শাসক মহলের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে দেশে এখন ন্যায় বিচারের বদলে ‘নাই বিচারের পরিবেশ’ সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন: বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ আতঙ্কগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। দেশে সুবিচার ও ন্যায় বিচারের পরিবেশ আর নেই।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বকশী বাজার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালতে পঞ্চম দিনের মতো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অসমাপ্ত জবানবন্দি দেন খালেদা জিয়া।
এসময় খালেদা জিয়া বলেন: আমরা আশা করেছিলাম নির্বাহী বিভাগের আওতামুক্ত হয়ে দেশে সত্যিকারের বিচারব্যবস্থা থাকবে। কিন্ত আমাদের আশা ভঙ্গ হয়ে গেছে। আদালতে রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। ন্যায়বিচারের সুযোগ নেই। জনগণের সর্বোচ্চ আশ্রয়স্থল সুপ্রিম কোর্টে কী রকম নজিরবীহিন ঘটনা ঘটেছে আপনি নিশ্চয় তা অবগত রয়েছেন। দেশের প্রধান বিচারপতিকে কী ধরনের পরিণতির শিকার হতে হয়েছে তা সকলে জানে।
নিজের বিরুদ্ধে দায়ের করা কোন মামলার আইনগত ভিত্তি নেই দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন: এ মামলায় আমাকে কেন অভিযুক্ত করা হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়।
‘আমি এ মামলার বিবরণ থেকে জেনেছি এবং কুয়েত দূতাবাসের চিঠিতে জানানো হয়েছে যে, শহীদ জিয়াউর রহমানের নামে এতিমখানা প্রতিষ্ঠার জন্য অনুদান দেয়া হয়েছিলো। এতে আমার কোন সম্পৃক্ততা ছিলো না। আমি আরো জেনেছি যে, কুয়েতের দেয়া অনুদানের অর্থ দুই ভাগ করে দু’টি ট্রাস্টকে দেয়া হয়। এতে আইনের কোন লঙ্ঘন হয়নি এবং ব্যাক্তিগত ভাবে আমি কিংবা অন্য কারো লাভবান হওয়ার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া, ট্রাস্ট দু’টির কোন পদে আমি কখনো ছিলাম না বা এখনো নেই। প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও আমার কোন ধরণের সম্পৃক্ততা ছিলো না।’
তিনি বলেন: মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে আরো জানতে পেরেছি, বগুড়ায় এতিমখানা স্থাপনের লক্ষ্যে জমি ক্রয় করা হয়। এই জমি ক্রয় সম্পর্কেও কোন অভিযোগ নেই।
এই ট্রাস্টের বাকী টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে এবং তা সুদাসলে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও আদালতে বলেন তিনি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট একটি বেসরকারি ট্রাস্ট। এটি আইন সম্মতভাবে রেজিষ্ট্রিকৃত বলেও তার দেয়া জবানবন্দীতে উল্লেখ করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।
‘আমার বিরুদ্ধে ৩২টি মামলা দায়েরর করা হয়েছে। জনগণের কাছে এটি স্পষ্ট যে প্রতিটি মামলাই দায়ের করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশতবর্তী হয়ে। সবগুলে অসত্য, ভিতিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে। আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা কোন মামলারই কোন আইনগত ভিত্তি নেই। আমি রাজনীতিতে সক্রিয় বলেই এবং আমাকে ক্ষমতাসীনদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করেই মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। অথচ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলাগুলো তুলে নেয়া হয়েছে।’
খালেদা জিয়া বলেন: অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগে ক্রমাগত অপপ্রচার চালিয়েও জনগণ থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়ে মিথ্যা মামলা করেছে। এসব উদ্দেশ্য আমাকে হেনস্থা করা এবং জনগণের সামনে হেয় করা। কিন্তু তাদের সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি এবং হবেও না ইনশাল্লাহ। বরং এসব করে তারই জনগণের কাছে হেয় হচ্ছে এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। কারণ এদেশের মানুষ অনেক সচেতন। তারা সত্য ও মিথ্যার ফারাক সহজেই বুঝতে পারে। তাই আমাদেরকে যতো বেশি মামলায় জরজরিত করা হচ্ছে আমরা ততো বেশি দেশবাসির সহানুভূতি ও সমর্থন পাচ্ছি, জনগণ আরো বেশি করে আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে।
‘মাননীয় আদালত, আমরা অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করায় মোটেই ভীত নই। তবে দেশবাসি ও আমাদের আশঙ্কার কারণ অন্য জায়গায়। সেটা হচ্ছে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ন্যাক্কারজনকভাবে দেশ থেকে ন্যায় বিচারের পরিবেশ ও সুযোগ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে। শাসকমহল তাদের এই অপকর্মে ও এই অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সব রকমের কারসাজির আশ্রয় গ্রহণ করেছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন: ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতিকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। যা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। তাকে দেশের বাইরে যেতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে দেশে না ফিরে বিশেষ পন্থায় ভয় ভীতি দেখিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। দেশের প্রধান বিচারপতিকে যেখানে এমন ভাগ্য বরণ করতে হয় সেখানে অন্য বিচারের সামনে ন্যায় বিচারের সুযোগ কি আর থাকতে পারে?
এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে পঞ্চম দিনের বক্তব্য দিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১১. ৪৫ মিনিটে বিনএপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত হন। বকশী বাজার আলীয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালতের উদ্দেশে আসার সময় খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ির পেছন থেকে ছাত্রদলের ১০ নেতাকে আটক করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।