বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সৈনিক ইবাদত হোসেন চৌধুরী। বলে গতির ঝড় তুলে অনেকদিন ধরেই আলোচনায়। বিসিবির নানা দল ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে পারফর্ম করে ডাক পেয়েছেন টেস্ট দলে। নিউজিল্যান্ড সফর দিয়ে শুরু হচ্ছে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটযাত্রা।
রবি পেসার হান্টে গতির ঝড় তুলে বিসিবির এইচপি প্রোগ্রামে আসার দুই বছরের মাথায় স্বপ্ন পূরণ হল ইবাদতের। এখন অপেক্ষা তাসমান সাগড়পাড়ে নিজেকে মেলে ধরার। চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে টাইগার পেসার বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানালেন বিসিবির শ্রীলঙ্কান কোচ চম্পকা রামানায়েকে ও বিমান বাহিনীর প্রতি।
গোড়ালির চোটের কারণে তাসকিন আহমেদ ছিটকে যাওয়ায় ইবাদতের ডাক আসে টেস্ট দলে। সিলেট সিক্সার্সের হয়ে বিপিএল খেলা পেসার বিপিএলে নিজের সবশেষ ম্যাচে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। তবে তাকে টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্তির নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স।
বিপিএল শুরুর আগে বিসিএলে ইবাদত ৫ ম্যাচে নেন ১৯ উইকেট। এক ম্যাচেই শিকার করেন ১০ উইকেট। সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৬টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৪ উইকেট। তাতেই নির্বাচকদের রাডারে চলে আসেন ২৫ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার।
‘টেস্ট নিয়েই স্বপ্ন দেখেছি’
বিপিএল শেষ করে বিশ্রামে কাটছিল ইবাদতের সময়। মঙ্গলবার দুপুরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডারত অবস্থায় এক সাংবাদিকের ফোন কলে পান টাইগার স্কোয়াডে ডাক পাওয়ার সুখবরটি। বাসায় ফিরে একটি লাল বলের সিমে আঙুল বসানো গ্রিপের ছবি পোস্ট করেন ফেসবুকে। তাতে প্রকাশ পায় মনের ভেতরের উচ্ছ্বাস। পরে চ্যানেল আইন অনলাইনকে বললেন, ‘আসলে টেস্ট নিয়েই স্বপ্ন দেখেছি। মনে মনে টেস্ট ক্রিকেট নিয়েই বেশি ভাবতাম। নিজেকে এই সংস্করণের জন্যই প্রস্তুতি করেছি।’
চম্পকার পরিশ্রম
মাঝে ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন ইবাদত। নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন বিসিবির এইচপি ইউনিটের কোচ চম্পকা রামানায়েকের টোটকায়। কক্সবাজারে পেস বোলারদের নিয়ে বিশেষ ক্যাম্পে রানআপ ঠিক করার পর মিরপুরের একাডেমি মাঠে ইবাদত ব্যক্তিগত তাগিদেই শরণাপন্ন হয়েছিলেন লঙ্কান কোচের কাছে।
‘এইচপি ক্যাম্পের পরও রামানায়েকের সঙ্গে কাজ করেছিলাম। উনি আমার রানআপ নিয়ে কিছু কাজ করেন। ধারাবাহিকভাবে ভালো বল করা যায় সেটি নিয়ে বলেন। তখন উনি বলছিলেন, এবার তো ভালো ছন্দে আছো, আমি চাই বিসিএলে ৫ উইকেট নিয়ে দেখাবে। তখন বলেছিলাম, সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আপনার এই কাজের প্রতিদান দিতে।
কথা রেখেছেন ইবাদত
বিসিএল খেলতে নেমে দ্বিতীয় ম্যাচেই প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে কথা রাখেন ইবাদত। কীভাবে সফলতা আসল সেটি জানাতে গিয়ে এ পেসার বললেন, ‘বল ডেলিভারির সময় আমার মাথা বাঁ-দিকে ঝুঁকে যেত। যেটা চম্পকা সোজা করে দিতে সাহায্য করেছে। মাথাটা স্ট্রেইট করে দেয়াতেই আমার বোলিং ভালো হয়েছে এবং এখন সিম পজিশন খুব সুন্দর যায়।’
‘বিপিএলেও সিমে বল ফেলতে পেরেছি খুব ভালভাবে। এছাড়া মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার কথা বলেছে। আরও বলেছে, দুই-এক ওভার খারাপ হতেই পারে; টেস্টে কিন্তু রিকভারির সময় আছে। তাকে ধন্যবাদ দিতে চাই। প্রচুর পরিশ্রম করেছে। আমি তাকে খুব বিরক্ত করেছি। মিরপুরে ৬-৭ দিন তার সঙ্গে একাই কাজ করেছিলাম একাডেমি ভবনে থেকে।’
‘বিমান বাহিনীর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ’
২০১৬ রবি পেসার হান্টে অংশ নেয়ার সময় ইবাদত ছিলেন বিমান বাহিনীর সৈনিক পদে কর্মরত। ঘণ্টায় ১৩৯ কিলোমিটার বেগে বল করে প্রথম হওয়ার পরই চলে আসেন বিসিবির অধীনে। কাগজে-কলমে ইবাদতকে এখনও বিমান বাহিনী কর্তৃপক্ষ ধরে রেখেছে তাদেরই সৈনিক হিসেবে। প্রতিনিয়ত সেখান থেকে পেয়ে গেছেন সমর্থন আর উৎসাহ।
‘বিমান বাহিনী কর্তৃপক্ষ এবং বাহিনীর প্রধান স্যারকে ধন্যবাদ যে, তারা আমাকে একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে। তারা যদি সুযোগ না দিতেন, তাহলে এ পর্যন্ত কখনোই আসতে পারতাম না। দেশের জন্য যদি টেস্ট খেলি, সেটি হবে অনেক গর্বের। আমি অনেক গর্ববোধ করি যে, এয়ার ফোর্সের একজন সদস্য। আমি চিরকৃতজ্ঞ বিমান বাহিনীর প্রতি, অনেক সুন্দর একটা জীবন দেয়ার জন্য।
কন্ডিশনের কারণে ‘সৌভাগ্যবান’ ভাবছেন ইবাদত
বাংলাদেশ দলের হয়ে ইবাদতের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট এমন এক জায়গায় যেখানকার উইকেট কিনা গতিময় বোলারদের জন্য খুবই সহায়ক হয়। টেস্টে ভালো কিছুর সুযোগ পেসারদের বেশিই। এমন একটি দেশে প্রথম সফর হওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন ইবাদত।
‘সব পেসারই চায় নিজের প্রথম ম্যাচ পেস-বান্ধব উইকেটে খেলতে। নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি নিউজিল্যান্ডেই আমার প্রথম সফর। যদি সেখানে অভিষেক হয়, তাহলে সেটি আমার জন্য হবে অনেক বড় সুযোগ। আমি আত্মবিশ্বাসী ওখানকার কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে।’