বাংলাদেশের ক্রিকেট ধারাবাহিক সাফল্যের পথে হাঁটা শুরু করে হাবিবুল বাশার সুমনের নেতৃত্বে। তার অধীনে টাইগাররা জিতেছে ২৯টি ওয়ানডে। ধাপে ধাপে হাত বদল হয়ে সাফল্যের সেই মশাল দুর্বার গতিকে টেনে নিয়ে চলেছেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। হাবিবুলকে ছাড়িয়ে যেতে মাত্র এক জয় দূরে ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসটিক। জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক টাটেন্ডা টাইবু মনে করিয়ে দিলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এভাবেই টেনে নিয়ে যাবে লাল-সবুজের সাফল্যের মশাল।
‘পরম্পরা ধরেই আগাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। এখানে অনেক প্রতিভা। বাংলাদেশকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। হাবিবুলদের দেখানো পথে কেবলই এগিয়ে যাওয়ার সময় এখন।’ টাইবু একরকম নিশ্চয়তাই দিলেন সাফল্যের ঊর্ধ্বগামী রেখায় হাঁটার বিষয়ে।
চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে টাইবুর আলাপন-
বাংলাদেশে এসে কেমন লাগছে?
যতবার এখানে এসেছি, এদেশের মানুষের আতিথেয়তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সেটা টিম হোটেল থেকে শুরু করে খেলার মাঠ পর্যন্ত, সবখানে। একজন ক্রিকেটার এত জনপ্রিয় হতে পারে তা এখানে আসার আগে জানা ছিল না। ক্লাব ক্রিকেট খেলতে আসার পর আরও ভালভাবে বুঝেছি। তুষার ইমরানের সাথে ঘরোয়া লিগে খেলেছি। গতকাল ডিনারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি। এমন আন্তরিকতা সহজে সবখানে দেখা যায় না। এই কারণেই বাংলাদেশকে দেশের বাইরের আরেকটা ঘর মনে হয়।
একটা সময় খেলোয়াড় হিসেবে আসতেন, এখন জিম্বাবুয়ে দলের প্রধান নির্বাচক…
নিজেকে কখনই এভাবে পরিচিত করতে চাই না। বলে রাখা ভাল, আমি ওদের ভাই, বন্ধু। এভাবেই ভাবি। আর এখানে আসতে সবসময়ই ভাল লাগে। পাঁচবার বাংলাদেশে এসেছি। এখানে এলে বাংলাদেশি হয়ে যাই। আমার অনেক বন্ধু এখানে, প্রিমিয়ার লিগ খেলেছি বলেই। এলে প্রতিমুহূর্তে ওদের ফোন পেতে থাকি। খেলোয়াড়ি সময়ের স্মৃতি নিয়ে আড্ডা দেই। বিসিবির সাবেক এক বোর্ড পরিচালকও আমার বন্ধু। এখানে আসতে পারাটা আমার জন্য অনেক আনন্দের।
আপনার অবস্থান বদলেছে। বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে দলও এখন দুই মেরুতে। সেই বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশে কীভাবে পার্থক্য করবেন?
বাংলাদেশের উন্নতি হওয়ারই ছিল। যখন ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক হয়ে প্রথম খেলতে আসি, তখন থেকেই দেখেছি এখানে প্রতিভার অভাব নেই। হাবিুবুল বাশাররা যখন খেলত, তখন থেকেই দল লড়াই করতে শেখে। এখন জেতার ধারাবাহিকতায় চলে এসেছে। আর জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট পিছিয়ে গেছে। জিম্বাবুয়ের এইচপি দলের নির্বাচকও আমি। খেলোয়াড়রা কীভাবে নিজেদের গড়ত পারে সেই সহযোগিতা করতেই এসেছি। কীভাবে সাফল্যের পথে হাঁটা যায় সেটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
স্ট্রিক-টাইবু-চিগুম্বুরা যুগের পর সিকান্দার রাজা, পিটার মুরদের মতো পারফর্মাররা দলে। তারা জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের মশাল বইতে পারবেন?
ওদের জানার আগ্রহ দেখে ভাল লাগে। সম্ভাবনাময়। কীভাবে ভাল করতে পারি- সবসময় এমন প্রশ্ন করে। ভাল করছেও। আমি প্রত্যেকটা তথ্য দিতে চাই পরবর্তী প্রজন্মকে। যে কারণেই এখানে আছি, বলতে- কীভাবে সফল হতে হয়, কীভাবে শান্ত থাকতে হয়, শতভাগ দিতে হয়। আমি যখন খেলেছি, শতভাগই দিয়েছি। এখন আমার নতুন ভূমিকায় সেটা দিতে চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ফিরি। মাশরাফী-সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ, বলা হয় এই পঞ্চপাণ্ডবের জন্যই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ?
তাদের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। এটা ভাল যে, ভাল কয়েকজন ক্রিকেটার একইসঙ্গে খেলছে। আসলে হাবিবুল বাশারদের সময়ের কথাও বলতে হবে। তারা অত জিতত না, কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক ক্রিকেট খেলত। এভাবে একটা পথের সূচনা হয়েছে। সে পথ ধরে সাফল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বলেই আমার মনে হয়।
কতটা উপভোগ করছেন এখনকার ভূমিকা?
ক্রিকেট যখন খেলেছি। চেষ্টা করেছি শতভাগ উজাড় করে দিতে। ২০১২ সালে ক্রিকেট ছাড়ার পর যখন চার্চের ট্রাস্টি হলাম, সেখানেও শতভাগ দিয়েই কাজ করেছি। আবার জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সঙ্গে আছি, চাই জিম্বাবুয়ে ঠিক পথে থাকুক।