দেশে ঘোষণা দিয়ে মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রায় ২৭ জন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে বলে জানা গেছে গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী।
মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে সম্প্রতি র্যাবের প্রধান ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এমনটাই। তাই বিষয়টিকে স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে। দুই হাজারেরও বেশি মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আমাদের প্রধানমন্ত্রীও সম্প্রতি র্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে র্যাবকে সক্রিয় হতে বলেছেন।
মাদক ব্যবসায়ীরা সমাজের শত্রু। এরা আমাদের আগামী প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সব পরিকল্পনা নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এই মাদক ব্যবসায়ীরা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এরা কারা? এরা কাদের বলে বলীয়ান? কাদের ইশারা ইঙ্গিতে দেশে মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে? সোজা এবং সরল ভাষায় বলা যায়- কাদের জমা-খরচ দিয়ে দেশব্যাপী সিন্ডিকেট করে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করছে দাপটের সঙ্গে?
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মনে করে, দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ৬৬ লাখের বেশি। এদের মধ্যে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মাদকসেবীর সংখ্যা ৬৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। এরা বছরে ৪০ কোটির বেশি ইয়াবা সেবন করছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। আর এই টাকার অর্ধেক চলে যায় মিয়ানমারে।
কথা হচ্ছে মিয়ানমার থেকে কোন পথ দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা ঢুকছে? সেখানে কাদের সাম্রাজ্য? দেশের পত্রপত্রিকায় বহুবার খবর ছাপা হয়েছে একজন প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে টেকনাফ দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে দেশে। তাঁর টিকিটি ধরার ক্ষমতা কারও নেই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কারা মারা পড়ছে বন্দুকযুদ্ধে? তাদের পরিচয় কি? তারা আসলে কোন পর্যায়ের ব্যবসায়ী? তাদের ভেতরে নাটের গুরু টাইপের কেউ কি আছেন? নাকি পাতিদের বুকে চালানো হচ্ছে গুলি। যারা শুধু টাকার বিনিময়ে মাদক বহন করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেয়।
পুলিশের একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেছেন, মাদক ব্যবসা যারা করে, তারা তো ভয়ংকর লোক। সে ক্ষেত্রে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে গোলাগুলিতে কেউ মারা গেলে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে ধরলাম, মেরে দিলাম, এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। কারা এর মূল খুঁজে বের করতে হবে।
খুবই যুক্তিসংগত কথা বলেছেন তিনি। আমরা বহুবার পত্র পত্রিকায় পড়েছি মাদক ব্যবসার সঙ্গে পুলিশের কোনো কোনো সদস্য জড়িত থাকে বলেই বিনা বাধায় ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে। যাদেরকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ না করে মেরে ফেলা হচ্ছে এর ফলে কি দেশ উপকৃত হচ্ছে? আসল নাটের গুরুরা তো আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। এই মেরে ফেলার পেছনেও তো কারণ থাকতে পারে। আর সেটা হচ্ছে অনেক রুই-কাতলাকে বাঁচানোর চেষ্টা।
দেশ মাদকমুক্ত করার যে অঙ্গিকার হাতে নিয়েছে আমাদের র্যাব, তা খুবই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতির প্রতি দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের সমর্থন রয়েছে। তবে মাদকের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সেই নাটের গুরুরা যেন পার না পায়, সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ থাকল। আগামী প্রজন্ম থাকুক মাদকমুক্ত। থাকল সেই প্রত্যাশা।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)