চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান: ইতিহাস কী বলছে?

টাইগারদের তিন নকআউটের প্রথমটি আজ

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের হোঁচট বাংলাদেশের স্বপ্নের পরিধি আরও প্রসারিত করেছে। সেমিফাইনালের ডুবতে বসা স্বপ্ন জেগে উঠেছে। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেয়ার মিশনে তিনটি কঠিন বাধা পার হতে হবে টিম টাইগার্সকে। সোমবার তিন নকআউটের প্রথমটি, তথা- তিন অঘোষিত সেমিফাইনালের প্রথমটিতে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দলের প্রতিপক্ষ টেবিলের তলানির দল আফগানিস্তান।

বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরে নিজেদের প্রথম ছয় ম্যাচে দুটি জয় ও একটি পরিত্যক্তর সুবাদে ৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ছয়ে আছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তান ম্যাচের পর টাইগারদের শেষ দুটি ম্যাচ ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। সবগুলো ম্যাচেই জিততে পারলে এবং অন্যদের ম্যাচের ফলাফল পক্ষে আসলে সেমির দরজা খুলতে পার তামিম-সাকিবদের জন্য।

শ্রীলঙ্কা ম্যাচ ছাড়া বাকি ম্যাচগুলোতে ধুঁকতে থাকা আফগানিস্তান বাংলাদেশ ম্যাচের আগে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে। শনিবার ভারতকে প্রায় হারিয়েই দিয়েছিল আফগানরা! শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় হেরে গেলেও বাংলাদেশ ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে রশিদ-নবিদের। সাউদাম্পটনে কয়েকঘণ্টা পর শুরু ম্যাচে মাশরাফীদের কাজটা কঠিন করে তুলতে পারে আফগানিস্তান।

এবারের আসরে বাংলাদেশ যে কয়টি ম্যাচে জয়ের ছক কষেছে, তারমধ্যে অন্যতম ছিল শ্রীলঙ্কা ম্যাচ। বৃষ্টির কারণে সেই ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় হতাশা নেমে আসে টাইগার ড্রেসিংরুমে। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে জিততে হারার যন্ত্রণা!

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে পরে কক্ষপথে ফিরলেও সেমিফাইনালের ন্যুনতম স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে বাকি তিন ম্যাচেই জয়ের বিকল্প নেই টাইগারদের। সেমিফাইনালের আগে তাই তিন-তিনটি নকআউটের বাধা, বলতে গেলে সেমির আগে তিন সেমি লাল-সবুজদের।

ইতিহাস অবশ্য বাংলাদেশকে উজ্জীবিতই করবে। ১৯৯২ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান এবং ১৯৯৯ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকেও এমন ডু-অর-ডাই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। অনেক যদি ও কিন্তুর সমীকরণ মিলিয়ে দল দুটি সেই আসরগুলোতে ফাইনালে যায়, শিরোপা উৎসবও করে। পাকিস্তান কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো বাংলাদেশ কিছু করে দেখাতে পারবে কি না তার উত্তর এখনো অনেক দূরে। তবে স্বপ্ন দেখতে বাধা নেই! কারণটা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে মেলা সাফল্য।

মুখোমুখি ইতিহাস
ওয়ানডেতে এপর্যন্ত ৭বার আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। যার ৪টিতে জয় টাইগারদের, ৩টিতে মেলেনি সাফল্য। তবে বিশ্বকাপে একবারের দেখায় জয়ী দলটির নাম বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে গত আসরে দারুণ জয়টি তুলে নিয়েছিল মাশরাফীর দল। সেই ম্যাচের নায়ক সাকিব এবার আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। বিশ্ব আসরের মঞ্চে এক হাজার রানের মাইলফলক থেকে কেবল ৩৫ রান দূরে আছেন। মাশরাফীর সামনেও আছে মাইলফলক। আর ২টি উইকেট পেলেই অধিনায়ক হিসেবে উইকেটের সেঞ্চুরি হাঁকাবেন ক্যাপ্টেন ম্যাশ।

