সোয়া এক ঘণ্টা বিচ্ছিন্ন থাকার পর ইন্টারনেট সংযোগ আবার চালু হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করতে গিয়ে কারিগরি জটিলতায় সারাদেশে ইন্টারেনেট সংযোগে এক ধরনের বিপর্যস্ত অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষ করে মোবাইল ডাটা সার্ভিসে বিদেশী সাইটগুলো পাওয়া গেলেও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমসহ দেশী অনেক সাইটেই ঢোকা যাচ্ছে না।
দুপুরের পর সোয়া এক ঘণ্টা ইন্টারনেট সংযোগ না থাকাকে ভুল বোঝাবুঝির ফল বলে জানিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। বিষয়টি বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক করতে ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পরে কখনো দেশী সাইটে ঢুকতে না পারা আবার কখনও কখনও বন্ধ থাকার পরও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ঢুকতে পারাকে ভুল বোঝাবুঝি বলেছে মন্ত্রণালয়।
তবে সরকারের নির্দেশনাতেই ফেসবুকসহ, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ এবং মেসেঞ্জারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)ও তা নিশ্চিত করে বলেছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সকল সামাজিক মাধ্যম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে সাময়িকভাবে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক থাকলেও নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তাই নিরাপত্তাজনিত কারণে এসব মাধ্যম বন্ধ রাখা হয়েছে।’
তবে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ জানান, ‘দুপুরে ইন্টারনেট না থাকার ব্যাপারটি আসলে ভুল বোঝাবুঝি থেকে হয়েছে’।
ভুল বোঝাবুঝি বলা হলেও সরকারি নির্দেশেই ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয় বলে জানিয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (আইএসপিবি)। আইএসপিবির সভাপতি এম এ হাকিম জানান, ‘সরকার ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গ্যাটওয়ের (আইআইজি) সঙ্গে সংযোগ বন্ধ করে দেয়াতেই দেশ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ছিলো।’
এর আগে ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ ফেসবুকসহ, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারের মতো যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রাখতে মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানি এবং ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি পাঠায় বিটিআরসি।
সকালে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় নিশ্চিত হওয়ার পরপরই বিটিআরসির সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস থেকে পাঠানো চিঠিতে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং সব ধরনের মেসেঞ্জার বন্ধ রাখতে বলা হয়।
রায় ঘোষণার ঘণ্টাখানেকের মাথায় বেলা ১টার দিকে বন্ধ হয়ে যায় এসব মাধ্যম। একইসঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ হয়ে যায়। তবে বেলা ২টা ১৫ মিনিটের দিকে বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে স্বাভাবিক হয় দেশের ইন্টারনেট সংযোগ।
এরপর বাংলাদেশ থেকে কখনও কখনও ফেসবুকের সংযোগ পাওয়া গেলেও সন্ধ্যা নাগাদ তা পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে যায়। তবে একইসঙ্গে শুরু হয় মোবাইল ইন্টারনেট থেকে দেশী সাইটে ঢুকতে না পারার সমস্যা।
গত ১১ নভেম্বর জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো মাধ্যমগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের ঘটনা দেশে নতুন নয়। চলতি বছর জানুয়ারির ১৮ তারিখেও নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপসহ কয়েকটি অনলাইন সার্ভিস। এর আগেও একবার বন্ধ করা হয়েছিলো ফেসবুক।