বিভিন্ন ক্লাবে ক্যাসিনো, জুয়া, মাদক আর অবৈধ স্পা সেন্টারে চলমান অভিযানের মধ্যে রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় আওয়ামী লীগের দুই নেতা এনামুল হক এবং রূপন ভূঁইয়ার বাড়ি থেকে ৭২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় সারাদেশে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই পরিমাণ সোনা বড় কোনো জুয়েলার্স বা স্বর্ণের দোকানেও থাকে না। বিপুল স্বর্ণের পাশাপাশি ওই বাড়ি থেকে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব।
র্যাব বলছে, সম্প্রতি রাজধানীতে ধরা পড়া যুবলীগ নেতার ক্যাসিনো চক্রের সদস্য আওয়ামী লীগের এই দুই নেতা। অংশীদার হিসেবে তাদের কাছে ক্যাসিনোর টাকা যেত। আর সেই টাকা রাখতে বেশি জায়গা লাগে বলে স্বর্ণ কিনে তা ভল্টে রাখতেন তারা। টাকার পরিমাণ আরো বেড়ে যাওয়ায় মাত্র কয়েকদিন আগে আরো পাঁচটি ভল্ট বানানোর অর্ডার দেন তারা।
মূলত সোমবার মধ্যরাতের পর শুরু হওয়া ওই অভিযান শেষ হয় মঙ্গলবার বিকালে। দুই নেতার বাড়িতে ছিল তিনটি ভল্ট, তা খোলার পর সেখান থেকে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা, প্রায় আট কেজি (৭২০ ভরি) স্বর্ণ এবং ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায়। তবে যাদেরকে নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে, সেই এনামুল হক এবং রূপন ভূঁইয়াকে ধরতে পারেনি পুলিশ। র্যাবের ধারণা অভিযানের আগেই তারা সটকে পড়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, সম্প্রতি অভিযানের মধ্যে এনামুল কয়েকদিন আগে থাইল্যান্ড চলে যান। আর রুপন ভূঁইয়া পলাতক।
তার মানে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া অভিযানের পর যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, এস এম গোলাম কিবরিয়া (জিকে) শামীম ও কৃষক লীগ নেতা ও কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ গ্রেপ্তার হওয়ায় চিহ্নিত অনেকেই পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এমন কি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে নিয়ে এতো আলোচনা, সেই সম্রাটকেও খুঁজে পাচ্ছে না র্যাব-পুলিশ।
আর এই বিষয়টা নিয়েই জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কেননা সাধারণ মানুষ এমন অভিযানের জন্য সরকারে সাধুবাদ জানিয়েছে, বাহবা দিয়েছে। কিন্তু বিতর্কিত ব্যক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ একে ‘নাটক’ বলেও মন্তব্য করছেন।
এটা ঠিক, এই অভিযান শুরু হয়েছে একটা তালিকা ধরে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা তা স্বীকারও করেছেন। তাহলে কীভাবে বিতর্কিত নেতারা পালানোর সুযোগ পেল? আবার অভিযান যখন শুরু করাই হলো; একযোগে সেই অভিযান চালানো হলো না কেন? একটি অভিযান চালানোর খবর পেয়ে অন্যরা সতর্ক হয়ে যাবে, এটাই কি স্বাভাবিক নয়? আবার দেখা গেল- র্যাবের অভিযানের দুইদিন পর অভিযানে নামলো পুলিশ। এখানেও কি সমন্বয় ছিল?
সব মিলিয়ে আমাদের মনে হয়েছে, আরো পরিকল্পিতভাবে এই অভিযান পরিচালনা করা যেত। তাহলেই অবৈধ পথে ‘টাকার কুমির’ বনে যাওয়া এসব বিতর্কিত নেতাদের খুব সহজে আটকে ফেলা সম্ভব হতো। তারপরও আমরা মনে করি, এখনো সময় আছে অবৈধ পথে শত শত কোটি টাকার মালিকদের শায়েস্তা করার।