‘শুনি মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব কথা’ শিরোনামে স্কুলভিত্তিক কর্মসূচি পালন করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংগঠন মুক্ত আসর। সারা দেশে বছরব্যাপী স্কুলভিত্তিক কর্মসূচি পালনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দুপুর একটায় রাজধানী ঢাকার বংশাল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এ অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের কথা শোনান মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম জয়নুল আবেদীন খান বীর প্রতীক।
কীভাবে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পুবাইল-আড়িখোলা পথে রেললাইন উড়িয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছিলেন, সে কথা শোনান তিনি।
সেদিনের কথা মনে করে এ কে এম জয়নুল আবেদীন বলেন, ১৯৭১ সালের শেষ দিক। গোপন শিবির থেকে রাতে একদল মুক্তিযোদ্ধা বেরিয়ে পড়েন। তাদের বেশির ভাগ ছিলেন স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। জলপথে নৌকায় করে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছান। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পুবাইল-আড়িখোলা রেলস্টেশনের মাঝামাঝি একটি স্থানে ছোট একটি রেলসেতু আছে। রেলপথের দুই পাশের বেশির ভাগ স্থান জলমগ্ন।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুসারে অপারেশনস্থলে দ্রুত কাজ শুরু করি। বিস্ফোরকের প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধারা রেল স্লিপারের নিচের পাথর সরিয়ে বসালেন নিয়ন্ত্রিত মাইন। এক ঘণ্টার মধ্যেই সম্পন্ন হলো তাদের কাজ। মাইনের সঙ্গে তার লাগিয়ে তা টেনে নিলেন কাছাকাছি নিরাপদ স্থান পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিলেন সেখানে। এবার রেলগাড়ির জন্য অপেক্ষার পালা। এদিকে রাত শেষে ভোর হয়। কিন্তু ট্রেনের আর দেখা নেই। আমরা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। কারণ যত বেলা হবে, তাদের সেখানে অবস্থান করা বিপজ্জনক হয়ে পড়বে।
এমন সময় শোনা গেল ট্রেনের হুইসেলের শব্দ। তখন আনুমানিক ভোর ছয়টা। কিছুক্ষণের মধ্যেই রেলগাড়ি দৃষ্টিগোচর হলো। ইঞ্জিনের সামনে বালুভর্তি ওয়াগন চিহ্নিত স্থান অতিক্রম করা মাত্র বিস্ফোরক দল বিস্ফোরণ ঘটাল মাইনের। বিকট শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত।
তিনি বলেন, বিস্ফোরণে ইঞ্জিন ও দুটি বগি সম্পূর্ণ ধ্বংস হলো। সেগুলো রেলপথ থেকে ছিটকে নিচে পড়ে। ইঞ্জিনের পরের বগিতে ছিল পাকিস্তানি সেনারা। তারা বেশির ভাগ হতাহত। অপারেশন শেষ করে আমরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে চলে যাই।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। এরপর একাত্তরের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্কুলের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক এ কে এম জয়নুল আবেদীন খানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বংশাল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাজি মো. এনায়েত উল্লাহ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেতারা বেগম। এ ছাড়া বক্তব্য দেন মুক্ত আসরের সভাপতি আবু সাঈদ।
‘শুনি মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব কথা’র পর শিশু-কিশোরদের প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। এই পর্বের পর আয়োজন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের ওপর কুইজের। কুইজে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ত্রৈমাসিক স্বপ্ন ’৭১ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বই পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়। স্কুলের শিক্ষার্থীদের সমবেত কণ্ঠে ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আয়শা জাহান। মুক্ত আসরের সদস্য শাহিন মাহফুজ, প্রতীক চাকমা, মাহেরা বিনতে রফিকসহ স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।