বিউটি বোর্ডিং। এখানে বসেই শহীদ কাদরী লিখেছিলেন, ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’, শামসুর রাহমান লিখেছিলেন, ‘তোমাকে পাবার জন্য, হে স্বাধীনতা’। গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পুরান ঢাকার এই বিউটি বোর্ডিংয়ে আড্ডার আসর জমাতেন সে সময়কার তরুণ লেখক, সাহিত্যিক, কবি, শিল্পীরা। কে নেই তালিকায়? কবি শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী, আল মাহমুদ, জহির রায়হান, সাংবাদিক আতাউস সামাদ, নির্মল সেন, ফজল শাহাবুদ্দিনসহ অনেকে। আড্ডায় রাষ্ট্র, সমাজ, শিল্প, সাহিত্য নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা হতো। শিল্পবোদ্ধাদের তর্ক, বিতর্ক আর গাল গপ্পে মুখর বিউটি বোর্ডিংয়ের সেই আড্ডার কথা মনে করিয়ে দিতে আজ শুক্রবার বিকালে নতুন ভাবে আড্ডার আয়োজন করে নাটকের দল তীরন্দাজ। আড্ডার আলোচক ছিলেন শংকর সাঁওজাল, লুবনা মরিয়ম, টোকন ঠাকুর ও সামিনা লুৎফা নিত্রা। ছিলেন শ’খানেক আড্ডাপ্রিয় মানুষ। আড্ডার শিরোনাম, ‘নদীর জলে আগুন ছিল।’
শংকর সাঁওজাল বললেন, ‘বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডা থেকে কতো সাহিত্য, কতো চিত্রকল্প, কতো গল্প বেরিয়ে এসেছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। আমাদের কাছে বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডা ছিল দিন শেষে ক্লান্তি দূর করার উপায়। আমরা শহীদ মিনারে সারাদিন কাজ করেও সন্ধ্যায় এখানে আসা চা–ই চাই। এখানে যারা আড্ডা দিতেন, তারা একসময় সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছেন। তাদের নদীর জলে আগুন ছিল।’
টোকন ঠাকুর বলেন, ‘বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডা আমাদের কাছে পুরোনো বইয়ের মতো। আর তাই আজকের আড্ডাটা যেন পুরোনো আড্ডার স্মৃতি নিয়ে আরেকটি আড্ডা।’ আড্ডায় উঠে আসে ষাটের দশক, আশির দশকের সাহিত্য ও সংস্কৃতি আন্দোলনের ভাঙ্গা–গড়ার কথা। শংকর সাঁওজাল নতুন করে ষাট ও আশির দশকের সেই আগুনটা নতুন করে জ্বালাবার আহবান জানিয়ে আড্ডা শেষ করেন।
এরপর তীরন্দাজের পরিবেশনায় মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘সারারাত্তির’। নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন দীপক সুমন, লিখেছেন বাদল সরকার। বিউটি বোর্ডিংয়ের মতো খোলা আড্ডার মঞ্চে নাটক মঞ্চস্থ করা প্রসঙ্গে নির্দেশক দীপক সুমন বলেন, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে হল বরাদ্ধ পেতে নানান রাজনৈতিক বাধার মুখে পড়তে হয় নাট্যকর্মীদের। সব কথা আবার বলাও যায় না। সুন্দরবন নিয়ে কথা বললে হল বরাদ্ধ দেওয়া হয় না। তাই আমাদের বিকল্প পন্থায় নাটক মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।’
ছবি : মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