ব্রেক্সিট জট আরও জটিল হয়েছে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র প্রথম ব্রেক্সিট খসড়া বিপুল ভোটে খারিজ হয়েছে। সংশোধিত খসড়া নিয়ে ভোটাভুটি হওয়ার কথা মঙ্গলবার। তার আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে আলোচনা করে একটা সমাধানে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন মে। কিন্তু প্রথম ব্রেক্সিট খসড়ায় তার প্রস্তাবিত বদলগুলো মানতে নারাজ ইইউ।
প্রধানমন্ত্রী ভবনের ( ডাউনিং স্ট্রিট) সূত্রে ব্রিটিশ মিডিয়ার এমন খবরে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, মঙ্গলবার ভোটাভুটির আগে ব্রেক্সিট জট কাটার কোনো সম্ভাবনা নেই।
থেরেসার প্রথম ব্রেক্সিট প্রস্তাবটি রেকর্ড ২৩০ ভোটে খারিজ হয়েছিল। আর সেই প্রস্তাবে মূল আপত্তির জায়গা ছিল ‘আইরিশ ব্যাকস্টপ’। খসড়ায় বলা হয়েছিল, একটা সমঝোতায় না পৌঁছানো পর্যন্ত উত্তর আয়ারল্যান্ড ইইউ’র কাস্টমস ইউনিয়নেই থাকবে। অর্থাৎ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক শুল্ক নীতি পুরো ব্রিটেনের ক্ষেত্রে বলবৎ না হলেও উত্তর আয়ারল্যান্ডে আপাতত তা চলতে থাকবে। ইইউ এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যে থাকবে না কোনো কঠোর সীমান্ত নীতি।
এই শর্তেই বাদ সেধেছেন বিরোধীরা, আপত্তি তুলেছেন থেরেসার দলের একাংশও। তাদের দাবি, এভাবে উত্তর আয়ারল্যান্ড ইইউ’র অংশ থাকলে ব্রিটেন কোনো দিনই পুরোপুরি ইইউ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। তাদের আরও দাবি, ‘আইরিশ ব্যাকস্টপ’ মানে না থেকেও ইইউ’র সাথে থাকা।
থেরেসা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, ‘ব্যাকস্টপ’ প্রক্রিয়া পুরোপুরি সাময়িক, কিন্তু সে যুক্তিতে কাজ হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে ব্যাকস্টপ প্রশ্নে সুর নরম করে নতুন খসড়া বানিয়েছেন থেরেসা। আনা হয়েছে অন্যান্য কিছু বদলও। সেই নতুন খসড়া নিয়ে গত রোববার ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জন ক্লঁদ জাঙ্কারের সঙ্গে থেরেসার বিস্তারিত কথা হয়েছে। কিন্তু সমঝোতা চুক্তিতে সই করতে রাজি হননি জাঙ্কার।
ফলে মঙ্গলবার ব্রিটিশ হাউস অফ কমন্সে থেরেসার নতুন খসড়া পাশ হওয়ার সম্ভাবনা কম। থেরেসার নতুন প্রস্তাবটিও ২০০’র বেশি ভোটে খারিজ হবে, এমন আশঙ্কাও জোরদার হচ্ছে।
সেক্ষেত্রে মঙ্গলবার থেকে তিনদিন ব্রিটেনের তথা ব্রেক্সিটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মঙ্গলবার ব্রিটিশ হাউস অফ কমন্সে থেরেসার প্রস্তাব পাশ হলে, সেই প্রস্তাব অনুযায়ী ২৯ মার্চ ইইউ থেকে বেরিয়ে আসবে ব্রিটেন। কিন্তু সে প্রস্তাব পাশ না হলে ১৩ মার্চ ‘নো-ডিল’ প্রস্তাবে ভোটাভুটি হবে। অর্থাৎ, ১৩ মার্চের প্রস্তাব পাশ হলে কোনো চুক্তি ছাড়াই ইইউ থেকে বেরিয়ে যাবে ব্রিটেন।
আর ‘নো-ডিল’ প্রস্তাবও যদি পাশ না হয়, ১৪ মার্চ আবার একটি ভোটাভুটি হবে, সেটা হবে ব্রেক্সিটের সময়সীমা বৃদ্ধি নিয়ে। সেই প্রস্তাব পাশ হলে, ২৯ মার্চ, ব্রেক্সিটের নির্ধারিত সময়সীমা কয়েক দিন বাড়বে। আর সেই প্রস্তাবও যদি খারিজ হয়, ব্রেক্সিট জট আরো বাড়বে। আপাতত তাই সামনের তিনদিনের দিকে তাকিয়ে ব্রিটেনবাসী।