আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও করোনা মহামারীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দুই বছরপূর্তির মুহূর্তে এসে শিশুদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনিসেফ তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, কোভিডের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বা আংশিক বন্ধ থাকায় বিশ্বজড়ে অন্তত সাড়ে ৬৩ কোটি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য, সামাজিক বিকাশ এবং পুষ্টি সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এই সময়ে স্বাভাবিকতা হারিয়ে বহু শিশু উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্নতার পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হয়েছে। এসব কারণে সাধারণ গণনা থেকে শুরু করে সহজে শেখা যায়- এমন বিষয়গুলোও ভুলতে বসেছে তারা। প্রমাণ হিসেবে কয়েকটি দেশে সম্প্রতি করা একাধিক জরিপের ফলাফলও উল্লেখ করেছে ইউনিসেফ।
শিশুদের পড়ালেখার এই অভাবনীয় ক্ষতিপূরণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ইউনিসেফ বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে শেখানোর গণ্ডির বাইরে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ শিশুদের যত্ন নিতে হবে। তা না হলে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা অর্জন থেকে পিছিয়েই থাকবে তারা।
করোনাকালে শিশুদের ওপর প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জরিপ-গবেষণা চালিয়েছে। তা থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত-ও বলছে, আমাদের শিশুরা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। এই দুই বছরে বাল্যবিয়ে, পারিবারিক নির্যাতন, শিশুশ্রম থেকে শুরু করে বহু শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের ইতিটানার মতো নির্মম পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে বহু শিশুকে। এছাড়াও অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখা থেকে শুরু করে অনলাইন গেমসে আসক্ত হয়েছে অসংখ্য শিশু।
আমরা কেউই জানি না, ঠিক কবে আবার পৃথিবী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে? কবে আবার শিশুরা তাদের নিজস্ব জগতে ফিরতে পারবে? স্কুলের ঘণ্টার শব্দে কবে ভাঙবে এই নীরবতা? আমাদের কারোর কাছেই এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। শুধু আছে অনিশ্চিত এক অন্ধকার সময়।
তবে এসব প্রশ্নের উত্তর না পেলেও আমরা সবাই জানি, এই সময়ে শিশুদেরকে সুস্থ-স্বাভাবিক রাখতে নিজেদের মতো করেই চেষ্টা চালাতে হবে। পরিবারের ভেতর থেকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। শিশুদের জন্য আলাদা করে সময় বের করে নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
আমরা মনে করি, পরিবারের বিশেষ যত্নেই সজীবতা ফিরে পাবে শিশুরা। অন্ধকার ভবিষ্যতের পথে কিছুটা হলেও আলোর রেখা দেখবে তারা।