আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘চাঁদাবাজরা, মাদক ববসায়ীরা, লুটেরারা, সন্ত্রাসীরা, দুর্নীতিবাজরা সাবধান। এদের ঠাঁই নেই আওয়ামী লীগে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেছেন, ‘ক্ষমতার দাপট দেখাবেন না কেউ। বসন্তের কোকিলদের এনে দল ভারি করার চেষ্টা করবেন না। দুঃসময়ের কর্মী চাই, বসন্তের কোকিল চাই না।’
রাজধানীর ইঞ্জিনির্য়াস ইনস্টিটিউশনে ১১ নভেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দলে পরিমাণগত ব্যাপকতার কমতি নেই। সংখ্যায় আমাদের কর্মীর অভাব নেই। সমর্থকের অভাব নেই। আমাদের পার্টিতে দূষিত রক্ত আমরা আর চাই না। এই দূষিত রক্ত বের করে দিতে হবে। বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। অশুদ্ধকে শুদ্ধ করতে হবে।’
খুবই সুন্দর চিন্তা, শুভ চিন্তা ওবায়দুল কাদের সাহেবের। দেরিতে হলেও এই উপলব্ধি দলের জন্য মঙ্গলময় হবে।
গত ১০/১১ বছরে আওয়ামী লীগে অনেক আগাছা ঢুকে গেছে, এটা তার কথায় প্রমাণিত। তার ভাষায়- অনেক দূষিত রক্ত ঢুকে গেছে, এটাও আজ প্রমাণিত। কিন্তু এই আগাছা-পরগাছা ঢুকিয়ে কারা সুবিধা নিয়েছে, কত টাকার বিনিময়ে পরগাছা ঢুকিয়েছে তার হিসেব করা কি দরকার না? কারণ বিপদে পড়ে অনেক আগাছা পরগাছা বা তার ভাষায় দূষিত রক্ত ঢুকেছে, তারা কত টাকার বিনিময়ে একটা নির্ভয় আশ্রয়স্থল পেয়েছে সেটা জানাও প্রয়োজন বলে মনে করি।
দূষিত রক্ত বের করে দিতে হবে বললে তো বের করাই যায়। কিন্তু এই দূষিত রক্তের অবাধে প্রবেশ ঘটিয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের আওয়ামী লীগকে যারা কলুষিত করেছে তাদের বিচারের কি হবে? সে প্রশ্নও আসাটা স্বাভাবিক।
গত ১০/১১ বছরে সুযোগ সন্ধানি অনেক বিএনপি-জামায়াত-ফ্রিডম পাটির সদস্যরা নিজেকে বাঁচাতে এবং আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট করার মিশন নিয়ে যোগ দিয়েছে অনেক টাকা পয়সা লেনদেনের মাধ্যমে এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। অনেক প্রমানও রয়েছে।
আসছে ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। এই কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে ইতোমধ্যে জোর লবিং শুরু হয়ে গেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেছেন,‘নিজের ঘর থেকে শেখ হাসিনা শুদ্ধি অভিযানের সূচনা করেছেন। কিন্তু এই স্বেচ্ছাসেবক লীগে এমন অনেক চেহারা দেখা যাচ্ছে যারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন ফুটপাত দখল করে বছরের পর বছর ধরে দোকানপাট বসিয়ে চাঁদাবাজি করেছেন, কিন্তু শুদ্ধি অভিযানে তাদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরং তাদের কেউ কেউ মন্ত্রী এমপিদের পদধুলি নিয়ে আশীর্বাদ পেয়ে এসেছে অতীতে, এখনো পাচ্ছে। এসব নেতারা যদি আবারও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে জায়গা পায় তা হলে ওই শুদ্ধি অভিযান নিয়ে বিএনপির বক্তব্যই সঠিক প্রমাণিত হবে-‘ লোকদেখানো শুদ্ধি অভিযান’।
ঢাকা শহরের অনেক এলাকায় এখন ফুটপাত খালি দেখা যাচ্ছে, যেগুলো এলাকার সরকারি দলে অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি করেছে গত ১০/১১ বছর।
সাম্প্রতিককালে শুদ্ধি অভিযান এবং বিভিন্ন সংগঠনের নতুন কমিটি হবে বলে সেই চাঁদাবাজরা নিজেদের ধোয়া তুলশি পাতা সাজানোর জন্য এবং কমিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য সাময়িকভাবে দোকানপাট তুলে দিয়েছে। তবে কোথাও কোথাও আবার দোকানপাট বসানো শুরু হয়েছে।
অনেক কাউন্সিলরও এই ফুটপাতের দোকানপাট থেকে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা পেতেন, নিয়মিত চাঁদা পেতেন স্থানীয় থানা-পুলিশও।
আজকাল বিভিন্ন সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠনের সমাবেশে সেই চাঁদাবাজদের দেখা যায় আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের পেছনের সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়। যাতে করে শুদ্ধি অভিযান থেকে বাঁচা যায়। এবং পরবর্তী কমিটিতে কোনো মতে জায়গা পাওয়া যায়। নইলে অর্থ উপায়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবের কাছে তাই অনুরোধ, এখনো স্বেচ্ছাসেবকলীগে অনেক দূষিত রক্ত রয়ে গেছে, যারা আপনার চারপাশে ঘোরাঘুরি করে নিজেকে ভালো সাজানোর জন্য। তাদের ব্যাপারে ভালোভাবে খোঁজ খবর নিয়ে কমিটিতে তাদের রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ এদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকায় দখলবাজি আর চাঁদাবাজি করে।
যাদের জন্য আওয়ামী লীগের ইমেজ প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। ভয়ে মানুষ যাদের নাম বলতে পারে না। কারণ থানা পুলিশ এদেরকে সমীহ করে চলে। কিন্তু পক্ষান্তরে সাধারণ মানুষ গোপনে আলোচনায় আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কথাই বলে বেড়ায় এসব দূষিত রক্তের জন্য। আপনি অনেক দক্ষ মানুষ, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারি। তাই আপনি পারেন এদের ব্যাপারে কঠোর হতে। অন্যদের হয়তো কোথাও না কোথাও দুর্বলতা ক্ষানিকটা আছে। দূষিত রক্ত বের করে একটি সুস্থ ও সুন্দর কমিটি উপহার দেবেন জনগণ সেটাই প্রত্যাশা করে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)