বাংলাদেশ-ভারতের সর্ম্পক আরও উন্নতির দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
কক্সবাজারে ‘বাংলাদেশ-ভারত কৌশলগত অবস্থান’ বিষয়ে দুদিন ব্যাপী ‘বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব সংলাপ’র উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস।
স্পিকার বলেন: বাংলাদেশ-ভারত সর্ম্পক এ সংলাপের মাধ্যমে অনেক উচ্চমাত্রায় চলে গেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে ভারত সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিল। দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের সর্ম্পক আরো উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু-ইন্দিরা গান্ধী চুক্তিসহ বাংলাদেশ-ভারতের একাধিক সফল চুক্তির কথা উল্লেখ করে ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত রপ্তানী বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন স্পিকার।
তিনি বলেন: বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং ঐতিহাসিক। এই সম্পর্ক আগামীতে আরো সুদৃঢ় হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ ভারতের এই ত্যাগের কথা কোনো দিন ভুলবে না। গভীর বন্ধুত্বের কারণে অব্যাহত রয়েছে দু’দেশের উন্নয়ন। আমরা ভারতের বিভিন্ন পন্য আমদানি অব্যাহত রেখেছি। সেই অনুপাতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানী কম।
স্পিকার বলেন: দু’দেশের বিরাজমান সমস্যাগুলো সুনির্দিষ্ট করে তা নিরসন ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখতে বন্ধুত্ব সংলাপ সেতুর ন্যায় ভূমিকা রাখছে। ফ্রেন্ডশিপ সংলাপ দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করবে। বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়াবে।
তিনি বলেন: বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের সরকার সন্ত্রাসবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই নীতি বিশ্বব্যাপি প্রশংসা পেয়েছে।
স্পিকার এসময় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সংসদীয় সহযোগিতা বাড়ানোর উপরও গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন: স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ করতে সহযোগিতা দেয় ভারত। এরপর বঙ্গবন্ধু সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে দেশ গঠনে সহযোগিতা অব্যাহত রাখেন ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে সহযোগিতা পায়। চলমান সময়েও ভারত থেকে পূর্বের ন্যায় সহযোগিতা পাচ্ছে বাংলাদেশ।
২০২০ সালে মুজিব বর্ষ ও ২০২১ সালে স্বাধীনতা অর্ধশত বছর পূর্তিতে অংশ নিতে বন্ধু দেশ হিসেবে ভারতকে আমন্ত্রণ জানান স্পিকার।
কক্সবাজারের ইনানী সৈকতের তারকা হোটেল রয়েল টিউলিপের বল রুমে শুক্রবার বিকাল ৪টায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনীতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস বলেন: সবদিক দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশের আইটি, মেডিক্যালসহ সব সেক্টরে ভারতের অংশগ্রহণ বাড়ানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুদ্ধিমত্তায় এটি সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিতে ভারত সরকার খুব খুশি। প্রতিবেশি হিসেবে আঞ্চলিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে বন্ধু হয়ে আমরা এক সাথে কাজ করে যেতে চাই।
ভারতের আসাম রাজ্যের অর্থ, উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা এবং পূর্ত মন্ত্রী হিমান্তা বিশ্ব শর্মা বলেন: দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে কাজ করা জরুরি।
বিজেপি (ভারত) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব বারানাসী বলেন: বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব বিশ্বাসের। বিশ্বাসের উপর ভর করে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা দিয়েছে ভারত। এর ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে বিনির্মাণে ভারত পাশে রয়েছে।
বারানাশী আরও বলেন: বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। এই সংকটে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে ভারত।
কূটনৈতিক উপায়ে শীঘ্রই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গুড গভর্নেন্স’ তৈরিতে অন্যন্য নজির স্থাপন করেছেন। দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে তার সরকার অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রসংশা পেয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন: জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশ ও ভারত অভিন্ন নীতিতে কাজ করছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই দেশ আগামীতে সহযোগিতার হাত আরও বাড়িয়ে দিয়ে কাজ করবে বলে আশা করি।
অনুষ্ঠানে বিআইএমএসটিইসি সাধারণ সম্পাদক এম শহিদুল ইসলাম, ফ্রেন্ডশীপ বাংলাদেশের সভাপতি ও টেকনো ইন্টারন্যাশরাল কলেজ অব টেকনোলজির পরিচালক ড. রাধা তমাল গোস্বামী, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, আমিনুল ইসলাম, ফ্রেন্ড বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক আ স ম সামশুল আরেফীন, স্থানীয় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, সাইমুম সরোয়ার কমল, কউক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ, জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং দু’দেশের সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ।
শনিবার দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘কক্সবাজার ঘোষণা’র মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে এই ডায়লগ।
তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, জ্বালানী খাত সহ সম্ভাবনাময়ী আরো বিভিন্ন খাতের সার্বিক উন্নয়ন ডায়লগে আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
এই সংলাপে মন্ত্রীসহ ভারতের ২৬ জন এবং সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ বাংলাদেশের ৫৪ জন প্রতিনধি অংশ নিচ্ছে।