৪৮ বছর পর সেই ডিসি-১০ বিমান করে যুক্তরাজ্য হয়ে দিল্লী থেকে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে (বর্তমানে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড) বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান সংগঠক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে এবার স্বশরীরে নয়, তিনি এসেছেন লেজার রশ্মির প্রতিকী আলোকবর্তিকা রূপে।
বঙ্গবন্ধু যখন নেমে আসছিলেন, তখন প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে জাতির পিতার প্রতি সম্মান জানান। পিতার এ আগমনে অশ্রুস্বজল হয়ে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এসময় বারবার চোখ মুছতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। এরপর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিক কাউন্টডাউন (ক্ষণগণনা) ঘোষণাকালে দেওয়া বক্তব্যের সময়ও বারবার অতীত স্মৃতিচারণ করে অশ্রুস্বজল হতে দেখা যায় শেখ হাসিনাকে।
এসময় জাতির পিতাকে বরণ করে নিতে আগত স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ফুল ছিটিয়ে এবং উপস্থিত দর্শনার্থীরা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে বরণ করে নেয়। লেজার রশ্মির আলোর মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি কিছুদূর এগিয়ে গেলে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ২১ বার তোপধ্বনি এবং গার্ড অব অনার দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের এ সর্বাধিনায়ককে বরণ করে নেয়।
প্রধানমন্ত্রী ৪টা বেজে ২৫ মিনিটে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে তার সঙ্গে হেঁটে মঞ্চে ওঠেন প্রধানমন্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শিক্ষক প্রফেসর রফিকুল ইসলাম, ছোট বোন শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং ঢাকাস্থ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোর রাষ্ট্রদূতেরা।
এর আগে, শুরুতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জাতির পিতাকে নিয়ে গাওয়া অমর সেই গানের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু যে আর ডিসি-১০ বিমানে করে যুক্তরাজ্য থেকে দেশের মাটিতে ফিরে এসেছিলেন, সেই আদলের একটি বিমান আকাশ থেকে নেমে আসে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের মাটিতে। সঙ্গে সঙ্গে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে স্বাধীনতার মহান স্থপতিকে জাতীয় পতাকা নেড়ে বরণ করে নেয়।
৫টা ১৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী কম্পিউটারাইজড সিস্টেমে সারাদেশে একসঙ্গে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এসময় শান্তির প্রতিক হিসেবে ১০০টি পায়রা ওড়ানো হয়।
তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে ১২ হাজারেরও বেশি উপস্থিতির সামনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরপরই একযোগে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষণগণনার ৮৩টি ঘড়ি চালু হয়ে যায়। আগামী ১৭ মার্চ থেকে শুরু হবে মুজিব জন্মশতবর্ষের বছরব্যাপী কার্যক্রম। ১৭ মার্চ এ আয়োজন শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ।
এরপর দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের ২৮টি জায়গা, বিভাগীয় শহর, ৫৩ জেলা, দুই উপজেলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীতে বসানো ৮৩টি স্থানে ক্ষণগণনার ঘড়ি সচল হয়।
এই আয়োজনে অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে সরাসরি অংশ নিয়েছেন ১২ হাজার দর্শক। এছাড়া, সরকারি ও বেসরকারি টিভি চানেলগুলোতে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে ক্ষণগণনার মাহেন্দ্রক্ষণ সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৭৭টি মিশনে নেওয়া হয়েছে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি। মুজিববর্ষের কাউন্টডাউন শুরুর অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতায় নিয়োজিত রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী।
পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। ঐতিহাসিক এই দিনটিতেই মুবিজবর্ষের ক্ষণগণনা শুরু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে এই আয়োজনের মূল অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানের সার্বিক বিষয় তত্ত্বাবধান করছে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।