‘প্যারাডাইজ’-এর দরজা কি আর খুলবে না? ‘বসুশ্রী’-এর সামনে দর্শকের ভিড় আর দেখা যাবে না? কলকাতার এই দুটি সহ আরো বেশকিছু এক পর্দার (সিঙ্গেল স্ক্রিন) সিনেমা হলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। যদিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন হলের মালিকরা। কিন্তু একথা সবার জানা, এক পর্দার সিনেমা হলগুলো বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে দীর্ঘ লকডাউনের কারণে।
‘প্যারাডাইজ’-এর মুখপাত্র সুনিত সিং বলেন, ‘সবার আগে বন্ধ হয়েছে, খুলবেও সবার পরে। কারণ জনসমাগমের জায়গা এটি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও কঠিন এখানে।’
মাল্টিপ্লেক্স আসার আগে এই এক পর্দার হলগুলোতেই দেখানো হতো সিনেমা। সেকথা ভুলে যাননি সিনে-তারকারাও। এক পর্দার এই হলগুলোই তাদের তারকা বানিয়েছে। তাই হলগুলো বাঁচাতে এক হওয়া প্রসঙ্গে কথা বলেছেন কলকাতার তারকারা।
জিৎ বলেন, ‘মহামারীর জন্য সব সেক্টরেই ক্ষতি হয়েছে। তবুও প্রদর্শক ও হল মালিকদের বিশ্বাস রাখতে হবে। ইন্ডাস্ট্রির এক হয়ে এই হলগুলোর পাশে দাঁড়ানো উচিত। ট্যাক্স মাফ করে দেয়া উচিত অন্তত তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য। হল মালিকদের নতুন নতুন পদ্ধতি নিয়ে ভাবা উচিত, কীভাবে সিনেমাগুলোকে আরও আকর্ষণীয়ভাবে দেখানো যায়। ইন্ডাস্ট্রির উন্নতির জন্য একটা দিকনির্দেশনা তৈরি করছি। এই হলগুলোও আছে পরিকল্পনায়।’
দেব বলেন, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রির মতো সব ইন্ডাস্ট্রিই খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এই মহামারীতে। এটা টিকে থাকার বছর, লাভ-ক্ষতির নয়। এই কঠিন সময়টায় শুধু ভেসে থাকতে হবে। ভ্যাকসিন চলে আসলে আবার আগের অবস্থায় ফেরা যাবে। এক পর্দার হলগুলো কঠিন সময় কাটাচ্ছে অনেকদিন ধরেই। মহামারীতে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। এক পর্দার হলগুলো টিকিয়ে রাখতে হলে ভালো কন্টেন্ট প্রয়োজন আমাদের, যেন দর্শক আবার হলে ফিরে।’
ঋতুপর্ণা বলেন, ‘প্রথমে মানুষের মহামারীর আতঙ্ক কাটাতে হবে। এরপর, এই হলগুলোকে বাঁচাতে স্টেকহোল্ডারদের এগিয়ে আসতে হবে। এই পর্দার হলগুলো সিনেমার মেরুদণ্ড ছিল এক সময়ে। এখনও, আমার গ্রামের দর্শকরা এই হলেই ছবি দেখেন। লকডাউনে টিকে থাকার জন্য মাল্টিপ্লেক্সের তুলনায় এক পর্দার হলগুলোর আর্থিকভাবে দুর্বল। হল যখন খুলবে, তখন দর্শকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এই হলগুলোর। তাদের প্রচারণার জন্য সবসময়েই পাশে ছিলাম। আমার সিনেমার প্রিমিয়ারের জন্য তাদের উৎসাহিত করেছি। কিন্তু একজনের প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব নয়। সবাই মিলে পাশে দাড়াতে হবে।’
চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, ‘এক পর্দার হলগুলো মহামারীর আগে থেকেই ভুগছে। কিছু মানুষ এই হলগুলোর ছবির সমালোচনাও করে। অনেক ভালো সিনেমাও এসব হলে দর্শক ফেরাতে পারেনি। আমার মতে সিনেমা হল আবার খুললে এসব হলে পুরনো জনপ্রিয় সিনেমাগুলো আবার মুক্তি দেয়া উচিত। এতে দর্শক ফিরতে পারে। আমার সিনেমা বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না এক পর্দার সিনেমা হলে ইতিহাস গড়েছিল।’
শতাব্দী রায় বলেন, ‘এক পর্দার হলগুলো এমনেতেই খারাপ অবস্থায় আছে। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার মতো গত পাঁচ মাসে কোনো ব্যবসাই করতে পারেনি মহামারীর কারণে। মানুষের এখন অনেক বিকল্প ব্যবস্থা আছে। থিয়েটারে যাওয়ার আগে মানুষ অনেক রকম চিন্তা করবে।’ -টাইমস অব ইন্ডিয়া