মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশে ৯ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরে
রাজধানীর ইএমকে সেন্টারে বক্তব্য রাখেন। বক্তৃতা শেষে সময় স্বল্পতার কারণে
সাংবাদিকদের মাত্র দু’টি প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। সেখানেই তিনি প্রশ্নের
জবাবে বলেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদের সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে না। এ
ব্যাপারে বালিতে মুখ গুঁজে নেই বাংলাদেশ।
চ্যানেল আই অনলাইন পাঠকদের জন্য সাংবাদিকদের প্রশ্ন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উত্তরের বিস্তারিত:
প্রশ্ন (স্টিভ হারম্যান, ভয়েস অফ আমেরিকা): বাংলাদেশ সরকারের দাবি, এখানে ক্রমবর্ধমান জটিল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলোর প্রাথমিক উৎপত্তি এ দেশেই। আমি এবং আমার সহকর্মী যে বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলেছি তারা এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে বালিতে মুখ গুঁজে আছে। আপনি কি এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত? আর আপনার সফরের মধ্য দিয়ে কি ওয়াশিংটন আর ঢাকার মধ্যকার নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদারের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত উঠে এসেছে?
জন কেরি: উত্তর হলো হ্যাঁ। আসলে সবার আগে উত্তর হলো আমি মোটেও বিশ্বাস করি না যে বাংলাদেশ সরকার বালির মধ্যে মাথা গুঁজে আছে। আমি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে খুবই খোলামেলা আলোচনা করেছি। এবং আমরা পরিষ্কার করেছি যে, ইরাক ও সিরিয়ায় সক্রিয় আইএসের সঙ্গে বিশ্বের আটটি জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগের প্রমাণ রয়েছে। এই আটটি জঙ্গি সংগঠনের একটি দক্ষিণ এশিয়ায়। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গিদের যে কোনো পর্যায়ে যোগাযোগ আছে, এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।
আমার মনে হয় যখন মন্ত্রীরা বলেন, ‘এ দেশে বেড়ে ওঠা’, তার মানে এটা নয় যে বিদেশি যোদ্ধারা এখানে এসে এটা করছে। এখানকারই কেউ কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মানে এই নয় যে, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে অন্য জায়গা থেকে তারা প্রভাবিত হচ্ছে না।
তাই মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিবিড়ভাবে সহযোগিতার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে আমরা পুরোপুরি একমত হয়েছি যেখানে আমাদের গোয়েন্দা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ একযোগে কাজ করবে। সবাইকে নিয়ে কাজ করা এবং অপরাধীদের প্রতি কঠোর হলেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষাসহ এর সবগুলো দিক নিয়ে আমরা কথা বলেছি।
আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে কমিউনিটি পুলিশিং প্রকল্পগুলোতে কাজ করছি। এখন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ বাড়াতে এবং কমিউনিটি লিডারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সুতরাং আমরা নিশ্চিত, আমাদের সহযোগিতা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবেলা করতে বাংলাদেশ সরকারকে দিনে দিনে আরও বেশি সাহায্য করবে। আমরা আরও কার্যকর দক্ষতা তৈরি করতে পারব, এ ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।
প্রশ্ন (রাহীদ এজাজ, প্রথম আলো): এখানে আসার সময় বাংলাদেশ ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ধরে রাখা নিয়ে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আপনারা কি কোনো বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন? আপনি কি বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে স্থায়ী ভূমিকায় দেখতে চান?
জন কেরি: হ্যাঁ। আমরা বৃহৎ পরিসরের পাশাপাশি কিছু বিশেষ বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছি। আমরা বঙ্গোপসাগর এলাকা টহলের জন্য ‘কাটার’ দিয়েছি। এবং আমরা মনে করি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ রুখতে ভূমিকা রাখবে, তৃণমূল পর্যায়ের এমন কিছু প্রকল্পে আমরা যৌথভাবে কাজ করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে জাতিসংঘ শরণার্থী সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং বাংলাদেশ ওই সংলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সুতরাং আমি বলব, শুধু বঙ্গোপসাগর নয়, বর্তমানে সব বিষয়েই বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পূর্ণ খোলামেলা ও ব্যাপক পরিসরের সম্পৃক্ততা রয়েছে। গ্লোবাল কমিউনিটি এঙ্গেজমেন্ট অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ফান্ড হলো মৌলবাদ ঠেকাতে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর যোগ্যতা বৃদ্ধিতে তৃণমূল প্রচেষ্টাগুলোর সমর্থনে গৃহীত একটি নতুন প্রকল্প। বাংলাদেশ এই প্রকল্পের প্রাথমিক অংশগ্রহণকারী। এই সফরের ফলাফল হিসেবে আমরা এসব বিষয়ে সামনের দিনগুলোতে আরও ব্যবস্থা নেবো।
উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বিসওয়াল ও দলের বাকি সদস্যরা এগুলোকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। সুতরাং আমি মনে করি এই সূত্র ধরে আপনারা আমাদের আরও সক্রিয়তা, সংশ্লিষ্টতা এবং হয়তো আরও বেশি উপস্থিতি দেখবেন।
আমাদের আলোচনা থেকে পরিষ্কার হয়েছে, দায়েশ (আইএস), বোকো হারাম, আল-শাবাব, জাইশ আল-ইসলাম, আহরার আল-শামসহ বিশ্বের অগণিত দলগুলোর বিপক্ষে কোনো দেশই জিততে পারবে না যদি আমরা পরস্পর তথ্য, নতুন কার্যপদ্ধতি এবং নতুন উদ্ভাবনী কলাকৌশল আদান-প্রদান না করি। এক্ষেত্রে যোগাযোগ আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আপনারা জানেন, যুক্তরাষ্ট্র ৬৭টি দেশের একটি জোট গঠন করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়তে কাজ করে যাচ্ছে।
আমরা লক্ষণীয় অগ্রগতি করেছি। দায়েশ চাপের মধ্যে আছে, মানুষ দলটি থেকে পালাচ্ছে – এখন এমন বহু সংবাদ আমি পড়ছি।… সুতরাং আমাদের কাজ হলো আর্থিক, বিদেশি যোদ্ধা, যোগাযোগ, এবং বিশেষ করে প্রতিরোধে ভূমিকা রাখা যেন শিক্ষা, চাকুরি, ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা এবং সমাজে জবাবদিহিতা তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখাতে পারে, হতাশা নয়।
এখানে সন্ত্রাসী দলগুলোতে লোক নেয়ার বিরুদ্ধে কাজ করাও একটি বড় বিষয়। একই সঙ্গে সুশাসনের ভূমিকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।