মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল এবং একাত্তরের আল-বদর কমান্ডার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মুজাহিদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে আনা বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণসহ সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। আর শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবার বলছে, মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে বুদ্ধিজীবী হত্যার অনেকটা হলেও বিচার পাওয়া গেলো।
তবে মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরকে কিছুটা নয়, পুরো বিচারই বলেছেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের অমর সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ।
চ্যানেল আই অনলাইনকে শাওন বলেন, ‘মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে আমরা যা পেলাম এর চেয়ে আর কি চাওয়ার আছে! তারা তো নিজেদের দোষ স্বীকার করেছে। যখন কেউ নিজের দোষ স্বীকার করে এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি হয় তখন আর কি চাওয়ার থাকে!’
শহীদ বুদ্ধিজীবী ডক্টর আলিম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত চৌধুরী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘এই রায়ে আমরা স্বস্তি পেয়েছি, শাস্তি পেয়েছি। কিন্তু মনে ব্যথাও আছে। কারণ এই ছোট একটি সাংবিধানিক অধিকার পেতে আমাদেরকে ৪৪ বছর অপেক্ষা করতে হলো।’
তিনি বলেন, ‘মুজাহিদের অপরাধ শুধু তৎকালীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছিলো না। মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সঙ্গেও অপরাধ করেছেন তিনি। কারণ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথও বন্ধ করতে চেয়েছিলো তারা।’
শুধু ব্যক্তির বিচার করলেই হবে না, সেসঙ্গে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে দলটির নেতা কর্মীরা যাতে অন্য কোনো নামে এই দেশে রাজনীতি করতে না পারেন সে ব্যবস্থা করার কথাও বলেন নুজহাত চৌধুরী।
শুধু বুদ্ধিজীবী নয়, সকল শহীদের হত্যার বিচার সম্পন্নের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু বুদ্ধিজীবী নয়, সকল শহীদ পরিবারই বিচার পাওয়ার দাবিদার। এই বিচার প্রক্রিয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া, দেশে শেষ যুদ্ধাপরাধী থাকা পর্যন্ত যেনো এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে।’
সাকা-মুজাহিদের বিচারকে মাইলফলক ও ভবিষ্যতের জন্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন দুই শহীদ কন্যা। এই বিচারের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ালো বলেও মন্তব্য করেন তারা।
বুদ্ধিজীবী হত্যার মাস্টারমাইন্ড মুজাহিদ এবং যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরসহ দেশবাসীকে তারা অভিনন্দনও জানান।
তবে শহীদ সন্তানরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, বুদ্ধিজীবীদের আরো দুই ঘাতক চৌধুরী মঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ হলেও তারা বিদেশে পালিয়ে আছেন। চৌধুরী মঈনুদ্দীন আছেন লন্ডনে, আর আশরাফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে।