এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
খেলা শুরুর আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে অভিষেকের জন্য ক্যাপ বুঝে নেন তানজিদ হাসান তামিম। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটার দিনটিকে ব্যাট হাতে রাঙিয়ে রাখলেন। সময় উপযোগী ফিফটিতে দলের জয়ে রাখলেন ভূমিকা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ৮ উইকেটের সহজ জয় পেল বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুক্রবার বিদারাত্রির ম্যাচে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামে জিম্বাবুয়ে। শেখ মেহেদী হাসান-তাসকিন আহমেদ-সাইফদ্দিন আহমেদের বোলিং তোপে সফরকারীরা নির্ধারিত ২০ ওভারে ১২৪ রানে অলআউট হয়। সহজ লক্ষ্য তাড়ায় টিম টাইগার্স ২৮ বল হাতে রেখে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে বিজয় নিশ্চিত করে।
১২৫ রানে জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দেখেশুনে খেলছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে সাজঘরে ফেরেন কোনোভাবেই নিজেকে ফর্মে ফেরাতে না পারা লিটন দাস। বাংলাদেশের ডানহাতি এ ব্যাটার ৩ বল খেলে এক রানে ব্লেসিং মুজারবানির বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন। ইনসুইং ডেলিভারিতে দৃষ্টিকটুভাবে লিটনের ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে বল স্টাম্পে আঘাত হানে।
এরপর আসে বৃষ্টির বাধা। খেলা বন্ধের আগে তিন ওভার খেলা শেষে এক উইকেট হারিয়ে ১০ রান সংগ্রহ করেছিল টিম টাইগার্স।
বৃষ্টির পর আবারো শুরু হয় খেলা। চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে ব্লেসিং মুজারাবানির বলে পুল করতে গিয়ে বল আকাশে তুলেছিলেন তানজিদ। জিম্বাবুয়ের উইকেটরক্ষক মাদান্দে ক্যাচ নিতে গিয়ে সতীর্থের সঙ্গে সংর্ঘষে মিস করেন। একই ওভারের শেষ বলে কাভারে তানজিদের ক্যাচ ছাড়েন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা।
৭.২ ওভারে স্কোর যখন এক উইকেটে ৪৪, চট্টগ্রামে দ্বিতীয় দফা নামে বৃষ্টি। বেশ খানিকক্ষণ খেলা বন্ধ থাকলেও ওভার কাটা যায়নি।
টি-টুয়েন্টির স্বভাব বিরুদ্ধ ব্যাটিংয়ে ২৪ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলে শান্ত সাজঘরে ফেরেন। লুক জংওয়ে তার দ্বিতীয় বলেই পান উইকেট। ডিপ মিডউইকেটে টাইগার অধিনায়ক শন উইলিয়ামসের তালুবন্দি হন। তাতে ভাঙে দ্বিতীয় উইকেটে ৫২ রানের জুটি।
বাঁহাতি তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম করতে থাকেন সাবলীল ব্যাটিং। টি-টুয়েন্টি অভিষেকেই ৩৬ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। জুনায়েদ সিদ্দিকীর পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টি-টুয়েন্টি অভিষেকে তিনি ফিফটি করেন।
ফিফটির পর ব্যক্তিগত ৫৬ রানে আবারো জীবন পান তানজিদ তামিম। একাদশ ওভারের চতুর্থ বলে রিচার্ড এনগারাভার বল উপরে তুলে দেন। উইকেটের পেছন থেকে দৌড়ে স্কয়ার লেগে ছুটে আসেন উইকেটরক্ষক গাম্বে, শেষ মুহূর্তে ডাইভ দিয়েও বল গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি।
তৃতীয় উইকেটে তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নেন তানজিদ তামিম। ৪৭ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় তানজিদ তামিম ৬৭ রানে অপরাজিত থাকেন। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে হৃদয় খেলেন ১৮ বলে ৫ চার ও এক ছক্কায় ৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংস। জিম্বাবুয়ের হয়ে একটি করে উইকেট পান মুজারাবানি ও জংওয়ে।
এর আগে জিম্বাবুয়ের ইনিংসে ধসের শুরুটা করেন ডানহাতি স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান। পাওয়ার প্লের দ্বিতীয় ওভারে রানের খাতা না খোলা ওপেনার ক্রেইগ আরভিনকে ফেরান। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বল করতে এসে জিম্বাবুয়ের ওপেনার জয়লর্ড গাম্বিকেও সাজঘরে পাঠান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। নিজের প্রথম ওভারের শেষ বলে উইকেট পান এ পেসার।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে শেখ মেহেদীর প্রথম বলে রান আউটে কাটা পড়েন ব্রায়ান বেনেট। পরের বলে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক সিকান্দার রাজাকে শূন্য রানে সাজঘরের পথ দেখান এ স্পিনার। স্লিপে তার ক্যাচটি নেন লিটন দাস। পাওয়ার প্লে শেষে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেট ৩৮ রান।
ইনিংসের সপ্তম ওভার আরও চমকে ভরা। বল করতে আসা পেসার তাসকিন আহমেদ প্রথম বলে শূন্য রানে আউট হন শন উইলিয়ামস। পরের বলে শূন্য রানে সাজঘরের পথ ধরেন রায়ান বার্ল। ৭ ওভার শেষে ৩৯ রানে ৬ উইকেকে পরিণত হয় সফরকারীরা। অষ্টম ওভারে আবারও সাইফউদ্দিনের আঘাত। এবার দুই রানে সাজঘরে ফেরেন লুক জংউই।
অষ্টম উইকেটে দারুণ এক জুটি গড়েন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ও মাদান্দে। তাদের এ জুটি থেকে আসে ৬৪ বলে ৭৫ রান। জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন মাদান্দে। এছাড়া মাসাকাদজা করেন ৩৩ রান। এরপর শেষে আবারো ব্যাটিং ধস। ৮ রান যোগ করতেই শেষ ৩ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে।
তাসকিন আহমেদ ও দীর্ঘ সময় পর জাতীয় দলে ফেরা মোহাম্মদ সাইফদ্দিন ৪ ওভারে ১৪ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া শেখ মেহেদী হাসান ৪ ওভারে ১৬ রানে ২ উইকেট পান।