ফ্যাক্ট
টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের দুর্ভাবনার বড় নাম বোলিং। চলতি বিশ্বকাপে শক্তিশালী সাউথ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতলেও সেটি ছিল ব্যাটসম্যানদের নৈপুণ্যে। তিনশ তাড়া করতে হয়েছে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বোলারদের ধুঁকতে দেখা গেছে। দু ম্যাচেই উঠেছে পৌনে চারশো কাছে রান। ভারত ও পাকিস্তান ম্যাচের আগে তাই বোলাররা ছন্দ ফিরে পাওয়ার মোক্ষম সুযোগই পাচ্ছেন।

নজর থাকবে যাদের উপর
সাকিব আল হাসান: ব্যাটিং-বোলিংয়ে বাংলাদেশের উজ্জ্বলতম নাম তিনি। টুর্নামেন্টের বর্তমান পারফরম্যান্স বিবেচনায় বিশ্বকাপের অবিসংবাদিত সেরা খেলোয়াড়দের একজন। বাংলাদেশকে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করার স্বপ্ন দেখছে, সেই স্বপ্নের প্রথম সারির সারথি সাকিব। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এখন পর্যন্ত। বল হাতেও সাফল্য পাচ্ছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্যুতি ছড়াতে পারেন আসরে ৫ ইনিংসে দুটি করে সেঞ্চুরি ও হাফসেঞ্চুরি করা অলরাউন্ডার। আর মাত্র ৩৫ রান করলেই বিশ্বকাপে এক হাজার রানের মাইলফলক ছোঁবেন সাকিব।

রশিদ খান: ভারতের বিপক্ষে বল হাতে দারুণ নৈপুণ্য উপহার দিয়েছেন রশিদ খান। নিজের প্রথম ৪ ওভারে ২৫ রান দেন তিনি। শেষদিকে ৬ ওভার বোলিং করে মাত্র ১৩ রান দিয়েছেন কার্যকরী স্পিনে। সবমিলিয়ে ১০ ওভারের স্পেলে ৩৮ রান দিয়ে ১ উইকেট দখলে। খুব আহামরি পারফরম্যান্স নয়, পরিসংখ্যান হয়তো এটাই বলছে। তবে ডেথ ওভারগুলোতে দুই সেট ব্যাটসম্যান এমএস ধোনি ও কেদার যাদবকে যেভাবে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন, সেটি ছিল চোখে পড়ার মতো। সাউদাম্পটনের পিচ স্পিনারদের সহায়তা করে, রশিদ বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন তাতে। টেলএন্ডে দারুণ ব্যাটিংও করতে পারঙ্গম তিনি। সবমিলিয়ে রশিদকে নিয়ে বাড়তি সতর্কতা থাকতে হবে বাংলাদেশের।

টিম নিউজ
বাংলাদেশ: ম্যাচের একদিন আগে অনুশীলনের সময় মাথায় কিছুটা আঘাত পান মেহেদী হাসান মিরাজ। ইনজুরি নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই জানানো হলেও আফগানিস্তান ম্যাচে মিরাজের খেলা নিয়ে শঙ্কা থেকেই গেছে। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ইনজুরি কাটিয়ে ফেরায় একাদশে ঢুকবেন। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ইনজুরি থেকে পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯ ওভারে ৮৩ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকা রুবেল হোসেনকে একাদশের বাইরে রেখে ফেরানো হতে পারে সাইফউদ্দিনকে। মোসাদ্দেককে জায়গা দিতে বেঞ্চে বসতে হবে সাব্বির রহমানকে। তবে মিরাজ ফিট হয়ে উঠতে না পারলে মোসাদ্দেকের পাশাপাশি সাব্বিরকেও একাদশে দেখা যেতে পারে।

আফগানিস্তান: আফগান দল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথে হাঁটবে না বলেই মনে হচ্ছে। ভারত ম্যাচের একশো নিয়েই বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামতে পারে প্রথম জয়ের খোঁজে থাকা দলটি।

সম্ভাব্য একাদশ
বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান/মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমান।

আফগানিস্তান: হযরতুল্লাহ জাজাই, গুলবাদিন নায়েব, রহমত শাহ, হাসমতুল্লাহ শহিদি, আসগর আফগান, মোহাম্মদ নবি, নাজিবুল্লাহ জাদরান, ইকরাম আলি খিল, রশিদ খান, আফতাব আলম ও মুজিব-উর রহমান।