‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাত্র চার বছর ছিলেন ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। আর এই চার বছরেই বাজিমাৎ করে দিয়েছিলেন অমর নায়ক সালমান শাহ।
৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬। আচমকা তার মৃত্যু সংবাদে মুষড়ে পড়ে বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি মানুষ। রহস্যের চাদরে ঢাকা তার মৃত্যু রহস্য উন্মোচিত না হওয়ায় সেই শোক বয়ে বেড়াচ্ছে তার অগনিত ভক্ত অনুরাগীরা।
সালমানের মৃত্যুর ২৩ বছরেও তাকে ভুলেনি চলচ্চিত্র প্রেমীরা। এদিন নানা ভাবে তাকে সম্মরণ করছেন। সেই তালিকায় যেমন সাধারণ ভক্ত অনুরাগী আছেন, তেমনি তার সহকর্মী কিংবা তাকে নিয়ে কাজ করেছেন, এমন মানুষ ও রয়েছেন।
অরুণ চৌধুরী পরিচালিত ‘নয়ন’ নামের একটি নাটক নির্মিত হয়েছিলো সালমান শাহকে নিয়ে। সেই নাটকে সালমানের বিপরীতে ছিলেন শমী কায়সার। নাটকটি বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছিলো তৎকালীন সময়ে। সেই নাটকের সূত্র ধরেই সালমানের মৃত্যু দিনে তাঁকে নিয়ে স্মৃতিকাতর অরুণ চৌধুরীর সহধর্মিণী ও নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী।
সম্প্রতি চয়নিকা হাত দিয়েছেন তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘বিশ্ব সুন্দরী’র। এরইমধ্যে শুটিং ও সম্পন্ন করেছেন। এই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন পরীমনি, তার নায়ক হিসেবে ছবিতে দেখা যাবে হালের ক্রেজ সিয়াম আহমেদকে। সালমানের মৃত্যুদিনে চয়নিকা স্মৃতিকাতর হয়ে বলেছেন, ‘বেঁচে থাকলে আমার প্রথম ছবির নায়ক সালমান ই হতেন!’
নিজের ফেসবুকে ‘নয়ন’ নাটকের একটি স্থিরচিত্র পোস্ট করে চয়নিকার পুরো স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:
সালমান শাহ ইমন ( আদরের ছোট ভাই) যদি এই পৃথিবীতে সত্যি সত্যি বেঁচে থাকতেন,আমার প্রথম ছবির নায়ক সালমান শাহ ই হতেন। আমি আমার বহু ইন্টারভিউ তে এটা বলেছি মুখ দিয়ে এবং এটাও বলেছি আমার ‘বিশ্বসুন্দরী’ এর রাইটার রুম্মান রশীদ খানকে যে, সেক্ষেত্রে সিয়াম কে না পেলে এই গল্প চেঞ্জ করবো। তার মানে এই না যে, সালমানের বিকল্প সিয়াম।
তবে হ্যাঁ, তিনি আছেন। সবার মনের মাঝে। আজো অমলীন। কারণ তার ছিল কাজের প্রতি ভালোবাসা। শ্রদ্ধা ভালোবাসা, আর পরিচালক থেকে শুরু করে সবার প্রতি সম্মান।
সৃষ্টি অডিওভিশন থেকে নাটক হলো ‘নয়ন’। শমী, তমালিকা,ডলি জহুর,কাশেম আংকেল! আহ! কী সুন্দর নাটক! কাজের প্রতি ইমনের ডেডিকেশন দেখে মুগ্ধ হলাম সবাই। আহারে ইমন! কতো আনন্দ নিয়ে কাজ করতাম!আহ! ইমন,শমী,তমাল। ডিওপি ছিলেন বুলু ভাই।
ছোট বেলার কত কিছু মনে পড়ে যায়! নীলা আন্টি আমাকে আর আমার বোন কে অনেক আদর করতেন। আর সালমান শাহ সুপারস্টার হবার পরেও। এক রকম ছিলেন, এতো সুন্দর ব্যবহার।
অরুণ চৌধুরীর সাথে বিয়ের পরেও তা বদল হয়নি। বাসায় আসলে গল্প করত,মাঝে মাঝে কিছু কষ্টের কথা শেয়ার করত!আমি আর আমরা মুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনতাম।
সালমান তুমি তখন যেমন আধুনিক ছিলে,আজ অবধি তুমি ই আধুনিক। তুমি একমাত্র,অনলি ওয়ান।মনে পড়ে যায়, এই দিনে তোমার চলে যাবার পর বিটিভিতে আবারো ‘নয়ন’ প্রচার হয়েছিল এবং ঢাকা শহরের রাস্তা দেখে মনে হয়েছিলো সেদিন, যেন কারফিউ দেয়া হয়েছে। সত্যি আজো আমার মনে পড়ে যায় সব।
নয়ন দেখার পর আমাদের ছেলে অনন্য প্রতীক ছোট বেলায় বলতো,‘বড় হয়ে আমি সালমান শাহ হবো!’
সালমান, তোমার মত কেউ নেই। তোমার মত কেউ আসেনি। তুমি একমাত্র যার জন্য সব্বাই সব্বাই আজো এত বছর হয়ে গেলো চোখ ভেসে যায় জলে। কত মানুষ আসে যায়। কিন্ত বুকের ভিতর এমন হাহাকার তোমার জন্যই হয়।
যেখানেই থাকো ভালো থেকো। সবাই তোমাকে ভালোবাসে। আর এত কম সময়ে তুমি যা করে গিয়েছিলে, তা কেউ করতে পারেনি। ভালো অভিনয় শিল্পী অনেকেই হতে পারে কিন্ত জনপ্রিয়তা আর তা ধরে রাখা এত সহজ না আর তা এমনি এমনি হয় না। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা তোমার জন্য। অনেক প্রার্থনা তোমার জন্য।