রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধীতাকারীদের প্রতি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক এডভোকেট সুলতানা কামাল।
‘যে প্রতিবাদী নাগরিকবৃন্দ বিদ্যুৎকেন্দ্র বিষয়ে কোন সঠিক তথ্য, প্রমাণ ও যুক্তি ছাড়াই তাদের বিরোধিতা ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন’ প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ ও জবাব দিয়েছে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি।
সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সুলতানা কামাল বলেন,‘‘আমি পরিস্কারভাবে জানাতে চাই যে, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের এই বক্তব্যটি একেবারেই সত্য নয় এবং তা আন্দোলনকারী নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত অপপ্রচারের শামিল। আমি তার ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত এই অসত্য বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করছি ও তা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
রামপালে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধীতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন,‘ এটি সবাই জানেন যে, সুন্দরবন থেকে নিরাপদ দুরত্বে প্রস্তাবিত বিদ্যুকেন্দ্রটি সরিয়ে নিতে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশের জনগণ ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনসমূহ সরকারের নিকট প্রথম থেকেই ও দীর্ঘ দিন যাবৎ দাবি জানিয়ে আসছে।
কারণ এটি একাধিক দেশীয় ও বিদেশী বিশেষজ্ঞবৃন্দ কর্তৃক বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্য ও যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে দেখানো হয়েছে যে, সরকার কর্তৃক অনেক আগেই ঘোষিত সুন্দরবনের পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ‘বাফার জোন’ থেকে মাত্র ০৪ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত এই স্থানে কয়লা ভিত্তিক এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হলে তা থেকে বিষাক্ত গ্যাস ও রাসায়নিক বর্জ্য নিশ্চিতভাবেই সুন্দরবনের সকল গাছপালা, তৃণলতা-গুল্ম, পশু-পাখী, জলজ প্রাণীসহ সার্বিক ও অনন্য জীব-বৈচিত্র ধ্বংস হবে, বনের উপর নির্ভরশীল ২/৩ কোটি মানুষের জীবিকা বিনষ্ট হবে এবং সারা দেশ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সংকট বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান সাইক্লোন জনিত ধ্বংসলীলার চারণভুমিতে পরিণত হবে।’
তিনি জানান, সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের মানুষ ও সারা বিশ্বই আজ সুন্দরবন রক্ষার স্বার্থে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎন্দ্রের সম্ভাব্য ক্ষতিকর অভিঘাতের বিষয়টি নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছেন। খোদ বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘের ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি’ ও ‘রামসার সচিবালয়’ থেকে এই প্রকল্প বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
জনস্বার্থ ও সুন্দরবন বিরোধী সকল সরকারী অপপ্রচার বন্ধ করে, জনদাবি মেনে নিয়ে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে বাঁচানোর স্বার্থে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটি অবিলম্বে বাতিল বা সুন্দরবন থেকে নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে নেয়ার জন্য ৫৩ টি সামাজিক আন্দোলনের সমন্বয়ে গঠিত সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে আহ্বান জানান তিনি।