চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার শহীদ মিনারে টুটুলকে শেষ শ্রদ্ধা

নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুলকে জাতির পক্ষ থেকে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারের পাদদেশে শ্রদ্ধা জানানো হবে বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর ২০১৮) সকাল ১১টায়। নির্মাতার পরিবারের পক্ষে গণমাধ্যমকে খবরটি জানিয়েছেন ‘ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন মামুন।

সাইদুল আনাম টুটুলকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় শহীদ মিনারে নেয়া হবে জানিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মামুন জানান, চলচ্চিত্রকার, চলচ্চিত্র সম্পাদক, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা সাইদুল আনাম টুটুলকে জাতির পক্ষ থেকে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারের পাদদেশে শ্রদ্ধা জানানো হবে আগামী ২০ ডিসেম্বর সকাল ১১টায়। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় জামে মসজিদের প্রাঙ্গণে সাইদুল আনাম টুটুলের নামাযে জানাজা হবে।

তবে টুটুলের দাফন বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সাইদুল আনাম টুটুলের মরদেহ রাখা হবে বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে।

১৯৫০ সালের ১ এপ্রিল পুরোনো ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন সাইদুল আনাম টুটুল। শৈশব কৈশোর থেকেই তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকেছেন। ছাত্রজীবনে তিনি ঢাকা সরকারি মুসলিম স্কুল থেকে ১৯৬৭ সালে মাধ্যমিক এবং পরে ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ঢাকা কলেজে অধ্যয়নকালে সাইদুল আনাম টুটুল চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন এবং ৬ নম্বর সেক্টরের আওতায় খুলনা অঞ্চলে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইদুল আনাম টুটুল ব্যবসায় বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সাথে যুক্ততার প্রেক্ষিতে তিনি ১৯৭৪ সালে ভারতের আইসিসিআর বৃত্তি নিয়ে ভারতের পুনায় অবস্থিত চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে চলচ্চিত্র সম্পাদনা অধ্যয়ন করতে চলে যান। চলচ্চিত্র সম্পাদনার উপর পড়াশোনা শেষ করে তিনি ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

বাংলাদেশে ফিরে সাইদুল আনাম টুটুল বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ চলচ্চিত্রের সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ চলচ্চিত্রের সম্পাদক হিসেবে তিনি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সম্পাদকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

চলচ্চিত্র সম্পাদক হিসেবে তিনি ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ ছাড়াও সম্পাদনা করেন সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী নির্মিত ‘ঘুড্ডি’, শেখ নিয়ামত আলী নির্মিত ‘দহন’, মোরশেদুল ইসলামের ‘আগামী’, ‘দুখাই’, ‘দীপু নাম্বার টু’। চলচ্চিত্র সম্পাদনার দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি ছিলেন একজন গুণী চলচ্চিত্র শিক্ষক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স ও চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি চলচ্চিত্র ভাষা ও চলচ্চিত্র সম্পাদনা বিষয়ে পাঠদান করতেন।

চলচ্চিত্রকার সাইদুল আনাম টুটুল ২০০১ সালে নির্মাণ করেন তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘আধিয়ার’। ১৯৪৬-৪৭ সালের বাংলার চাষীদের তেভাগা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘আধিয়ার’ সমালোচক ও দর্শক উভয়ের কাছে একটি সুনির্মিত চলচ্চিত্র হিসেবে নন্দিত হয়।

চলচ্চিত্র ছাড়াও সাইদুল আনাম টুটুল বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটকের একজন কিংবদন্তী নির্মাতা। বাংলাদেশের টেলিভিশন ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ টেলিভিশন নাটকের নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল। তাঁর উল্লেখযোগ্য টেলিভিশন নাটকগুলো হলো নাল পিরান, বখাটে, সেকু সেকান্দর, ৫২ গলির এক গলি, আপন পর, গোবর চোর, হেলিকপ্টার, নিশিকাব্য, অপরাজিতা ইত্যাদি।

এছাড়া সাইদুল আনাম টুটুল বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণের ধারায় প্রভূত পরিবর্তন আনেন। একজন সফল বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতা হিসেবে তিনি প্রায় চার শতাধিক বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করেছেন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের চলচ্চিত্র অনুদানে সাইদুল আনাম টুটুল ‘কালবেলা’ নামে তাঁর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণ করছিলেন। চলচ্চিত্রটির দৃশ্যধারণের প্রায় ৯০ ভাগ কাজ তিনি শেষ করে এনেছিলেন। চলচ্চিত্রটির বাকি অংশের শুটিংয়ের জন্য তিনি শিগগির রাজশাহীতে যাবেন এমন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু তা আর হলো না।