চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বাংলাদেশে থাকলে মার্গারিটাকে কোচিং সেন্টারে দৌড়াতে হতো

বাংলাদেশী বাবার রাশিয়ান মেয়ে জিমন্যাস্ট মার্গারিটা মামুন এবারের অলিম্পিকে জয় করেছেন সোনা। সেই মার্গারিটা যদি রাশিয়ায় জন্ম না নিয়ে বাংলাদেশেই বড় হতেন তাহলে তার কি হতো? সেই বিষয়েই এবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন সাংবাদিক রুহুল মাহফুজ জয়।

এক ফেসবুক পোস্টে রুহুল মাহফুজ জয় লিখেছেন, মার্গারিটা মামুন জিতলে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজে না। পদক তালিকায় বাংলাদেশের নামও ওঠে না। কিন্তু রিটার সঙ্গে দ্য বেঙ্গল টাইগার উচ্চারিত হয়। সেটা হয় বাংলাদেশের জন্যই। রিটার বাবা বাংলাদেশের রাজশাহীর মানুষ। মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক রাশিয়ায় থাকেন। বিয়ে করেছিলেন রাশান সাবেক জিমন্যাস্ট আনাকে। জুনিয়র লেভেলে রিটা বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন। এই যে মার্গারিটার নামের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম আষ্টেপৃষ্ঠে, এটাও কম গর্বের বিষয় না। রিটার শরীরে তো বাংলার রক্ত বইছে, না?

অনেকেই আফসোস করছেন, মার্গারিটা মামুন কেন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন না। এটা হলে পদক তালিকায় বাংলাদেশের নাম উঠতো। তা উঠতো বৈকি! কিন্তু মার্গারিটা কেন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিশ্বমঞ্চে লড়বে? তাকে তো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে বাংলাদেশ তৈরি করেনি। বাংলাদেশ রাষ্ট্র তো রিদমিক জিমন্যাস্ট রিটার পরিচর্যার দায়িত্ব নেয়নি। রাশিয়া সেই দায়িত্ব পালন করেছে। তাই মার্গারিটার প্রতি দাবীটা তাদেরই বেশি।

এরপরে রুহুল মাহফুজ জয় লিখেছেন, মার্গারিটা যদি বাংলাদেশে থাকতো, তার মা যদি রাশান না হতেন, হয়তো তার জিমন্যাস্ট হওয়া হতো না। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য মা উঠে-পড়ে লাগতেন। বইয়ের বিরাট এক বোঝা নিয়ে স্কুল-কলেজ-কোচিং সেন্টারে দৌড়াতে হতো। যদি জিমন্যাস্ট হতেনও, পরিচর্যার অভাবে ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে অলিম্পিকে অংশ নিতে হতো। স্বর্ণপদক জেতার স্বপ্ন দেখাও তো দূরে থাক, অংশগ্রহণই বড় কথা শ্লোগান নিয়ে হিটেই বাদ পড়তেন। দু-একটা সেলফি তোলাই হতো তার অর্জন। অথবা অলিম্পিকে যেতেই পারতেন না। তাকে বাদ দিয়ে গায়ে হাওয়া লাগাতে যেতেন কোনো ভুড়িওয়ালা কর্মকর্তা।

সবশেষে রুহুল মাহফুজ জয় লিখেছেন, এরকমই তো হয়ে আসছে বছরের পর বছর। এবারও তো সাত অ্যাথলেটের বিপরীতে ১২ জন কর্মকর্তা গেছেন অলিম্পিকে। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সরকারি খরচে ব্রাজিল ঘুরে এসেছেন। এতে বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে কী যোগ হয়েছে, তা ওনারাই জানেন। গেমসে সর্বাধিক পদকজয়ী যুক্তরাষ্ট্র, এখনও পর্যন্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা গ্রেট বৃটেন আর চীনের কোনো মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা রিও ডি জেনিরোতে ঘুরতে গেছেন কীনা, তার কোনো খবর আমরা পাইনি। যে টাকাটা ওই ভ্রমণে খরচ হয়েছে, তা দিয়ে হয়তো আব্দুল্লাহ হেল বাকী বিদেশে গিয়ে ছয়মাস উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে পারতেন, কোনো পদকও পেতে পারতো বাংলাদেশ।

এসব হবে না। অলিম্পিকের পর অলিম্পিক আসবে, আমার সোনার বাংলা বাজবে না। পদক তালিকায় বাংলাদেশের নাম উঠবে না। মার্গারিটা মামুনদের সঙ্গে লতায়-পাতায় বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক খুঁজে আমাদের তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে হবে, গর্ব খুঁজতে হবে। ওই যে, অংশগ্রহণই বড় কথা!