চার বছরে একবারই আসে বিশ্বকাপ। দাবিদার আবার ৩২ দেশ। শুরুর দিকে সংখ্যাটা ছিল আরও কম। অংশ নেয়া দেশগুলোয় থাকে তারকা-মহাতারকার ছড়াছড়ি! এবারই যেমন আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, ব্রাজিলের নেইমার আর পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো প্রতিটি দেশেরই কেউ না কেউ আছেন।
ফুটবলের সবচেয়ে বড় আক্ষেপের জন্মও দেন এই মহাতারকারা। ১৮ ক্যারট স্বর্ণের ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখা হয় না অনেক কিংবদন্তিরই। মেসি ২০১৪ বিশ্বকাপে খুব কাছে গিয়েও শিরোপা উঁচিয়ে ধরার মহাকাব্য লিখতে পারেননি। চারবছর পর দরজায় কড়া নাড়ছে আরেকটি বিশ্বকাপ। হয়ত এটিই তার শেষ সুযোগ!
বয়স ৩৩ পেরিয়েছে রোনালদোর। চূড়ান্ত ফর্মে থাকা সময়ের দুই তারকার জন্যই এ বিশ্বকাপটা ‘হয় এবার, নয়তো কখনোই নয়’ রকমের! ছুঁয়ে দেখতে না পারলে মেসি-রোনালদোও নাম লেখাবেন ‘ট্র্যাজিক হিরো’দের কাতারে। যারা খেলাটার কিংবদন্তি, কিন্তু পুড়েছেন বিশ্বকাপ ছুঁতে না পারার ব্যর্থতায়।
তিন পর্বের ধারাবাহিকের তৃতীয় ও শেষ পর্বে থাকছে আরও ৬ কিংবদন্তির কথা-
লুইস ফিগো
ইউসেবিওর পর পর্তুগালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় বলা হয় তাকে। পর্তুগিজদের গোল্ডেন জেনারেশন দলের সদস্য ছিলেন। ব্যালন ডি’অর জিতেছেন, ফিফা বর্ষসেরা হয়েছেন। কিন্তু হায়! বিশ্বকাপ যে অধরা থেকে গেছে ফিগোর।
অলিভার কান
২০০২ সালে তার গ্লাভসে ভর করেই বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল জার্মানি। ফাইনালের আগপর্যন্ত কেবল একটিই গোল হজম করেছিলেন কান। কিন্তু ফাইনালে ফেনোমেনন রোনাল্ডোর জোড়া গোলে রানার্সআপ হয় জার্মানি। দল হারলেও ফুটবল ইতিহাসের একমাত্র গোলরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের ট্রফি গোল্ডেন বল ওঠে কানের হাতে। কিন্তু বিশ্বকাপ অর্জনের মতো নয় নিশ্চয়ই গোল্ডেন বলের স্বাদ।
রাউল গঞ্জালেস
স্পেন জাতীয় দলের চেয়ে তাকে ফুটবল ভক্তরা রিয়াল মাদ্রিদের ‘রাউল’ হিসেবেই বেশি চেনে। স্প্যানিশদের হয়ে ১০ বছর খেলেছেন। কিন্তু কোনো বড় শিরোপা ঘরে তোলা হয়নি। তবে রিয়ালের হয়ে ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে এমন কোনো শিরোপা নেই যা রাউলের ছোঁয়া হয়নি।
ডেনিশ বার্গক্যাম্প
তার গোলেই ১৯৯৮ বিশ্বকাপে বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। সেই টুর্নামেন্টে নেদারল্যান্ডসকে সেমি পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন বার্গক্যাম্প। কিন্তু শেষটাতে পারেননি। ক্লাব ক্যারিয়ারে আয়াক্স ও আর্সেনালের হয়ে মাঠ মাতালেও বিশ্বকাপ মঞ্চটা বার্গক্যাম্পের জন্য তাই আজন্ম হাহাকার।
রবের্তো বাজ্জিও
এক পেনাল্টিই সারা জীবনের আক্ষেপ হয়ে থাকবে ইতালিয়ান তারকার। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে তার পেনাল্টি মিসেই আজ্জুরিদের হাহাকার, আর চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। ইতালির সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় সেই বিশ্বকাপে জেতেন সিলভার বল ও সিলভার বুট। ১৯৯৩ সালে হাতে তোলেন ব্যালন ডি’অর।
মাইকেল বালাক
২০০২ বিশ্বকাপে দলকে রানার্সআপ হতে দেখেছেন। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে বালাকের হাতেই ছিল অধিনায়কের বন্ধনী। সেই বিশ্বকাপে জার্মানি হয় তৃতীয়। ২০০৮ সালে স্পেনের কাছে হেরে ইউরোতেও রানার্সআপ হয় তার দল। এত কাছে থেকেও বালাকের কাছে বড় টুর্নামেন্টের শিরোপা দূরেই রয়ে গেছে।
রাশিয়া বিশ্বকাপ মেসি-রোনালদোদের জন্য শেষ বিশ্বকাপও হতে পারে। অর্থাৎ এবার না হলে তাদের নামও যোগ হতে পারে এই তালিকায়। আর্জেন্টিনার হয়ে যেমন বাতিস্তুতা, কার্লোস তেভেজদের ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। সেই সংখ্যাটা হয়ত সময়ের সঙ্গে বাড়তেই থাকবে!