অবশেষে বাংলাদেশে আসছে অস্ট্রেলিয়া। সব ঠিক থাকলে ১৮ আগস্ট ঢাকার মাটিতে পা পড়তে যাচ্ছে অজিদের। বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটারদের মাসব্যাপী বেতন-ভাতা দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়েই বাংলাদেশ সফরে আসছে অজিরা। তাদের জন্য কঠোর ঘাম ঝরানো প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ দলও।
দীর্ঘ ১১ বছর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট খেলবে অস্ট্রেলিয়া। টাইগারদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দেখে ক্রিকেটবোদ্ধারা আভাস দেখছেন হাড্ডাহাড্ডি এক টেস্ট লড়াইয়ের। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) অফিসিয়াল সাইট ক্রিকেট ডটকম ডট এইউ খুঁজে বের করেছে এমন ৬টি কারণ, যার জন্য বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ হবে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ-
১১ বছরে অনেক বদলে গেছে বাংলাদেশে
অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলেছে ২০০৬ সালে। ফতুল্লায় দুই টেস্টের প্রথমটিতে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে ম্যাচ হেরে গিয়েছিল টাইগাররা। পরের টেস্টে জেসন গিলেস্পি নাটকীয়ভাবে পেসার থেকে ব্যাটসম্যান বনে গিয়ে হাঁকিয়েছিলেন দ্বিশতক। বাংলাদেশ টেস্টটা হেরেছিল ইনিংস ব্যবধানেই। এরপর ১১ বছরের দীর্ঘ বিরতি। অস্ট্রেলিয়া হারিয়েছে তাদের সর্বজয়ী ফর্ম, আর বাংলাদেশ দিনে দিনে প্রমাণ করেছে নিজেদের যোগ্যতা। ঢাকার মাটিতে পা ফেলে একটি দুদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে অজিরা। কিন্তু বদলে যাওয়া বাংলাদেশের বিপক্ষে এই প্রস্তুতি যথাযথ নয় বলে মত ক্রিকেট ডটকম।
অ্যাশেজের আগে নিজেদের প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠবেন অজি ক্রিকেটাররা
মাত্র তিন মাস পরেই অ্যাশেজ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে মুখোমুখি হওয়ার আগে অজিদের হাতে আছে কেবল বাংলাদেশ সফর। তাই অ্যাশেজে খেলতে হলে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে মরিয়া থাকবেন দেশটির ক্রিকেটাররা। চোটের কারণে মিচেল স্টার্ক এবং জেমস প্যাটিনসনরা আসতে পারবেন না। তাদের জায়গায় দলে আসা জ্যাকসন বার্ড এবং মিচেল সোয়েপসনকে যদি অ্যাশেজে খেলতে হয়, তাহলে টাইগারদের বিপক্ষে প্রমাণ দিতে হবে আগে। আর বাংলাদেশ তো তৈরি হয়েই থাকছে। অজিদের কঠিন পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত আছেন তামিম-মুশফিকরা। লড়াই তাই জমবে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক টেস্ট ফর্ম
টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে নয়ে আছে বাংলাদেশ। কিন্তু র্যাঙ্কিং বোঝাতে পারছে না টাইগারদের সাম্প্রতিক ফর্ম। গত অক্টোবরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ইংল্যান্ডের সঙ্গে ঘরের মাটিতে প্রথমবারের মত টেস্ট সিরিজ ড্র করেছে মুশফিক বাহিনী। শ্রীলঙ্কার মাটিতেও লঙ্কানদের হারিয়ে টেস্ট সিরিজ ড্র করেছে টাইগাররা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শেষ চারের একটি দলের নাম বাংলাদেশ। অজিদের ধবলধোলাইয়ের হুংকার দিয়ে রেখেছেন টাইগার কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে, ‘আমরা টেস্টে কিছু উন্নতি করতে পেরেছি। এখন জানি কীভাবে টেস্ট জিততে হয় এই উপমহাদেশে, সেভাবে পরিকল্পনা করতে পারি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি টেস্টেই আমরা জিততে চাইব। আমাদের কন্ডিশনে খেলা, প্রতিযোগিতামূলক সিরিজই হবে।’ অর্থাৎ, দেখার মত লড়াই একটা হবেই!
খেলার মধ্যে নেই অস্ট্রেলিয়া
গত মার্চে ভারতের কাছে ২-১ ব্যবধানে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি হারানোর পর আর টেস্ট খেলা হয়নি অজিদের। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ডারইউনে বাংলাদেশ সফরের জন্য কন্ডিশনিং ক্যাম্প করার কথা থাকলেও বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটারদের বেতন-ভাতা নিয়ে দ্বন্দ্বে এক মাস খেলার মাঝে ছিলেন না স্মিথ-ওয়ার্নাররা। অবসান হয়েছে দ্বন্দ্বের। প্রস্তুতিও শুরু করেছেন ক্রিকেটাররা। তবে এই প্রস্তুতিকে অপ্রতুল বলে দাবি ক্রিকেট ডটকমের! আর বাংলাদেশের সঙ্গে যদি হার দেখে অস্ট্রেলিয়া, তাহলে পূর্ণ হবে সর্বনাশের ষোলোকলা। বোর্ডের ক্ষোভের কোপ পড়তে পারে অনেক সিনিয়র ক্রিকেটারের ওপর। সেটা নিশ্চয় হতে দিতে চাইবেন না স্মিথ-ওয়ার্নাররা। বাংলাদেশ যখন এত সহজে ছেড়ে দেবে না অজিদের, লড়াই তো জমারই কথা!
অজিদের এশিয়া জুজু
সম্প্রতি টেস্টে ধুঁকছে শ্রীলঙ্কা। ভারতের বিপক্ষে হেরেছে সিরিজ। অথচ এই নড়বড়ে লঙ্কানদের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের কাছে ২-১ এ হেরেছে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে। এশিয়ার মাটিতে সবশেষ ১৩টি টেস্টের ১১টিতেই হার দেখেছে অজিরা। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২-০তে সিরিজ জেতার পর আর কোনও এশিয়ান দলকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারেনি বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। সেখানে নিজেদের মাটিতে রীতিমত বাঘ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতিও সেরে রেখেছে টাইগাররা। এবার যেকোনো মূল্যে স্মিথ বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করতে মরিয়া মুশফিক বাহিনী। মাঠের উত্তাপ তাই প্রত্যাশিতই!
মোস্তাফিজ বনাম ওয়ার্নার
২০১৬ আইপিএল থেকেই সুসম্পর্ক ডেভিড ওয়ার্নার এবং মোস্তাফিজুর রহমানের। সে বছর সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে শিরোপা জেতাতে মূখ্য ভূমিকা ছিল এই দুজনের। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও দুদলের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠতে পারেন ওয়ার্নার-মোস্তাফিজ। তবে চোট থেকে সেরে ওঠার পর থেকেই ঠিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ফিজকে। কন্ডিশনিং ক্যাম্পে বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে কাজ করছেন নিজেকে ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে। আর এশিয়ার মাটিতেও ওয়ার্নার ঠিক ওয়ার্নারসুলভ নন। এশিয়ার মাটিতে ১৩ টেস্টে এই বাঁহাতি মারকুটে ব্যাটসম্যানের গড় ৩০.৩৮। অথচ ওয়ার্নারের টেস্ট গড় ৪৭.৪২! বন্ধুতা ভুলে দুজনেই চাইবেন একে অপরের বিপক্ষে জ্বলে উঠতে। লড়াইয়ের মাঝেও তাই থাকবে খণ্ড-খণ্ড লড়াই!