প্রস্তাবিত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটকে জনকল্যাণমুখী ও ব্যবসা সহায়ক হিসেবে অভিহিত করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
সংগঠনটি বলেছে, এই বাজেট দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে। তবে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সেজন্য সরকার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে জাতীয় বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এসব কথা বলেন।
শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, তারা বাজেট নিয়ে আরও বিশ্লেষণ করছেন, ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর মতামতের ভিত্তিতে বিস্তারিত প্রস্তাবনা পরবর্তী সময়ে অর্থমন্ত্রীকে দেবেন।
তিনি বলেন, ২০১২ সালের ভ্যাট আইনটি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এখন মাল্টিপল রেট (বিভিন্ন স্তর) আছে। সেই চর্চার সঙ্গে যারা জড়িত না সেখানে সীমাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। আইনটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আবারও এফবিসিসিআইয়ের কোনো দূরত্ব তৈরি হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহিম বলেন, ‘আমরা মনে করিনা এনবিআরের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব আছে। কারণ দেশের সব সরকারি-বেসরকারি সংগঠনগুলোকে আমাদের সবার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করতে হয়। এখানে দূরত্ব কথাটির সঙ্গে আমরা একমত নই।’
লিখিত বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, বাজেটে কৃষকের স্বার্থে শস্যবীমা চালু একটি প্রগতিশীল উদ্যোগ। বছরব্যাপী কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য ও সুষ্ঠু সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করতে স্থানীয় পর্যায়ে গুদাম নির্মাণ ও উন্নয়নের উদ্যোগও সময়োপযোগী।
পোশাক খাত নিয়ে তিনি বলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা শিল্পখাতের বিকাশকে উৎসাহিত করবে। তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ১ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান এবং হ্রাসকৃত করহার বহাল রাখার সিদ্ধান্ত রপ্তানি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ সহায়ক হবে।
তবে নতুন বাজেটে ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাতের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বৈদেশিক উৎস, অবকাঠামো ফান্ড ও বন্ড এবং অন্যান্য ফিন্যান্সিয়াল টুলস এর উপর জোর দেয়ার অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ফাহিম বলেন, সরকার যদি বেশি মাত্রায় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় তাহলে এর প্রভাব বেসরকারি খাতে পড়বে। ব্যাংকিং খাতের উপর থেকে চাপ কমাতে অন্যান্য উৎস থাকলে ভালো হয়।
কালো টাকা বিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাজেটে কালো টাকার কথা বলা নেই। সেখান অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের কথা বলা আছে।
তিনি বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে যাবে৷ আমরা চাই ইনফরমাল ইকোনমি ফরমাল ইকোনমিতে আসুক। অপ্রদর্শিত অর্থের উৎস যেহেতু সঠিক আছে সেহেতু আমরা প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই।
প্রস্তাবিত বাজেটকে কেন ব্যবসা বান্ধব বলছেন- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে এফবিসিসিআইর সহ সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘অতীতের বাজেটগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এই বাজেটে কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসার সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলেও তা আলোচনার মাধ্যমে সংশোধনের সুযোগ এখনও আছে।’
রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা সহজ, স্বচ্ছ এবং ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আদায় করা হবে এবং হয়রানীমুক্ত হবে বলে আশা করছে এফবিসিসিআই।
সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।