চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বাঁধ নির্মাণে এমন তুঘলকি কাণ্ড!

খেসারত দিচ্ছে ৬৩ কৃষক পরিবার

পটুয়াখালীতে একটি বাঁধ নির্মাণে তুঘলকি কাণ্ডের খেসারত দিতে হচ্ছে ৬৩টি কৃষক পরিবারকে। প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা জমি রেখে এসব পরিবারের জমি জবর-দখল করে অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে।

অনুমোদিত নকশা পাল্টে এতে বাঁধের দৈর্ঘ্য ও নির্মাণ ব্যয় কম হলেও যথাযথভাবে পূর্ণ কাজ বাস্তবায়ন দেখিয়ে ভূয়া বিল ও জমির ক্ষতিপূরণের কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে ভাগাভাগি করে লাভবান হয়েছেন সংশ্লিষ্ট অসাধু জমি মালিক, ঠিকাদার, কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীরা।

স্থানীয় প্রভাবশালী ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা মিথ্যা আশ্বাস ও নানা হয়রানী-নিপীড়নের মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ ওই পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ না দিয়ে, ত্রুটিপূর্ণ অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করায় কৃষি জমি, ভিটেমাটি, সহায়-সম্বল সর্বস্ব হারিয়ে তারা এখন নদী তীরে রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে কষ্টের জীবন-যাপন করছেন।

অভিযোগ উঠেছে, ক্ষতিগ্রস্থ ওই কৃষকদের জমির ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধে আদালতের নির্দেশনার পরও নানা কৌশলে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জানা গেছে, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় বন্যায় নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ কলাগাছিয়া গ্রামে প্রায় ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পুননির্মাণের জন্য ইসিআরআরপি-২০০৭ প্রকল্পের আওতায় অনুমোদিত কর্মপরিকল্পনার নকশা অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ২০১২ সালে বাঁধের নির্মাণ কাজ অবৈধভাবে বাস্তবায়নের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ এই কৃষকরা দিনের পর দিন হয়রানী ও প্রতারিত হয়ে আদালতে মামলা করে স্বপক্ষে রায় পেয়েও জমির ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আর টাকা দেবেনা আশঙ্কায় তাদের ধারণা।

এ কারণে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বিষয়টি দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে নানা কৌশলে দেরি করছেন। সব হারিয়ে কষ্টের দিন কাটানো ৬৩টি ভুক্তভোগী কৃষক পরিবার এ নিয়ে হতাশা অনিশ্চয়তার অবসান চান।

অধিগ্রহণের জমি না হারিয়েও যারা ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন সেই সব কৃষকও অসন্তুষ্ট।  তারা বলছেন, টাকা দিলেও শতকরা ৩০ শতাংশ হারে টাকা কেটে রাখা হয়েছে।  টাকা উত্তোলন ও বাঁধ নির্মাণে নানা অনিয়মের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম দুলাল চৌধুরী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, নির্ধারিত স্থান পরিবর্তন করায় বাঁধের দৈর্ঘ্য কমেছে। বেরিবাঁধের ভেতরের দিকে কিছু কিছু জমি আছে। সেসব পানি বোর্ডের অধিগ্রহণ করা।  স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে তদন্ত চলছে।

পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: হাসানুজ্জামান বলেন, এখনই বলা যাবে না ভুল ছিলো কিনা। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে কোনটা ভুল, কোনটা সঠিক। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে বাস্তবে কি হয়েছে সেটা জানার জন্য কমিটি কাজ করছে।

বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ নির্মাণে ভূল জরিপের কারণে সম্প্রতি পটুয়াখালীর ৩ প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কাজ বাস্তবায়নে অনিয়ম হলে এর খেসারতে দুর্ভোগে পড়েন প্রান্তিক কৃষক পরিবার ও ভূমি মালিকরা। ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন এমন তুঘলকী কাণ্ডের দায় কার, কবে হবে এর প্রতিকার।

অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য যে জমি হুকুম দখল করা হয় অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ চাষী ও ভূমি মালিকরা তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা পায় না। এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়মের কারণে দিনের পর দিন নানাভাবে হয়রানী হচ্ছেন তারা।

ক্ষতিগ্রস্থদের স্বার্থে এ অবস্থার অবসানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো আন্তরিক হওয়ার আহবান ভুক্তভোগীদের।