থেকে তারা কতোটা বিচ্যুত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতি মানুষের অনাস্থা প্রকাশের জন্য অনেক সময় আমরা ‘না ভোট’ চালু করার কথা বলি। বেসিসের ক্ষেত্রে সেই ‘না ভোট’ হতে পারে ‘ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা’। এর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী মেসেজ সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এবং কম ভোটার উপস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত যারা নির্বাচিত হবেন তাদেরও টনক নড়বে। হয়তো এভাবেই আমরা বেসিসকে তার মূল চেতনায় ফিরিয়ে নিতে পারব। প্রয়োজনে বেসিসের বর্তমান কাঠামো ভেঙ্গে দিয়ে একে নাসকমের মতো একটি অলাভজনক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নতুন করে গড়ে তোলার কথা ভাবতে পারতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে বেসিস শক্তিশালী হলে দেশের লাভ। দেশের লাভ মানে জনগণের লাভ। আমাদেরকে দেশের পক্ষে এবং দেশের সফটওয়্যারের পক্ষে দাড়াতে হবে। আমি সকল সৎ ও নির্লোভ প্রার্থীদের সাফল্য কামনা করছি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)